একটি বিমা কোম্পানির কর্মকর্তার সঙ্গে হাসপাতালের এক ঝাড়ুদারের বিয়ে হয়। অসম এই সম্পর্ক বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। একপর্যায়ে বিমা কর্মকর্তা স্বামী (আসিফ হাসান, ছদ্মনাম) বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন। এমন কী কাবিননামা সঠিক নয় বলে নিকাহ রেজিস্ট্রারকে দিয়ে একটি মিথ্যা প্রত্যয়নপত্র আনার ব্যবস্থা করেন তিনি। বিয়ে অস্বীকার করায় তাঁর স্ত্রী (আফসানা, ছদ্মনাম) আদালতে মামলা ঠুকে দেন।স্বামীর বিরুদ্ধে তিনি যৌতুকের দাবিও তোলেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন। আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সময়ে উভয় পক্ষের কৌঁসুলির শুনানির বক্তব্য এবং এ-সংক্রান্ত আদালতের আদেশের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:কাবিননামা আপাতত সঠিক বলে মনে হয়েছে। এ সংক্রান্ত উপস্থিত নিকাহ রেজিস্ট্রারকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, প্রদত্ত তথ্যে কোনো ভুল নেই। রেজিস্ট্রার আরও বলেন, কাবিননামার ব্যাপারে আপত্তি দেওয়ার এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে তিনি অনুরূপ প্রত্যয়নপত্র দেন। এ ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব এবং এখতিয়ার-বহির্ভূত প্রত্যয়নপত্র দেওয়া ঠিক হয়নি। এটা জানানোর পর নিকাহ রেজিস্ট্রার লিখিত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনা হলো। আসামিপক্ষের কৌঁসুলি বলেন, ‘বাদীর সঙ্গে আমার মক্কেলের মর্যাদার বিশাল ব্যবধান। তাঁকে বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না। আসামি একটি নামকরা বিমা কোম্পানির উপব্যবস্থাপক।’ বাদীর কৌঁসুলি বলেন, ‘বাদী যে আসামির স্ত্রী এতে কোনো সন্দেহ নেই। গরিব এবং সামাজিক মর্যাদা নেই বলে এখন তাঁকে (আফসানা) অস্বীকার করা হচ্ছে।’আরজি, নথিতে রাখা সব কাগজপত্র, বালাম, নিকাহ রেজিস্ট্রারের প্রত্যয়নপত্র ও লিখিত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হলো। কাবিননামা জাল কিংবা অন্য কোনোভাবে ত্রুটিপূর্ণ সেই মর্মে আসামিপক্ষ এখতিয়ারসম্পন্ন কোনো আদালতে প্রতিকার চাননি বলে মনে হয়েছে। তাঁর পক্ষে নিযুক্ত কৌঁসুলিও সেই মর্মে কোনো দাবি উপস্থাপন করেননি। আপাতত কাবিননামা ও বিয়ের ‘যথার্থতা’ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। আরজির বিবরণ, অব্যাহতির আবেদন এবং কৌঁসুলিদের বক্তব্য মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায়, একটি বিমা কোম্পানির উপব্যবস্থাপকের সঙ্গে হাসপাতালের এক ঝাড়ুদারের যে বিয়ে হয়েছে, বিষয়টি অবিশ্বাস্য হলেও এ রকম ঘটনা সমাজে বিরল নয়। মনোদৈহিক আকর্ষণের কারণে অনেক অসম সম্পর্ক সৃষ্টি হয়—কোনোটা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। আবার কোনোটা গড়ায় না। তবে এটা ঠিক যে এ রকম অসম সম্পর্ক হতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, আসামির কৌঁসুলি সামাজিক অবস্থানের যে বিষয়টির অবতারণা করেছেন, তা অবান্তর এবং অযৌক্তিক মনে হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় আসামির বিরুদ্ধে গত বছরের ২০ ও ২৪ এপ্রিল যৌতুক দাবির সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বিদ্যমান। কাজেই অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলো।