
সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর বাড়ির কাছে ছিল দিলখুশা রেস্তোরাঁ। সেখানকার আলুর চপকে শিবরাম মজা করে বলতেন, ‘চপ নয়, যেন চপেটাঘাত!’ এক কামড় মুখে দিয়েই হয়তো চপেটাঘাত খাওয়ার মতো চমকে উঠতে হতো, তাই
এই নামকরণ।
বাঙালি আদিকাল থেকেই খাদ্যরসিক। ভালো খাবারের খবর মুখে মুখে রটে যায়। সে সময় শিবরাম হয়তো বন্ধুদের কাছে ‘চপেটাঘাত’-এর গল্প করতেন। একালের তরুণদের পদ্ধতিটা একটু ভিন্ন। কেউ হয়তো দিলখুশা রেস্তোরাঁয় বসে একটা সেলফি তুলে ফেসবুকে চেক–ইন দেবেন। সঙ্গে যোগ হবে ‘#চপেটাঘাত’, ব্যস, খবর রটে যাবে মার্ক জাকারবার্গের নীল দুনিয়ায়! আজকাল রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে তরুণদের মনোযোগ শুধু খাবারেই ডুবে থাকে না। পিৎজার সঙ্গে ‘পোজ’ দিয়ে ছবি তুলতে হয়। পরোটার পুরোটা খাওয়ার আগেই আপলোড হয়ে যায় একখানা ছবি। কেউ কেউ সঙ্গে যোগ করেন খাবারের স্বাদ আর দামের বৃত্তান্ত।
নিজের প্রোফাইলে নতুন নতুন খাবারের খবর দেন অনেকে। আবার মজার সব খাবার নিয়ে লেখালেখির জন্য ফেসবুকে আছে বেশ কয়েকটা পেজ ও গ্রুপ। ফুড ব্লগারস বিডি, ফুডোহোলিক, ফুড লাভারস, ফুড ব্যাংক, ঢাকা ফুডিজ...এমন বহু ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে একত্র হয়েছেন ভোজনরসিকেরা। নতুন নতুন খাবারের খোঁজখবর নিয়মিতই দেন গ্রুপের সদস্যরা। কারও কারও থাকে নানা জিজ্ঞাসাও।
‘ধানমন্ডিতে ভালো চা পাওয়া যায় কোথায়?’
‘খাসির মাংসের তেহারি কোথায় পাব বলতে পারেন?’
‘উত্তরায় ভালো বার্গারের দোকান খুঁজছি।’
একজন লিখতে না লিখতেই অন্যরা মন্তব্য করতে শুরু করেন। এভাবেই বেশ ভালো সখ্য হয়ে গেছে ভোজনরসিকদের মধ্যে।
বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ঢুঁ মেরে বিভিন্ন খাবারের বৃত্তান্ত প্রায়ই ফেসবুকে তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তাজিন আফরোজ। বলছিলেন, ‘আগে হয়তো শুধু চেক–ইন দিতাম, আর খাবারের ছবি পোস্ট করতাম। খাবারের ছবি দিলেই বন্ধুরা নিচে মন্তব্য করতে থাকে, ‘কোথায় দোকানটা? খাবার কেমন? দাম কত?’ তাই এখন খাবারের সঙ্গে দুই-চার কথায় এই তথ্যগুলোও জানিয়ে দিই। কোনো বন্ধু হয়তো আমার লেখা পড়ে কোনো রেস্তোরাঁয় খেতে যায়। পরে আমাকে জানায়। বলে, ‘ধন্যবাদ দোস্ত। তুই না লিখলে এই খাবারটার খবর জানাই হতো না। তখন খুব মজা লাগে।’
খাবার নিয়ে লেখালেখি করে ফেসবুকে রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে গেছেন আরেক ভোজনরসিক মো. সারোয়ার জাহান। নিজেকে তিনি বলেন ‘ফুডহান্টার’। নিজের প্রোফাইলে নিয়মিত আপলোড করেন মজার মজার সব খাবারের খবর। বলছিলেন, ‘আমি শুধু ছবি আর খাবারের দাম তুলে দিই, তা না। রেস্তোরাঁর কর্মীদের সঙ্গে কথা বলি। পুরোনো রেস্তোরাঁর ইতিহাস জানতে চেষ্টা করি। রেসিপি, রান্নার বিশেষত্ব—এসব জেনে নিয়ে তারপর লিখি। আমার মনে হয় সব মিলিয়ে একটা কিছু লিখলে তখন ব্যাপারটা আকর্ষণীয় হয়।’
ফেসবুকের সাহায্যে এই বিজ্ঞাপনের সুযোগ লুফে নিচ্ছে অনেক রেস্তোরাঁ। ঢাকার কোনো কোনো রেস্তোরাঁয় বসে ফেসবুকে চেক–ইন দিলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্যছাড়ও পাওয়া যায়।