কথা, গল্প আর গানে আনন্দময় একটি বিকেল

আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে প্রথম আলোর ঢাকা কার্যালয়ের সব নারীর সঙ্গে বসেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে প্রথম আলোর ঢাকা কার্যালয়ের সব নারীর সঙ্গে বসেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

দিনটি ছিল তাঁদের জন্য বাধাহীন। টুকরো টুকরো গল্পের ঝুলি, ছোট-বড় অভিজ্ঞতা, জীবনের আনন্দ-বেদনার কথাগুলো নিঃসংকোচে বলছিলেন সবাই। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে প্রথম আলোর নারী কর্মীদের জন্য আয়োজিত ঘরোয়া আয়োজনের পুরোটাজুড়েই ছিল এমন আবহ। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের উপস্থিতিতে নারী কর্মীরা প্রাণখুলে কথা বলার পাশাপাশি নিজেদের দক্ষতা-যোগ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মানে দেখার প্রত্যাশাও জানান।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে গতকাল সোমবার কারওয়ান বাজারের সিএ ভবনে প্রথম আলোর ঢাকা কার্যালয়ের সব নারীর সঙ্গে বসেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। প্রথম আলোয় নিজেদের ভালো লাগা, প্রথম আলোর কাছে নিজেদের প্রত্যাশা, প্রথম আলোকে ঘিরে স্বপ্নের কথা বলেন নারী কর্মীরা।

উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর ঢাকা কার্যালয়ের সব নারী। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর ঢাকা কার্যালয়ের সব নারী। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ভাবি সমান, হই চৌকস, বদলাই নতুনে’। এই প্রতিপাদ্যের সঙ্গে মিল রেখে নারী কর্মীরা যাতে নিজেদের কাজ, ভাবনা, স্বপ্ন আর সংগ্রামের কথা সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান, সেটাই ছিল আয়োজনের মূল কথা। কারণ সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যেখানে নারী-পুরুষ সবাইকেই দক্ষতা-যোগ্যতার সমান প্রমাণ দিতে হয়। আর এটা করতে গিয়ে একজন নারীকে ব্যক্তিজীবন ও পেশাজীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার কঠিন লড়াইটি করতে হয়। নারীরা যেন সেই লড়াইয়ে জয়ী হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান, এই আয়োজন সেই শক্তিই জুগিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীনের সঞ্চালনায় অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে প্রাণোচ্ছল।

প্রথম আলোর ঢাকা কার্যালয়ে কর্মরত আছেন ৬১ জন নারী। আর সারা দেশে নারী কর্মীর সংখ্যা ৬৩। এই নারীদের নিষ্ঠা, একাগ্রতা প্রথম আলোর এগিয়ে যাওয়ার পথে অন্যতম শক্তি বলে মনে করেন সম্পাদক। অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে সব নারী কর্মীকে অভিনন্দন জানান তিনি। নিজের মায়ের গল্প শোনান। তাঁর ও তাঁর ভাইবোনদের সাফল্যের পেছনে মায়ের ভূমিকার কথা বলেন। তিনি বলেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, সুখে-দুঃখে, বিপদে মা ও বোনদের পাশে পেয়েছেন। গতকালের দিনটি তিনি উপস্থিত সব মা, বোন আর নারীর প্রতি উৎসর্গ করেন। এ সময় তিনি মাকে নিয়ে লেখা কবি শামসুর রাহমানের ‘কখনো আমার মাকে’ কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনান।

সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

নারী কর্মীরা ব্যক্তিগত জীবনে এবং কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার পথে কিছু প্রতিকূল অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তাঁরা মনে করেন, একজন নারীকে প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়; তা পারিবারিক জীবনেই হোক বা কর্মজীবনে হোক। নারীর গায়ের রং, তাঁর পোশাক, বৈবাহিক অবস্থান যেন তাঁর ব্যক্তি সত্তার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে কখনো কখনো। কিন্তু এই সবকিছুকে পেছনে ফেলে নারী এগিয়ে যান আপন শক্তিতে। এ সময় যাঁরা নতুন মা হয়েছেন, সন্তান নিয়ে তাঁরা তাঁদের লড়াইয়ের গল্পগুলো শোনান।

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শেখ সাবিহা আলম চকবাজার অগ্নিকাণ্ডে নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন। তিনি বলেন, চকবাজার অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে রাত ১২টার দিকে বাসা থেকে ঘটনাস্থলে চলে যান। রাতে বিভিন্ন হাসপাতালেও যান। একজন পুরুষ কর্মীর সমকক্ষ হিসেবেই তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন।

নিজেদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন নারী কর্মীরা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
নিজেদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন নারী কর্মীরা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

সঞ্চালক সুমনা শারমীনের কণ্ঠে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ কবিতার কিছু লাইন যেন সবার মাঝে অনুপ্রেরণা জাগায়। ‘মনেরে আজ কহ যে, ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্যরে লও সহজে’—কবিতার এই পঙ্‌ক্তিগুলো জীবনের জটিলতাকে যেন কিছুক্ষণের জন্য দূরে সরিয়ে রাখে।

অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শোনান বিজ্ঞাপন বিভাগের চন্দ্রিমা পোদ্দার, প্রথম আলো ডিজিটালের (ইংরেজি) সহসম্পাদক ফারজানা লিয়াকত ও জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শেখ সাবিহা আলম। বিনোদন বিভাগের প্রতিবেদক আদর রহমান কান চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। একা কান চলচ্চিত্র উৎসবে যান তিনি—যা অন্য দেশের সাংবাদিকদের খুবই অবাক করে। তবে দৃঢ়তার সঙ্গেই নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারার আনন্দের কথা জানান তিনি।

ধন ধান্য পুষ্প ভরা গানটির মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
ধন ধান্য পুষ্প ভরা গানটির মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

প্রথম আলোর পরামর্শক (বার্তা) কুররাতুল-আইন-তাহমিনা বলেন, যোগ্যতা প্রমাণ বা নিজেকে প্রমাণ—এটা সবার জন্যই সত্যি, সবাইকে করতে হয় নারী বা পুরুষ যে-ই হোক। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর কাছ থেকে কোনো অন্যায় আচরণ পেলে তা কেবল নারী হিসেবেই পাচ্ছি কি না, সেটাই বিবেচ্য। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এমন একটা দিন আসবে, যেদিন নারীদের সঙ্গে আলাদা করে বসতে হবে না।

সব শেষে নারীদের ফুল, বই ও নোটবুক উপহার দেন সম্পাদক। সমস্বরে ‘ধন ধান্য পুষ্পভরা’ গান গাইতে গাইতে শেষ হয় সম্পাদকের সঙ্গে প্রথম আলোর নারী কর্মীদের আনন্দময় একটি বিকেল।