এই দায় শুধু ধর্ষকের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার নারীদের  প্রতিবাদ কর্মসূচি। বিশ্বব্যাপী এভাবেই প্রতিবাদী গান গেয়ে আন্দোলন করছেন নারীরা।  ছবি: হাসান রাজা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার নারীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি। বিশ্বব্যাপী এভাবেই প্রতিবাদী গান গেয়ে আন্দোলন করছেন নারীরা। ছবি: হাসান রাজা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার পর একসঙ্গে শিক্ষার্থীসহ নানান শ্রেণি-পেশার নারীর গাওয়া প্রতিবাদী গানের কথাগুলো এ রকম, ‘পুরুষতন্ত্র এমন এক মোড়ল, চোখে তোর জন্মই আমার পাপ, জুলুম তোর এতটাই প্রবল, বেঁচে থাকাটাই অভিশাপ। এই দায় শুধু তোর, তুই ধর্ষক...’। এই দায় আমার নয়, চলন–বলন–জামার এই দায় আমার নয়।

‘পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে’ নামক একটি প্ল্যাটফর্মের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রবণা শফিক। বললেন, চিলিতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন চলছে, ‘আ রেপিস্ট ইন ইউর পাথ’ গানের সঙ্গে। 

এই আন্দোলন বিশ্বের ২০০টির বেশি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। এরই আদলে বাংলাদেশে তা শুরু করেছেন শ্রবণা শফিকেরা। তাঁদের গানের কথাগুলোও চিলির ওই আন্দোলনের গানের ছায়া অবলম্বনে করা।

শ্রবণা শফিক বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে কাজ করছি। ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমরাও পারফর্ম করছিলাম। আর ঠিক এ সময়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটল। তখন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও রাজু ভাস্কর্য, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ, শিল্পকলা একাডেমিসহ একাধিক জায়গায় পারফর্ম করি।’

 শ্রবণা জানান, ২৫ জন নিয়ে তাঁরা শুরু করেছিলেন। এখন ৩০০ জনের মতো আছেন। এখানে যে কেউ যোগ দিতে পারবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন, সাধারণ শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন। 

 শ্রবণা শফিক বললেন, ‘পুরুষতন্ত্র একটা সমস্যা। আমরা পুরুষের বিরুদ্ধে নয়, কিন্তু সিস্টেমটার বিরুদ্ধে কথা বলছি।’

শ্রবণা জানালেন, সারা বিশ্বে ধর্ষণের ঘটনা ও বিচার হওয়া না হওয়ার বিষয়গুলো হিসাব রাখার জন্য সামনে ‘রেপ ওয়াচ’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁরা সরব হবেন। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটি তৈরির জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। এই নির্দেশনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে, না হয়ে থাকলে কেন হচ্ছে না এসব বিষয় নিয়েও তাঁরা কাজ করতে চান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের উদ্দেশে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়, সেসব মন্তব্য নিয়ে একটি প্রদর্শনী করতে চান।

শ্রবণা বললেন, ‘এই ধরনের কাজের মধ্য দিয়ে যতটুকু সচেতনতা তৈরি করা যায়, ততটুকই লাভ। হয়তো বড় পরিসরে এখনই কিছু হবে না, কিন্তু কিছু মানুষের হলেও সমাজের জন্য তা ভালো।’