একটুখানি বাটাম

ইন্দোনেশিয়া বা সিঙ্গাপুর গেলে ঘুরে আসতে পারেন বাটাম দ্বীপপুঞ্জে। ছবি: লেখক
ইন্দোনেশিয়া বা সিঙ্গাপুর গেলে ঘুরে আসতে পারেন বাটাম দ্বীপপুঞ্জে। ছবি: লেখক

আমাদের বেড়ানোর পরিকল্পনায় ছিল সিঙ্গাপুর আর মালয়েশিয়া। এ নিয়ে ইন্টারনেট ঘেঁটে ব্যাপক গবেষণা। কোথায় যাব, কী দেখব, হোটেল কী হবে, এই পরামর্শ, ওই পরামর্শের জন্য ঢুঁ মারছিলাম নানা জনের ভ্রমণ-ব্লগে। এর মধ্যে বারবারই আসছিল একটা জায়গার নাম—বাটাম। ইন্দোনেশিয়ার এই দ্বীপের নাম আগে শুনিনি। কিন্তু সিঙ্গাপুর আর মালয়েশিয়ার জহর বাহরু ঘুরে আসা পর্যটকদের অনেকের উচ্ছ্বাস ছাপিয়ে যাচ্ছিল এই দ্বীপপুঞ্জ ঘিরে। আগ্রহের শুরু এখানেই।

অন্য রকম এক দ্বীপ। ঝাঁ-চকচকে নগরের সুরম্য কাঠামো বেশ মানিয়ে নিয়েছে চারদিকে সাগরঘেঁষা সবুজ প্রকৃতিতে। ইন্দোনেশিয়ার নিজস্ব সংস্কৃতির ছাপ আছে প্রতিটি স্থানে। আবার পাশ্চাত্যের আধুনিকতার ছোঁয়াও আছে। নানান দেশের ভিন্ন সংস্কৃতির হরেক মানুষ নিয়েই এই দ্বীপশহর—বাটাম। বাণিজ্যিক এলাকা এবং সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি হওয়ায় এই দ্বীপের অর্ধেক মানুষ ভিনদেশি, ভিন সংস্কৃতির।

এক দিনেই বাটাম ভ্রমণ

কেনাকাটা করে আনন্দ পাবেন
কেনাকাটা করে আনন্দ পাবেন

সিঙ্গাপুরের দক্ষিণ উপকূল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের এই দ্বীপ এলাকার আয়তন সিঙ্গাপুরের সমান। পাঁচটি আলাদা শহর নিয়ে মূল বাটাম এলাকা—বাটাম সেন্টার, নাগোয়া, ওয়াটারফ্রন্ট সিটি, সেকুপাং ও তেলাগা পাঙ্গুর। সোজা পথে বাটামের এ-মাথা থেকে ও-মাথার সর্বোচ্চ দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। তাই বাটামের পুরোটা ঘুরে দেখা সম্ভব এক দিনেই। যাতায়াতের জন্য ট্যাক্সির পাশাপাশি মিনিবাস ও বাস আছে। বাটামে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় বেয়ারল্যাং ব্রিজ এলাকা। এর দক্ষিণ উপকূলে কয়েকটি ঝুলন্ত সেতু আছে, সব কটিকে একসঙ্গে বয়াল্যাং ব্রিজ ডাকা হয়। এখানে একসঙ্গে ধরা পড়বে সৈকত, সবুজ আর ঝুলন্ত সেতুর সৌন্দর্য। সূর্যাস্ত ঘিরে একটা বিকেল এখানে কাটিয়ে দেওয়া যায় অনায়াসেই। সকালে বের হয়ে দুপুরের আগে দেখা যেতে পারে বাটাম সিটি সেন্টারসংলগ্ন বিখ্যাত স্থাপনা জাব্যাল আরাফা মসজিদ, মসজিদ রায়া, মহাবিহার দুতা বৌদ্ধমন্দির, টুয়া প্যাং কং বৌদ্ধবিহার ও নাগোয়া এলাকা। দুপুরে খেয়ে নিতে পারেন সামুদ্রিক মাছের কোনো রেস্তোরাঁয়। আর সেটা যদি হয় বেংকং এলাকার গোল্ডেন প্রন সি ফুড রেস্তোরাঁ, তাহলে তো কথাই নেই। এটা বাটামের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারের জায়গা। এই রেস্তোরাঁর আশপাশের মিনিয়েচার পার্ক এলাকা ঘুরেই চলে যাবে অনেকটা সময়। বাটামে বৈচিত্র্যময় খাবার পাওয়া যায়। ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত মসলার জন্যই সম্ভবত এখানকার খাবার অসাধারণ।

