
নাম চায়না বট। আদতে চিরচেনা সে বিশাল আকৃতির বটবৃক্ষ নয় এটি। উচ্চতায় বড়জোর দেড় ফুট। রাখা হয়েছে একটি পাত্রে। সেখানেই বাড়ছে ডালপালা। গাছের শরীরে ঝুলছে লতা।
চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠের বৃক্ষমেলায় এই বনসাইটি হয়ে উঠেছে অন্যতম আকর্ষণ। মেলায় থাকা সব গাছ ও চারার মধ্যে এটিরই দাম সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন নার্সারির মালিক ও কর্মকর্তারা। এটির দাম হাঁকা হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। মেলার বাহাদুর নার্সারির স্টলে বিক্রি হচ্ছে এই চায়না বট।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ১৫ দিনব্যাপী এই মেলা চলবে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। গত ৩১ জুলাই মেলার উদ্বোধন করা হয়। শুরুর দিকে না জমলেও এখন দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ছে। মেলায় স্থান পেয়েছে ২৫টি স্টল।
গত শুক্রবার সকালে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, ছুটির দিনে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা এসেছেন। তাঁরা স্টলে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন প্রজাতির চারা ও গাছ দেখছেন। পছন্দ হলেই এক বা একাধিক চারা কিনে নিচ্ছেন। নানা প্রজাতির চারা ও গাছে পুরো লালদীঘি ময়দান সবুজ হয়ে উঠেছে। স্টলের সামনে রাখা কিছু গাছে ফলও ধরেছে।
দোকানিরা জানান, প্রতিবারের মতো এবারও দর্শনার্থীদের মূল আগ্রহ ফলগাছের চারার প্রতি। মূলত আম, কমলা, পেয়ারা, পেঁপে ও লেবুর গাছ বিক্রি হচ্ছে বেশি। এ ছাড়া পাতাবাহার ও গোলাপের চারা কিনছেন অনেকে। তবে প্রচারণা ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে হতাশ মেলায় অংশ নেওয়া নার্সারির মালিক ও কর্মকর্তারা।

কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যা এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী ওসমান গণি বলেন, ‘আমি বাড়িতে শখের বাগান করি। ফুলগাছ আগেই কিনেছিলাম। আজ (শুক্রবার) আম, লিচু, পেয়ারার ২০টি চারা কিনেছি।’ আবুল হাশেম নামের অপর এক ব্যক্তি বলেন, ‘গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য লিচু ও লেবুর চারা কিনেছি।’
বাহাদুর নার্সারির কর্মকর্তা মো. মিছবাহ উদ্দিন বলেন, লোকজন ফুল ও ফলের চারা বেশি কিনছেন। অবশ্য আকর্ষণ বেশি চায়না বটের প্রতি। কয়েকজন কিনতে চেয়েছেন। কিন্তু দরদাম এক না হওয়ায় বিক্রি করা হয়নি।
পুষ্প নার্সারির মালিক মোরশেদ আলম জানান, তাঁর নার্সারিতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৪০০ রকম চারা রয়েছে। এর মধ্যে আমেরই আছে অন্তত ১০ প্রজাতির। ব্র্যাক নার্সারির বিক্রয় কর্মকর্তা নূর নবী বলেন, তাঁদের স্টলে আমের চারাই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
নার্সারির মালিক ও কর্মকর্তারা বলেন, গতবার নগরের কাজীর দেউরির আউটার স্টেডিয়ামে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে অনেক মানুষ হতো এবং বিক্রি ছিল ভালো। এবার হচ্ছে লালদীঘি ময়দানে। কিন্তু নতুন জায়গায় যেভাবে প্রচারণা চালানো দরকার ছিল, তা হয়নি। ফলে দর্শনার্থী কম। তাই বিক্রিও হচ্ছে মোটামুটি। অবশ্য ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার অনেক মানুষ এসেছেন।
স্টল মালিকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জগলুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাজেট ও সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রচারণা চালিয়েছি। মেলা প্রাঙ্গণকে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো হয়েছে। মেলায় লোকজনও আসছেন প্রচুর।’