অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব

বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবে পরিচয়, এখন তাঁরা জীবনের অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের সদস্য

‘আচ্ছা, তোমার মা কি আমার সঙ্গে তোমার বিয়ে দেবেন?’

চিন্তা করা যায়! ইউনিভার্সিটির মোস্ট সিনিয়র ভাই যখন সদ্য সেকেন্ড সেমিস্টারে ওঠা এক জুনিয়রকে রাত তিনটায় মেসেঞ্জারে এই প্রশ্ন করে, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই এক হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক লাগার কথা। তবে আমি আশাহত হয়েছিলাম। স্বপ্ন ছিল, কোনো এক রাজকুমার ঘোড়া থেকে না হলেও অন্তত একটা রিকশা থেকে নেমে হাঁটু গেড়ে কতগুলো গোলাপ বাড়িয়ে বলবে, হে নারী, তুমি কি হবে আমার সাত জনমের সাথি? তা না, এই ছেলে পুরা বাংলা সিনেমার স্টাইলে জীবনে নিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিল।

যার কথা বলছি, সেই মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ঘটনার ২০ কি ২৫ দিন আগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র এবং পপুলার বড় ভাই হলেও তাকে আমি কখনোই কোথাও দেখিনি। মাত্র এক সেমিস্টার পার করে অধিক সাহসিকতা দেখিয়ে ইউনিভার্সিটির অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের সঙ্গে ভারতে রওনা দিই। রওনা দেওয়ার আগে শুনেছিলাম, আমাদের সঙ্গে একজন সিনিয়র ভাইও যাচ্ছেন। তবে কোনো এক অদ্ভুত কারণে তার চেহারা দেখার সৌভাগ্য হয় ভারতের মাটিতে পা রেখে। একসঙ্গে যাচ্ছি অথচ দীর্ঘ যাত্রায় তাকে আমি খেয়ালই করতে পারিনি। প্রায় ১৩ দিনের ট্যুরের কোনো সময়ই মনে হয়নি এই মানুষটার সঙ্গে আমার এমন কিছু ঘটতে পারে। তবে একটা ঘটনা ঘটত, প্রতিদিন রাতে যখন গানের আসর বসত, তখন আমি যত কোনাতে গিয়েই বসতাম না কেন, এই ছেলেটা সবাইকে টপকে আমার পাশে ঠেলেঠুলে একটু খানি জায়গা করে বসত।

অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের অন্য সদস্যদের মতো এই মানুষও অত্যন্ত পাহাড়প্রেমী। পাহাড়ে যাওয়া হবে, এমন সুযোগ এলেই তার নাওয়া-খাওয়া সব বন্ধ হয়ে যায়। প্রচণ্ড সাহসী আর শক্ত মনের মানুষ। এমন মানুষের সামনে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দেওয়া একটা মেয়ের মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হওয়ার কথা নয়। এরপরও ট্র্যাকিং করতে করতে প্রচুর কথা বলে ফেললাম তার সঙ্গে। যার ফল দেশে আসার পর থেকেই দিনরাত আলাপ হতে থাকল। সেই সুবাদেই একবার মেসেজে আক্ষেপ করে বলেছিলাম, ‘আজকে আম্মুকে পেয়ারা আনতে বলছিলাম, কিন্তু আনল না।’

ব্যস, বাবাজি যেন এমন সুযোগের অপেক্ষাই করছিল। বলে বসল, ঠিক আছে, আমি কালকে তোমার জন্য পেয়ারা নিয়ে আসব। পরদিন ৯ অক্টোবর, মোহাম্মদপুর বাজার থেকে এক কেজি পেয়ারা কিনে হাজির।

আরও একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা হলেও এটাই সত্য যে আমার ‘হবে হবে’ করা প্রেমিকের কাছ থেকে প্রথম উপহার হিসেবে এক কেজি পেয়ারা পেয়েছিলাম।

তবে পরে এই ব্যক্তি কঠিন জাল বিছাল। প্রায় প্রতিদিনই যেভাবেই হোক একটা করে গোলাপ ফুল নিয়ে আসত। এত ফুল দিত যে আমার ফ্রেন্ডরা সবাই তাঁকে ফুলওয়ালা বলেই ডাকা শুরু করল। শুধু তা–ই নয়, এক বছরের মাথায় আমার মাকে অতি নিষ্পাপ শিশু সেজে এমনভাবে পটিয়ে ফেলল।

এর ঠিক এক বছর পর সেই ৯ অক্টোবর আমরা বিয়ে করলাম। আমার অতি সাধারণ সব স্বপ্নের মধ্যে সে অসাধারণ বাস্তব হয়ে আবির্ভাব হলো। বাসররাতে প্রথম উপহার দিয়েছিল ট্রাভেল ব্যাগ এবং ট্র্যাকিং সু। বিয়ের তিন মাসের মাথায় আমরা যোগী পাহাড় আরোহণে যাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবে পরিচয়, এখন আমরা জীবনের অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের সদস্য।