একজন কৃতী শিক্ষকের স্মরণে

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস কৌশল (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী শুধু একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন রীতিমতো একটি প্রতিষ্ঠান। দেশে-বিদেশে তাঁর গুণগ্রাহী, গুণমুগ্ধ ছাত্রছাত্রীরা কর্মরত। তাঁদের কাছে মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বটবৃক্ষের মতো।

তিন বছর আগে মোহাম্মদ আলী চৌধুরী প্রয়াত হয়েছেন। তিনি যে দৈহিকভাবে নেই, তা আমরা অনুভব করি। তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল ভবন (ইসিই ভবন) আছে, কিন্তু বহুতল ভবনটির মতো দৃঢ়, অবস্থানে নির্ভরযোগ্য মোহাম্মদ আলী ভাইয়ের মতো একজন ব্যক্তিত্ব নেই, যাঁর কাছে নিঃসংকোচে যেকোনো সময় যে কেউ আসতে পারত।

মোহাম্মদ আলী চৌধুরী জীবনে আয় করেছেন যৎসামান্যই, যা না চাইতেই পাওয়া যায়। নিজের জন্য ব্যয়ও করেছেন অতি সামান্যই, বাকিটা আশপাশের অভাবী মানুষের মধ্যে বিলিয়েছেন সংগোপনে। কখনো কোনো প্রকল্প থেকে আয় করলে কত দ্রুত তা আয়কর বিভাগের সঙ্গে ভাগাভাগি করা যায়, তার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতেন তিনি।

মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী ভাই। কখনো তীব্র ব্যথা, যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ দেখিনি। তিনি গভীর পুকুরের পানির মতো শান্ত-সৌম্য ছিলেন। কোনো বিষয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করতেন না। তবে শিক্ষকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে পাঠদান বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলে বর্জনকালে বেতনও যে গ্রহণ করবেন না, এ কথাও বলতে ভুলে যেতেন না। আশপাশের পরিচিত-অপরিচিত সব মানুষকেই উদারচিত্তে সাহায্য করেছেন, কখনো সাহায্য প্রত্যাশা করেননি। এমনকি মৃত্যুর আগেও চিকিৎসার জন্য ছাত্র-সহকর্মীদের এগিয়ে আসার উদ্‌গ্রীব আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছেন। এই অসামান্য মানুষ অতীব সামান্য আয়োজনের মধ্যেই চিরবিদায় নিয়েছেন, ঠিক যে রকমটি তিনি চেয়েছিলেন।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী স্বপ্ন দেখতেন, বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস কৌশল বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য এমন বৃত্তি প্রদান করবেন, যাতে করে তাঁরা গবেষণায় মনোনিবেশ করতে পারেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়ে ওঠেনি। তাঁর গুণমুগ্ধ ছাত্র, সহকর্মীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন তাঁকে যেন ইসিই ভবনের মতোই সব সময় পাওয়া যায়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে খ্যাতনামা শিক্ষকদের নামে ভবনের নামকরণ করা হয়। সেই প্রথিতযশা শিক্ষকদের দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে আমি মোহাম্মদ আলী ভাইকে দেখেছি, যার অবস্থান ও উপস্থিতি বুয়েটের ইসিই ভবনের মতো নিশ্চিত, দৃঢ় ও আস্থার।

মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর গুণগ্রাহীরা তাঁর উপস্থিতি অনুভব করার জন্য, তাঁর আদর্শে নিজেদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য নানা কর্মসূচির মধ্যে স্নাতকোত্তর ছাত্রদের জন্য বুয়েট-ইইই ছাত্রবৃত্তি এবং এই নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের নামে পাওয়ার ইলেকট্রনিকস ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। আমরা সবাই এই মহৎপ্রাণ, নির্লোভ, নির্মোহ, নিবেদিতপ্রাণ আত্মার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এই মহৎ কাজে শামিল হতে পারি।

এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে—

ফেসবুক: fb.com/events/165249161755358

ওয়েবসাইট: https://sites.google.com/view/macbueteeealumnifund/home?authuser=0

বুয়েট-ইইই ঘোষণা: https://eee.buet.ac.bd/read/more/8