ই-মেইল প্রতারণা থেকে সাবধান

এখন জীবনেরই অংশ হয়ে গেছে ই-মেইলে যোগাযোগ করা।অফিসের কাজ বা ব্যক্তিগত দুই জায়গাতেই বেশ প্রয়োজন ই-মেইল সেবা। ওয়েবভিত্তিক বেশ কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বিনা মূল্যে ই-মেইল ব্যবহারের সুযোগ দেয়। কাজের প্রয়োজনে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতেও দিতে হয় ই-মেইল ঠিকানা। আর এসব জায়গা থেকে বা কাজের প্রয়োজনে অনেককে জানানোর কারণে ধীরে ধীরে নিজের ই-মেইল ঠিকানা ছড়িয়ে পড়ে ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। অনেক সময় কিছু আকর্ষণীয় ই-মেইল আসে যেগুলোতে নানা ধরনের প্রলোভন দেখানো হয়। এসব আসলে কৌশলে ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য এমনকি অর্থ আত্মসাৎ করার একটা অপচেষ্টা।না জানা থাকায় অনেকে এসব ফাঁদে পা দেন।মাঝে মাঝে পরিচিত কারও কাছ থেকে ই-মেইল পেলেন, ‘আমি এখন অন্য একটি দেশে আটকে আছি! আমার টাকাপয়সা, মোবাইল ও ক্রেডিট কার্ড সব হারিয়ে গেছে। যে এ মেইল পাবেন, দ্রুত আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন!’ এমন ই-মেইল পেলে দ্রুত চিন্তায় পড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রথমেই খোঁজ নিয়ে নিন যাঁর ই-মেইল ঠিকানা থেকে এ মেইল এসেছে, তিনি আসলে এখন কোথায় আছেন। অনেক সময়ই ই-মেইল পাসওয়ার্ড চুরি করে এ ধরনের মেইল পাঠানো হয়। আবার অনেকের ই-মেইল ঠিকানায় লটারিতে লাখ লাখ ডলার জেতার বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মেইল আসে। একেক ক্ষেত্রে একেক ধরনের কৌশল করা হয়। এসব মেইলের মধ্যে থাকে, ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটি লটারি ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এতে মোট ১০ জন নির্বাচিত হয়েছেন। আপনি তাঁদের অন্যতম! প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপনার ঠিকানায় পাঠানো দরকার। তাই আপনি নিচের ই-মেইল ঠিকানায় আপনার নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, ফোন/ ফ্যাক্স নম্বর ইত্যাদি পাঠান। আবার হতে পারে, পিতা বা স্বামী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজনের। তাঁর পিতা বা স্বামীর ব্যাংকে গচ্ছিত আছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। বিশাল অর্থ গরিবদের বিলিয়ে দেবেন তিনি। তবে ওই ব্যাংক হিসাবের অর্থছাড়ের জন্য কিছু অর্থ প্রয়োজন। সেটি তাঁর একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তাঁকে কিছু অর্থ পাঠাতে হবে। এ ধরনের আরও অনেক ই-মেইল আপনার ঠিকানায় আসতে পারে। এমন নানা বিষয় লিখেও মেইল আসতে পারে। এগুলোকে কখনোই বিশ্বাস করবেন না। এগুলো প্রতারণার কৌশল। ইন্টারনেট নিরাপত্তা গবেষক জাবেদ মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘অনেক সময় অযথাই কিছু লিংক চলে আসে মেইলে। এসব লিংকে ক্লিক না করা ভালো। কারণ এতে ই-মেইলের পাসওয়ার্ড চুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। নানা কারণে এ কাজগুলো করা হতে পারে। ই-মেইলের পাসওয়ার্ড জানার পাশাপাশি মুঠোফোন নম্বর, জন্মতারিখ, ব্যাংক হিসাব তথ্য, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি জানাও এসব মেইলের অন্যতম উদ্দেশ্য। এ ছাড়া এর ফলে ই-মেইল ঠিকানা ব্যবহার করে অপরাধও হতে পারে। এ ধরনের কোনো মেইল পেলে ওই ঠিকানায় কোনো ধরনের উত্তর না দিয়ে সরাসরি মেইলটি মুছে দিতে হবে।’এ ছাড়া নিজের ই-মেইলকে নিরাপদ রাখতে পাসওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সংখ্যা, অক্ষর, চিহ্ন ইত্যাদি ব্যবহার করুন। যেমন ১২৩, /* !# ইত্যাদি। এতে করে আপনার ই-মেইল পাসওয়ার্ড শক্ত হবে এবং নিরাপদ থাকবে। এ ছাড়া অনেক মেইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (যেমন, জি-মেইল) পাসওয়ার্ড দেওয়ার পরও মোবাইলে একটি নিরাপত্তা নম্বর আসার ব্যবস্থা রেখেছে। ‘টু স্টেপ ভেরিফিকেশন’ নামের এ সুবিধার ফলে আপনি যখনই ই-মেইলে পাসওয়ার্ড দেবেন, তখনই মুঠোফোনে একটি নম্বর চলে যাবে। গোপন নম্বর দেওয়ার পর ওই নম্বরটি ছাড়া মেইল খোলা যাবে না। এতে নিরাপত্তা বাড়বে। জাবেদ মোর্শেদ জানালেন, নিরাপত্তার বিষয়টি নিজেই ঠিক করে নিতে পারেন। যেমন অপরিচিত কোনো মেইল ঠিকানা থেকে অপ্রয়োজনীয় মেইল এলে সেগুলোকে স্প্যাম রিপোর্ট করে দিন। অপরিচিত কোনো মেইলের জন্য জবাবে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। অযথা কোনো ওয়েবসাইটে গিয়ে ই-মেইল ঠিকানা থেকে শুরু করে কোনো ধরনের জরুরি ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না।