কত কাজের কাঁচি...
কাগজ কাটলে খচখচ, কাপড় কাটলে গজগজ আর সবজি কাটলে কচকচ। একেক কাঁচির একেক ব্যবহার। শব্দগুলোও তাই ভিন্ন। এমন হরেক রকম কাঁচি কিন্তু বাজারে সহজলভ্য। ভিন্নতা আছে কাঁচির নকশাতেও। কাগজ কাটার কাঁচি দিয়ে কাপড় কেটে কিংবা কাপড় কাটার কাঁচি দিয়ে সবজি কাটলে কাঁচির মানসম্মান তো একটু আহত হবেই। সঙ্গে কাজটাও বিগড়ে যায়। তাই জেনে রাখা ভালো কোন কাঁচির কী কাজ।
যাঁরা কাঁচি বিক্রি করেন এবং কাঁচি দিয়ে যাঁরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন, তাঁরা বাতলে দিয়েছেন একেক কাঁচির ব্যবহার। তবে কিছু ভিন্ন ধরনের কাঁচি কেনার সময় সঙ্গে পেতে পারেন ব্যবহারের নির্দেশনা। বাজার ঘুরে দেখা গেল, দৈনন্দিন জীবনে মোটামুটি তিন ধরনের কাজের জন্য কাঁচি বিক্রি হয়। ঘরে বসে কাপড় বানাবেন, সেই কাপড় কাটতে এক ধরনের কাঁচি ব্যবহার করা হয়। আবার কাগজ কেটে কিছু বানাবেন, সেখানে আরেক ধরনের কাঁচি। রান্নাঘরের কাজের জন্য চাইলে অন্য ধরনের কাঁচিও পাবেন।

কাগজ কাটার কাঁচি
স্ক্রাফটের স্বত্বাধিকারী নোসিন সাদাফ কিরিগ্যামির অনেক কাজ করেন। কিরিগ্যামি, মানে কাগজ কাটার শিল্প। কাগজ কাটাকুটি করে কত কিছুই না বানানো যায়। কার্ড থেকে শুরু করে আস্ত একটা গয়নার বাক্স পর্যন্ত। অবশ্যই এসব কাজে কাঁচির প্রয়োজন আছে। নোসিন সাদাফ জানান, কাপড় কাটার কাঁচি যেমন ভারী আর বড় হয়, কাগজ কাটার কাঁচি ঠিক এর বিপরীত। হালকা ওজনের কাঁচি ব্যবহার করে কাগজ কাটতে সুবিধা। দোকানিরা জানান, কাগজ কাটার কাঁচি সাধারণত স্টেইনলেস স্টিলের হয়ে থাকে। একদম সাধারণ কাঁচি। নোসিন সাদাফ আবার জানালেন, ভিন্ন নকশার জন্য কাগজ কাটতে অনেক সময় জিগজ্যাগ কাঁচিও ব্যবহার করা হয়। ৫০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের কাঁচি পাওয়া যাবে বাজারে।

রসুই ঘরের কাঁচি
ছুরি-বঁটি ছাড়াও আজকাল রান্নাঘরে কাঁচি ঢুকে বসে আছে! হ্যাঁ, কাঁচি দিয়ে আপনি মাছ, মাংস, সবজি সব কাটতে পারবেন। একটা কাঁচির নকশা এমন-সবজি কাটার পাশাপাশি বোতলের ছিপি খুলতে পারবেন, ডিম ফুটো করতে পারবেন, মাছের আঁশ বাছতে পারবেন, বড় বাদামের খোসা বা জয়ফল ক্যাক করে ভেঙে নিতে পারবেন সহজে। সাধারণ একটা কাঁচি দিয়ে শুধু সবজি কাটতে পারবেন। সব ধরনের সবজি অবশ্য কাঁচি দিয়ে কাটা যায় না। পাতলা সবজিগুলো কাটা সহজ। কোনোটায় মাছের আঁশ বাছার ব্যবস্থা থাকে। তবে কুচি করে কাটার জন্য আলাদা আরেক কাঁচি আছে। জিগজ্যাগ কাঁচি দিয়ে সালাদের সবজি নকশা করতে পারেন। মাংস কাটার কাঁচি আলাদা। মুরগির হাড় কাটতে পারবেন এমন ধার আছে এসব কাঁচিতে। ১৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে রান্নার আগে কুটাবাছার কাঁচিগুলো পাবেন।

দরজি বাড়ির কাঁচি
ডিজাইনার জাবিন ইকবাল জানালেন, কাপড় কাটার কাঁচির ধরন একটাই। দৈর্ঘ্যে ছোট-বড় হতে পারে। তবে সুতা কাটার জন্য আলাদা কাটার আছে। ছোট কাঁচির চেয়েও ছোট এই কাটার। জাবিন ইকবালের পরামর্শে দরজি দোকানে ঢুঁ মেরে দেখা গেল বেশ ভারী লোহার কাঁচি দিয়ে দরজিরা কাপড় কাটেন। কাপড় কাটার কাঁচিগুলো প্রথমে বেশ বড়সড় থাকে। ধার দিতে দিতে ছোট হয়ে আসে। একপর্যায়ে ব্যবহারের যোগ্যতা হারায়। একই ধাতুর আরেকটু হালকা বা ছোট কাঁচি নিয়ে দরজিরা বসেন কাপড় সেলাইয়ের সময়। অল্পস্বল্প কাপড়ের টুকরা কেটে ফেলতে কিংবা জোড়া সুতা কাটতে ব্যবহার করেন এই কাঁচি। তবে ছোট্ট কাটারটা ব্যবহার করা হয় সাধারণত কাপড়ের সেলাই খুলতে। ভালো মানের কাপড় কাটার কাঁচির দাম শুরুই হয় ১২০০-১৫০০ টাকা দিয়ে।
