এ যেন আরেক ‘দঙ্গল’ সিনেমা

দুই কন্যাকে তালিম দিচ্ছেন বাবাছবি: শামসুল হক

ভোরের আলো ফোটার আগেই ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে পৌঁছে যায় দুই বোন। বাবার মোটরবাইকে চড়ে মাঠে আসে মির্জা সাবরিন। মায়ের স্কুটিতে মির্জা সাবারিয়া। আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে মির্জা খোরশেদ আলম ও শিরিন আক্তারের দুই মেয়ে। এ যেন মনে করিয়ে দেয় সেই দঙ্গল সিনেমার কথা। তবে এই দম্পতির দুজনই সাবেক অ্যাথলেট।

খোরশেদ নৌবাহিনীর সাবেক অ্যাথলেট। শিরিন বিজেএমসির। দুজনই একসময় হাইজাম্পে অংশ নিতেন। অবশ্য খোরশেদ ৪০০ মিটার হার্ডলসেও খেলতেন। অন্য অভিভাবকেরা যখন সন্তানদের চিকিৎসক বা প্রকৌশলী বানানোর স্বপ্নে বিভোর, এই দম্পতি ব্যতিক্রম। দুই মেয়েকে অ্যাথলেট বানানোর চেষ্টায় দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন।

সাবরিন আজিমপুর অগ্রণী স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সাবারিয়া পড়ে রাজধানীর উদয়ন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে। অ্যাথলেটিকসে নাম লেখানোর আগে দুই বোন অংশ নিয়েছে জাতীয় রোলার স্কেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ ও জিমন্যাস্টিকস চ্যাম্পিয়নশিপে। গত বছর রোলার স্কেটিংয়ে সোনা জিতেছে সাবারিয়া, রুপা সাবরিন। তবে রোলার স্কেটার বা জিমন্যাস্ট নয়, দুই মেয়েকেই যোগ্য অ্যাথলেট বানাতে চান বাবা খোরশেদ আলম।

সমবয়সী অন্যরা যখন মুঠোফোনে গেমস কিংবা ফেসবুকে ব্যস্ত, এই মেয়েদের চিন্তায় থাকে কত মিটার উঁচুতে লাফ দেওয়া যাবে। মা–বাবার দুজনেরই প্রিয় হাইজাম্প। তাই মেয়েদেরও হাইজাম্পে খেলানোর ইচ্ছা খোরশেদের। পাশাপাশি হার্ডলস ও ১০০ মিটার দৌড়ে দুই মেয়েকে খেলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন খোরশেদ।

সপ্তাহে চার দিন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দুই মেয়েকে অনুশীলন করান খোরশেদ ও শিরিন। দুজনই অ্যাথলেটিকসের লেভেল ‘এ’ কোচেস কোর্স করেছেন। তাই মেয়েদের অনুশীলন করাতে কারিগরি কোনো সমস্যা হয় না দুজনের।

অ্যাথলেট দম্পতি মির্জা খোরশেদ আলম ও শিরিন আক্তারের সঙ্গে দুই কন্যা মির্জা সাবারিয়া ও মির্জা সাবরিন
ছবি: শামসুল হক

বাংলাদেশের ধূসর অ্যাথলেটিকসে একটু আলো আনতে চান এই দম্পতি। নিজের মেয়েদের সেভাবেই প্রস্তুত করছেন খোরশেদ। বললেন, ‘আমি যদি সন্তানদের এভাবে মাঠে আনি, তা দেখে আমার মতো অনেকেই তাঁদের সন্তানদের খেলতে পাঠাবেন। ধীরে ধীরে মেয়েদের প্রস্তুত করতে চাই।’

মির্জা সাবারিয়া ও মির্জা সাবরিন, দুজনেরই খেলার প্রতি প্রচণ্ড টান। প্রতিদিন সকালে ডেকে বাবাকে অনুশীলনে যাওয়ার তাড়া দেয়। বলে, ‘আব্বু আমরা রেডি। চলো যেতে হবে।’

১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার জাতীয় অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে হাইজাম্পে সোনা জেতেন শিরিন। কিন্তু ১৯৯৩ ঢাকা সাফ গেমসে অংশ নিয়েও কোনো পদক পাননি। মেয়েদের মধ্যেই নিজের স্বপ্নটাকে জাগিয়ে দিয়েছেন শিরিন, ‘আমি যেটা করতে পারিনি, সেটা যেন আমার মেয়েরা পারে।’

সাবরিনের চোখেও জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন, ‘মা–বাবার কাছে অ্যাথলেটিকসের অনুশীলন করি। এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। দেশের হয়ে আমি পদক জিতে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’