কেনাকাটার স্বর্গরাজ্য

বাটাম পর্যটকদের কাছে বেশি প্রিয় কেনাকাটা আর খাবারের জন্য। এটি পুরোটাই শুল্কমুক্ত এলাকা। এখানকার বিরাট বিপণিবিতানগুলোয় তাই বিদেশি পর্যটকদের ভিড়। ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে কাপড়চোপড়—সবকিছুর দামই এখানে তুলনামূলক কম। সিঙ্গাপুর গেলে অন্তত কেনাকাটা করার জন্য হলেও এক দিনে বাটাম ঘুরে আসা যেতে পারে। আপনি যদি বাটাম সেন্টার এলাকায় থাকেন, তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো মেগা মল শপিং সেন্টার। কাছাকাছি আছে কেপরি মল। বাটামের সবচেয়ে বড় বিপণিবিতান নাগোয়া হিল মলে যেতে হবে ট্যাক্সি বা বাসে করে। আমরা মল তিনটি ঘুরে শেষ করতে পারিনি। তবে বাটামে আরও আছে হারবার বে মল, প্লাজা টপ, ডায়মন্ড সিটি ও প্যানবিল মলের মতো অনেক বিপণিবিতান। এই মলগুলোর মধ্যেই আছে মাতাহারি ও হাইপারমার্টেল মতো সুপার মার্কেট। এসব সুবিশাল সুপার মার্কেটে হরেক জিনিস পাওয়া যায়, দামেও যথেষ্ট সাশ্রয়ী। সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার সঙ্গে ভ্রমণ পরিকল্পনায় বাটাম থাকলে কেনাকাটার বেশির ভাগ এখানেই করা ভালো। চকলেট, ইলেক্ট্রনিকস পণ্য, উপহারসামগ্রী, পোশাক, প্যাকেটজাত খাবার, জুতা, ব্যাগ, মসলা ইত্যাদি পছন্দসই সদাই করতে পারেন বেশ সাশ্রয়ে।

বাটামের খাবারও মজাদার
বাটামের খাবারও মজাদার

যেভাবে যাবেন, যেখানে থাকবেন

সিঙ্গাপুর কিংবা মালয়েশিয়াতে যাওয়া হয় অনেকরই। সেখান থেকে এক দিনের ফুরসতে অনায়াসে ঘুরে আসা যাবে বাটাম থেকে। সে জন্য আগে থেকেই ইন্দোনেশিয়ার ভিসাটা করে নিতে হবে ঢাকা থেকেই।বাটাম যাওয়ার সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী পথ হলো ফেরি। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার জোহর বাহরু থেকে প্রচুর ফেরি আছে। আগে থেকে টিকিট কাটার দরকার নেই। সিঙ্গাপুরে ফেরি ছাড়ে হারবারফ্রন্ট থেকে। এমআরটি, বাস বা ট্যাক্সিতে করে হারবারফ্রন্ট স্টেশনে এলেই হবে। চমৎকার ও নিরাপদ এসব ফেরিতে অভিবাসন শুল্কসহ প্রতিজনের যাওয়া-আসায় খরচ পড়বে বাংলাদেশি টাকায় তিন হাজার টাকারও কম। সাশ্রয়ী হোটেলভাড়াও। তিন হাজার টাকায় পাঁচতারকা হোটেলে থাকা সম্ভব। একেবারে সাগড়পাড়ে অসংখ্য হোটেল ও রিসোর্ট আছে। ট্রিপ অ্যাডভাইজার (www.tripadvisor.com) থেকে দেখে-শুনে আগে থেকে অনলাইনে হোটেল বুক করে রাখলে ভালো হয়। বাটামে ফেরি থেকে নেমেই প্রথম চমকটা আসবে ট্যাক্সিভাড়া শুনে। হোটেল যদি শহরের ওপারে হয়, তাহলে ট্যাক্সিভাড়া চাইবে হয়তো এক লাখ রুপি। ভয় পাবেন না। বাংলাদেশি টাকায় এটি ৭০০ টাকারও কম। এমন সাশ্রয়ে খেয়েদেয়ে লাখ লাখ রুপি ওড়ানোর সুযোগ জীবনে বেশি নাও আসতে পারে।