এতে মা প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছে

মেহতাব খানম
মেহতাব খানম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা
আমি উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। মেসে থেকে পড়াশোনা করি। লেখাপড়ার খরচ জোগাতে বাবা-মা গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে থাকে। কিছুদিন আগে আমার কিছু ব্যক্তিগত রোগের কথা মাকে জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম যেন কাউকে না বলে। কিন্তু মা ভুল করে ভাইয়া ও আপুর সঙ্গে কথাটি বলে ফেলে। জানি না কেন হঠাৎ আমি মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করেছি। পরে বুঝেছি, এতে মা প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছে। এখন আমার মা আর আমার সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলে না। সামনে টেস্ট পরীক্ষা। খুব চিন্তায় আছি, অনুশোচনায় বারবার কান্না পাচ্ছে। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। এখন কী করা উচিত?
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক


পরামর্শ

তুমি যে কতটা মানসিক চাপে রয়েছ, তা বুঝতে পারছি। কেউ যদি আমাদের বিশ্বাস ভঙ্গ করে, সেটি অত্যন্ত পীড়াদায়ক হয়। সে কারণেই তুমি প্রচণ্ড দুঃখ ও বঞ্চনা থেকে মায়ের সঙ্গে রাগ করে ফেলেছ। মাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে খুব ব্যক্তিগত একটি তথ্য তুমি তাঁকে দিয়েছ। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের সমাজে গোপনীয়তা রক্ষার চর্চাটি খুব কম হয়।

আমাদের পরিবারে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করতে আলাদাভাবে শেখানো হয় না। যার প্রতি অগাধ বিশ্বাস থাকে, সে যদি সেটি রাখতে ব্যর্থ হয়, তাহলে কষ্টটা অনেক বেড়ে যায়। তবে তুমি মাকে রেগে গিয়ে যা বলেছ, সেটি হয়তো তিনি তোমার কাছ থেকে একেবারেই প্রত্যাশা করেননি। সে কারণেই ভালোভাবে কথা না বলে তাঁর রাগটি নীরবে প্রকাশ করছেন। তিনি যেহেতু তোমার চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, তাই তাঁর কাছ থেকে কিছুটা আবেগীয় পরিপক্বতা আশা করা যায়। হয়তো সেটি না থাকার কারণে তিনি তাঁর আদরের সন্তানের সঙ্গে যথাযথভাবে আচরণ করতে পারছেন না।

আমরা যদি কারও আচরণে মনঃক্ষুণ্ন হই, তাহলে সেটি দৃঢ়তা ও ভদ্রতা—দুটোই বজায় রেখে কারণটি বলে দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। কিন্তু সামাজিক দক্ষতা ও আবেগীয় পরিপক্বতার অভাবে আমরা বেশির ভাগ সময় সেটি করতে ব্যর্থ হই। কারও সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিলে সম্পর্কজনিত সমস্যা আরও বেড়ে যায় এবং যার সঙ্গে এটি করা হয়, তার মনে প্রচণ্ড অভিমান জমে যায়। যেহেতু তিনি তোমার এতটা কাছের মানুষ, সেহেতু তাঁর রাগ ও অভিমানের কথাগুলো সরাসরি বলে ফেললেই ভালো হতো। তাতে বরং তুমি কিছু বলার সুযোগ পেতে এবং দুজনেই মনের কথা প্রকাশ করে হালকা বোধ করতে পারতে। এই নীরবতাটি তিনি যদি না ভাঙেন, তাহলে তোমাকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

খুব ভালো হয়, তুমি যদি মায়ের কাছে একটি বড় করে চিঠি লেখো। সেখানে তাঁর প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে এবং তাঁকে তুমি কতটা ভালোবাসো, তা উল্লেখ করে তোমার হতাশা ও বিশ্বাস ভঙ্গের কথাটি বলো। এ ছাড়া তুমি যে কথাগুলো রাগ করে বলে ফেলেছ, তার জন্যও ক্ষমা প্রার্থনা করো। এতে করে তুমি অনেকটা ভারমুক্ত হবে এবং মা-ও হয়তো তোমার সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করতে সক্ষম হবেন।