আমার পাঠাগারের গল্প

গ্রামীণফোন ও প্রথম আলোর পক্ষ থেকে পাঠকের কাছে ভালো কাজের সত্য গল্প আহ্বান করা হয়েছিল। পাঠকের পাঠানো নির্বাচিত কিছু অভিজ্ঞতা প্রকাশিত হচ্ছে ‘ছুটির দিনে’র অনলাইন সংস্করণে।

শেখ মুহাম্মদ আতিফ আসাদ

আমার নাম শেখ মুহাম্মদ আতিফ আসাদ। বাড়ি জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নে। আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। তাই আমার পড়ালেখার খরচ জোগানোর মতো সামর্থ্য নেই আমার পরিবারের। তবে আমার পড়াশোনা করতে খুব ভালো লাগে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রি, রডমিস্ত্রির কাজ, খাট ভার্নিশ, ধান কাটার কাজ করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালাই।

ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনা করতে না পারার বিষয়টি আমাকে পীড়া দিত। তারপর আমার মতো গ্রামের অন্য তরুণদের কথাও আমার মাথায় আসে। তাদেরও তো জ্ঞান অর্জন করা দরকার। জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার ভাবনা থেকেই আমার পাঠাগার করার ভাবনা শুরু হয়। তাই আমার বড় ভাইকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করে দিলাম পাঠাগারের কাজ।

এরপর আমাদের ঘরের বারান্দাটি প্রসারিত করে পাঠাগারের জন্য ছোট একটি ঘর তৈরি করলাম। এটা বছর তিনেক আগের ঘটনা। তখন মাত্র ২০টা বই দিয়ে পাঠাগারটি শুরু করেছিলাম। তবে এখন আমাদের পাঠাগারে রয়েছে হাজারখানেক বই।

পাঠকের সুবিধার কথা চিন্তা করে সাইকেলে করে সবাইকে বাড়ি বাড়ি গিয়েও বই পৌঁছে দিই। আবার সপ্তাহ শেষে বই ফেরত নিয়ে আসি। কাজটি আমি সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে করি।

এ ছাড়া আমি দেশের প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশনে পাঠাগার চালু করার স্বপ্ন দেখি। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের জামালপুর জেলার তারাকান্দি রেলওয়ে স্টেশনে চালু করেছি ‘ইস্টিশন পাঠাগার’। রেলওয়ে স্টেশনে এসে যাত্রীরা বই পড়ার মাধ্যমে তাদের সময়কে কাজে লাগাতে পারবে। খুব শিগগির আমরা ‘ইস্টিশন পাঠাগার’-এর দ্বিতীয় শাখা চালু করব।

আমার স্বপ্ন, দেশের প্রতিটি গ্রামে একটি করে পাঠাগার হবে। গ্রামের সব মানুষ সেখানে বই পড়বে। আমাদের মধ্যে বই দেওয়া-নেওয়ার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠবে, এটাই আমি চাই।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, মিলন স্মৃতি পাঠাগার, সরিষাবাড়ী, জামালপুর