এই গ্রীষ্মে যে পাঁচটি বই অবশ্যই পড়া দরকার
বিভিন্ন সময় তাঁর লেখায়, বক্তৃতায় উঠে আসে নানা বইয়ের কথা। তাঁর ওয়েবসাইট গেটসনোটসে সদ্য পড়া বইগুলো নিয়ে নিয়মিতই রিভিউ লেখেন তিনি। ৬ জুন গ্রীষ্মে পড়ার উপযোগী পাঁচটি বই নিয়ে নতুন একটি লেখা প্রকাশ করেছেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বিল গেটস
গ্রীষ্মকালে পড়ার উপযোগী বইয়ের তালিকা করতে গিয়ে দেখি, ছুটিতে পড়ার বই হিসেবে বিষয়গুলো বড্ড গুরুগম্ভীর হয়ে গেছে। বইগুলোর বিষয় লিঙ্গবৈষম্য, রাজনৈতিক মতভেদ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং একটি কঠিন সত্য—জীবন কখনোই তরুণদের চাওয়া অনুযায়ী চলে না। শুনে মনে হয় না, এগুলো ঠিক সমুদ্রতীরে বসে পড়ার মতো বিষয়।
তবে নিচের এই পাঁচটি বইয়ের কোনোটিই পড়ার সময় বেশি খটমটে মনে হয়নি (যদিও প্রায় ৬০০ পাতার দ্য লিংকন হাইওয়ে আক্ষরিক অর্থেই বেশ ‘ভারী’)। আমাদের তালিকার পাঁচজন লেখকের মধ্যে তিনজন ঔপন্যাসিক, একজন সাংবাদিক এবং একজন বিজ্ঞানী। কোনো ধরনের জটিলতা বিসর্জন না করেও অসম্ভব চিন্তা উদ্রেককারী কিছু বিষয় আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন তাঁরা।
ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রতিটি বই–ই ভালোবেসে ফেলেছি। আশা করি আপনারাও বইগুলোতে উপভোগ করার মতো কিছু বিষয় খুঁজে পাবেন।
দ্য পাওয়ার, নাওমি অল্ডারম্যান
আমি আনন্দিত যে আমার বড় মেয়ের পরামর্শ শুনে এই উপন্যাসটা আমি পড়তে শুরু করেছিলাম। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বইতে একটা ভাবনা উপস্থাপন করা হয়েছে—যদি পৃথিবীর প্রত্যেক নারী আচমকা তাঁর নিজের শরীরে প্রাণঘাতী বৈদ্যুতিক শক উৎপাদন করার ক্ষমতা পেতেন, কেমন হতো? এই ধারণাটির মধ্য দিয়ে সমাজে নারী–পুরুষের ভূমিকা আর সমতার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে। নারীরা প্রতিদিন কী ধরনের অন্যায়, অবিচারের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান, বইটি পড়ে আমি সে সম্পর্কে জোরালো এবং আরও গভীর ধারণা পেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রে এবং সারা বিশ্বে যাঁরা এই সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করেন, বইটি পড়ে তাঁদের প্রতি আমার সম্মান আরও বেড়ে গেছে।
হোয়াই উই আর পোলারাইজড, এজরা ক্লাইন
সাধারণত আমি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বেশ আশাবাদী। কিন্তু আমেরিকায় মানুষে মানুষে বিভাজন এত বাড়ছে যে মাঝেমধ্যে মনে শঙ্কা জাগে। রাজনীতির ক্ষেত্রেই এই বিভেদটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ বইটিতে লেখক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে এই বিভাজনের কারণ আর কিছু নয়, মানুষের নিজস্ব পরিচয়। দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি। বইটিতে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি নিয়ে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে মানুষের মনোজগৎও উঠে এসেছে দারুণভাবে।
দ্য লিঙ্কন হাইওয়ে, আমোর টাওলস
২০১৯ সালে টাওলসের আ জেন্টলম্যান ইন মস্কো বইটি আমার পড়ার তালিকায় ছিল। কিন্তু একই সিরিজের পরের বইটিই আমার বেশি প্রিয়। ১৯৫৪ সালের প্রেক্ষাপটে বইটি লেখা। দেখা যায়, মাকে খুঁজতে গাড়ি করে নেব্রাস্কা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া যাচ্ছে দুই ভাই। কিন্তু বড় ভাইয়ের অতীত থেকে উঠে আসা এক চঞ্চল কিশোর তাঁদের যাত্রাটাকে বেপথু করে দেয়। মূলত বিখ্যাত হিরোদের যাত্রা থেকে প্রেরণা নিয়েছেন টাওলস। এবং বলতে চেষ্টা করেছেন—আমাদের ব্যক্তিগত যাত্রাটা কখনোই সোজা পথে চলে না, কিংবা যেমনটা আমরা অনুমান করেছিলাম, তেমন হয় না।
দ্য মিনিস্ট্রি ফর দ্য ফিউচার, কিম স্ট্যানলি রবিনসন
জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর আমার লেখা বইটির প্রচারণার সময় গত বছর অনেকেই আমাকে এই বইটি পড়ার পরামর্শ দেন। কারণ, বইটিতে আমারই লেখা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে নাটকীয়ভাবে লেখা হয়েছে। আমি আনন্দিত এই বইটি পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কারণ এটা সত্যিই দারুণ। বইটি এতটাই জটিল যে অল্প কথায় ঠিক বুঝিয়ে উঠতে পারব না। কিন্তু রবিনসন এমন একটা গল্প লিখেছেন যা খুবই উদ্দীপক। গল্পের সঙ্গে খুব দ্রুত মিশে যান পাঠক। ভিন্ন ভিন্ন দশক আর মহাদেশে গল্পের পরিধি ছড়িয়ে পড়লেও এটা দারুণ সব চরিত্র আর ভাবনায় পরিপূর্ণ।
হাউ দ্য ওয়ার্ল্ড রিয়েলি ওয়ার্কস, ভাক্লাভ স্মিল
আমার প্রিয় একজন লেখকের আরও একটি মাস্টারপিস। ভাক্লাভের বেশির ভাগ বইয়ে একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়, অনেকটা পাঠ্যবইয়ের মতো। তবে এই বইটি কিছুটা ভিন্ন। এটি সাধারণ পাঠকের জন্য সহজ ভাষায় লেখা। যে মৌলিক শক্তিগুলো মানুষের জীবনকে একটা আকার পেতে সাহায্য করে, আপনি যদি সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর জ্ঞান চান, এই বইটি পড়তে পারেন।