এনজিওতে নানা কাজের সুযোগ

এ দেশে এনজিওগুলো প্রধানত স্বাস্থ্যসচেতনতা, শিক্ষা, স্যানিটেশন, নারী, মানবাধিকার, শিশু প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করে l ছবি: প্রথম আলো
এ দেশে এনজিওগুলো প্রধানত স্বাস্থ্যসচেতনতা, শিক্ষা, স্যানিটেশন, নারী, মানবাধিকার, শিশু প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করে l ছবি: প্রথম আলো

দেশের সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি মানবসম্পদের উন্নয়নের জন্য সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং অনেক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিও কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ত্রাণ ও পুনর্বাসন নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এর ব্যাপ্তি বেড়েছে অনেক। বাংলাদেশ এনজিও ব্যুরোর পরিচালক রওনক মাহমুদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধনকৃত এনজিওর সংখ্যা মোট ২ হাজার ৩৪৬। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়নে পরিচালিত এনজিওর সংখ্যা ২ হাজার ১০৮ এবং বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত ২৩৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জনশক্তির পরিমাণ সাত লাখের বেশি। এ ছাড়া নিবন্ধনের বাইরে থাকা এনজিওর সংখ্যাও নেহাত কম নয়, সেখানেও বিপুল মানুষ কাজ করছেন।
ভিন্ন ভিন্ন কাজের ক্ষেত্র
এ দেশে এনজিওগুলো প্রধানত প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যসচেতনতা, শিক্ষা, মৌলিক অধিকার, স্যানিটেশন, আর্সেনিক, এইচআইভি/এইডস, নারী, মানবাধিকার, শিশু, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী, ক্ষুদ্রঋণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করে। সে ক্ষেত্রে মূলত কয়েকটি নির্ধারিত পদ বাদে অন্য ক্ষেত্রগুলোয় চাকরি পাওয়ার জন্য পড়াশোনার বিষয় নিয়ে বাঁধাধরা কোনো নিয়ম নেই। এনজিওগুলোয় বিষয়ভিত্তিক কয়েকটি ভাগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গবেষণা, উন্নয়ন, প্রকল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ, হিসাবরক্ষণ বিভাগ প্রভৃতি। একেক বিষয়ে কাজ করার যোগ্যতা আলাদা। মাঠপর্যায়ের কাজের ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ, নৃবিজ্ঞান, লোকপ্রশাসন, অর্থনীতি, উন্নয়ন অধ্যয়ন, নারী অধ্যয়ন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা বেশি প্রাধান্য পান। আবার গবেষণার ক্ষেত্রে ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজি, মনোবিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা ইত্যাদি বিষয় বেশি গুরুত্ব পায়। এ ছাড়া পরিসংখ্যান ও গণিত বিষয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য কাজে গুরুত্ব পেয়ে থাকেন। এনজিওর নিজস্ব হিসাব বিভাগ ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের জন্য বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পান। প্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রিধারীদের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদেরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

এ দেশে এনজিওগুলো প্রধানত স্বাস্থ্যসচেতনতা, শিক্ষা, স্যানিটেশন, নারী, মানবাধিকার, শিশু প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করে l ছবি: প্রথম আলো
এ দেশে এনজিওগুলো প্রধানত স্বাস্থ্যসচেতনতা, শিক্ষা, স্যানিটেশন, নারী, মানবাধিকার, শিশু প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করে l ছবি: প্রথম আলো

বাড়তি যোগ্যতা ও মানসিক প্রস্তুতি
অক্সফাম ইন বাংলাদেশের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক রুমেনা জামান বলেন, যেকোনো এনজিওতে কর্মরত একজন কর্মীকে মানুষের কল্যাণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করতে হয়। ফলে নিজের ইচ্ছা আর সেবার মানসিকতা থাকাটা এ ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। এ ছাড়া প্রয়োজনে প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলে গিয়ে কাজ করার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারা, অন্যকে বোঝানোর ক্ষমতা, ধৈর্যশীল হওয়া, উপস্থিত বুদ্ধি, উন্নয়নকাজে অভিজ্ঞতা, সৃজনশীলতা, নিষ্ঠা, ভাষাগত দক্ষতা, প্রযুক্তিগত ধারণা, দায়িত্বশীল ও পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে—এমন গুণাবলি বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকে।
নিয়োগ-প্রক্রিয়া
এনজিওগুলোয় মূলত দুই ধরনের নিয়োগ দেওয়া হয়—স্থায়ী ও প্রকল্পভিত্তিক। এ ছাড়া রয়েছে খণ্ডকালীন চাকরি এবং ইন্টার্নশিপের সুযোগ। প্রকল্পভিত্তিক কাজগুলো মূলত চুক্তিভিত্তিক। এই কার্যক্রমগুলোয় সারা বছরই কিছু কিছু লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এর বাইরেও অফিস পরিচালনা ও মাঠপর্যায়ে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। নতুন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রপত্রিকা ও অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান নিজেদের ওয়েবসাইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। চূড়ান্ত নিয়োগের আগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।

বেতনকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা
ভালো এনজিওতে বেতনকাঠামো বেশ আকর্ষণীয়। বেতনের পাশাপাশি চিকিৎসা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও বিদেশ ভ্রমণের সুযোগও রয়েছে। মাঠপর্যায়ে কাজের জন্য রয়েছে বিশেষ ভাতা।