আমার রুপা আপু

.
.

রুপা আপু আর আমার বয়সের ব্যবধান দুই বছর। কিন্তু আমরা বন্ধুর মতো ছিলাম। আবার মারপিট, ঝগড়াঝাঁটিও চলত দুজনের মধ্যে। তবে আপু আমাকে খুব আদর করত। কোথাও ঘুরতে গেলে, এমনকি তার বান্ধবীদের বাসায় গেলেও আমাকে নিয়ে যেত। আপু এত সুন্দরী ছিল, সবাই তাকে গোলাপি বলে ডাকত। আব্বা বেসরকারি চাকরি করতেন। আমাদের পরিবারে আব্বা, আম্মা আর আমরা দুই ভাইবোন মিলে ভালোই চলছিল। হঠাৎ আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। ছেলে ব্যাংকার। কিন্তু আপু রাজি নয়। সে চেয়েছিল আরও পড়াশোনা করতে। গ্রামের মানুষের নানা কথা আর ভালো পাত্র পাওয়ায় আব্বা তাঁর মত থেকে পিছপা হলেন না। আব্বার সম্মানের দিকে তাকিয়ে আপু বিয়েতে রাজি হলো। বিয়ের দিন যতই ঘনিয়ে আসছিল, ততই খারাপ লাগছিল। আপুর বিয়ে হলে কীভাবে থাকব, ভাবতেই চোখে জল চলে আসে।
একদিন সন্ধ্যায় রুপা আপু আম্মাকে ধরে খুব কান্নাকাটি করে। আম্মা তাকে বোঝান। বিয়ের দুই দিন আগে আপু আর শায়লা খালা মিলে বের হয়েছে আপুর বান্ধবীদের দাওয়াত দেওয়ার জন্য। ফিরতে ফিরতে প্রায় বিকেল হয়ে যায়। তারা দুজন রিকশায় করে ফিরছিল। হঠাৎ পেছন দিক থেকে একটা টেম্পো ধাক্কা দেয়। রুপা আপু ও শায়লা খালা দুজনই রিকশা থেকে পড়ে যায়। শায়লা খালা একটু ব্যথা পান। উঠে দাঁড়ান। কিন্তু রুপা আপু রাস্তায় পড়ে থাকে। দ্রুত তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। খবর পেয়ে আমরা সবাই হাসপাতালে যাই। আপুর পাশে বসে তাকে অনেকবার ডাকলাম। সে আমাদের কারও ডাকে একবারও সাড়া দেয়নি। একবারও চোখ মেলেনি। শুধু চোখের কোনা দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি বের হয়ে এল। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রুপা আপু আমাদের ছেড়ে চলে যায়।
রুপা আপুর বিয়ের শাড়ি, গয়না এখনো ঘরে সাজিয়ে রাখা আছে। আম্মা এখনো মাঝেমধ্যে এসবের দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন।
তারেকুর রহমান
সায়ন বিভাগ, ঢাকা কলেজ