একজন ‘বকুলদা’

বকুল চন্দ্র বর্মণ
ছবি: সংগৃহীত

একটি-দুটি নয়, সাতটি টিউশনি করেন বকুল চন্দ্র বর্মণ। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ছাত্র, কোচ সম্প্রদায়ের এই তরুণ বলছিলেন, ‘টিউশনি করে আমি বেশ ভালো আয় করি। আমার নিজের পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। ছোট বোনটাকে পড়ালেখা করাচ্ছি। পাশাপাশি নিজের খরচ সামলে যেটুকু টাকা থাকে, সবটাই খরচ করি মানুষের জন্য।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

বকুল যাকে ‘বেশ ভালো আয়’ বলছেন, টাকার অঙ্কে তার পরিমাণ ২৫-৩০ হাজার। মাসিক এই আয় থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের এই তরুণ কত কী করেন, জানলে অবাক হবেন। উত্তরবঙ্গে কোচ সম্প্রদায়ের তরুণদের নিয়ে তিনি গড়েছেন ‘বাংলাদেশ কোচ রাজবংশী বর্মণ সংগঠন’। কোচদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে ধারণ, সংরক্ষণ করার পাশাপাশি এই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের এক করা এবং বিভিন্ন সুযোগ সম্পর্কে জানানো তাঁর উদ্দেশ্য।

বকুল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করার জন্য আমি প্রথম ঢাকায় গিয়েছিলাম। কিছুই চিনতাম না, বুঝতাম না। ঠেকে শিখেছি। আমার মতো প্রান্তিক এলাকা থেকে যাঁরা উঠে আসেন, তাঁদের সাহায্য করা, দিকনির্দেশনা দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য। আমি এলাকায় গেলেই বিভিন্ন কর্মশালা করি, সেমিনার করি। কোচ সম্প্রদায়ের প্রায় ৪০ জনকে আমি বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সাহায্য করেছি। কাউকে হয়তো দিকনির্দেশনা দিয়েছি। থাকার ব্যবস্থা করেছি। যাঁর পরিবারের অবস্থা ভালো না, তাঁকে টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করেছি।’ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ২৫ হাজার টাকা উপবৃত্তি দেয় সরকার, যে সুবিধার কথা অনেকেই জানেন না। এই উপবৃত্তি পেতেও সাহায্য করেন বকুল। তিনি বলেন, ‘কেউ যখন ফোন করে ধন্যবাদ জানিয়ে বলে, “বকুলদা, আমি অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি” কিংবা “উপবৃত্তির টাকা পেয়েছি”, মনটা ভালো হয়ে যায়।’

মাভাবিপ্রবির ‘আদিবাসী ছাত্র সংগঠন’-এর সক্রিয় সদস্য বকুল। শুধু কোচ নয়, চাকমা, মারমা, গারোসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চান তিনি।