আবীরের ডাকাতিয়া বাঁশি
৩০ টাকায় জীবনের প্রথম বাঁশিটি কিনেছিলেন মুস্তাকীম আবীর। গোলাপি রঙের সেই বাঁশি বাজতে চায়নি বহুদিন। ফুঁ দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে একসময় হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে তিনি বাঁশিবাদক মর্তুজা কবিরের খোঁজ পান। তাঁর কাছেই শুরু হয় তালিম নেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তালিমে একটু বিরতি পড়েছিল। পরে আবার সেতারবাদক নিশিত দের কাছে শেখা শুরু করেন। এখন তাঁর কাছেই তালিম নেওয়া চলছে।
গানবাজনার চর্চা করতে গেলে পড়াশোনার ক্ষতি হয়, অনেকের এই ধারণার সঙ্গে একেবারেই একমত নন আবীর। বরং তিনি মনে করেন, পড়াশোনার পাশাপাশি এই চর্চা জীবনকে আরও অর্থবহ করে। তিনি বলেন, ‘গানবাজনার চর্চাও জীবনে একটা শৃঙ্খলা এনে দেয়। সময় ব্যবস্থাপনা, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, এসব তো আমি গানের চর্চা করতে গিয়েই উপলব্ধি করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে নিয়মিতই পাওয়া যায় আবীরকে। ক্যাম্পাসের ‘সোডিয়াম বাতির গান’, ‘টিএসসির গান’, ‘বসন্ত উৎসব’, ‘শতকণ্ঠে বঙ্গবন্ধু’, এমন বহু আয়োজনে অংশ নিয়েছেন। একক কিংবা দলীয় পরিবেশনায় সেতার বা বাঁশির সুরে দর্শক-শ্রোতাকে মুগ্ধ করেছেন তিনি।
আবীরের অর্জন কিংবা অংশগ্রহণ কিন্তু শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়। ২০১৬ ও ২০১৭—পরপর দুই বছর আন্তবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় যন্ত্রসংগীত (বাঁশি) বিভাগে সারা দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছেন তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনার এই শিক্ষার্থী। ভারতের হরিয়ানায় ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল ফেস্টে ইনস্ট্রুমেন্টাল মিউজিক ও আনপ্লাগড মিউজিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এ ছাড়াও বুয়েট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত কনসার্ট, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আন্তবিশ্ববিদ্যালয় আনপ্লাগড, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কনসার্ট, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এবং মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। কয়েকটি ব্যান্ড ও মিউজিক্যাল প্রকল্পে কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে ঋণাত্মক ও খন্ড নামের ব্যান্ডে বংশীবাদক হিসেবে যুক্ত আছেন।
ক্যাম্পাসের একাধিক ক্লাবে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাতফেরি সাংস্কৃতিক সংসদে প্রশিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের বাঁশি শেখান তিনি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে আবীর বলেন, ‘এখন বিভিন্ন গান, বিজ্ঞাপন, নাটক, চলচ্চিত্রের আবহ সংগীতসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছি। তবে আমার মূল লক্ষ্য ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক। শাস্ত্রীয় সুরের চর্চার জন্য প্রচুর জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন, যা অর্জনের জন্য এখন পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমার কাছে সংগীত মানে স্রেফ বিনোদন নয়, এটি একটি শাস্ত্র, একটি জ্ঞান। এই জ্ঞানের চর্চা করাটাই আমার মূল লক্ষ্য।’