কাঁচা ও পাকা আম সংরক্ষণ

১.
চৈতের কুয়া আমের ক্ষয়,
তাল তেঁতুলের কী–বা হয়॥
অর্থাৎ কুয়াশায় আমের বোল (মুকুল) নষ্ট হয়।
২.
আমে ধান তেঁতুলে বান॥
অর্থাৎ আম বেশি হলে ধানের ফলন হয় বেশি।
খনার এমন অনেক বচন প্রচলিত আছে গ্রামবাংলায়। শুধু আমের স্বাদ নেওয়াই নয়, বলা চলে প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামীণ জীবনের একটি অংশ ফলের রাজা আম। আর এই খনার বচন থেকে বাঙালি জীবনে আমের অবস্থান সম্পর্কে সহজেই কিছুটা অনুমান করা যায়। এমনকি বাংলার অনেক আচার–অনুষ্ঠানও আছে, যা আমকেন্দ্রিক।

সাধারণত বৈশাখ মাস থেকেই গাছে গাছে আম পাকতে শুরু করলেও মূলত জ্যৈষ্ঠ মাসেই পরিপূর্ণ স্বাদ পাওয়া যায় পাকা আমের। তবে আম এমনই একটি ফল, যার কাঁচা বা পাকা দুই স্বাদেরই কদর অনেক।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় ছয় হাজার বছরের পুরোনো ফল আম। অসাধারণ স্বাদ ও গন্ধের মিশেলের এ ফলের গাছকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবেও স্বীকৃতিও দেওয়া হয়েছে আমাদের দেশে। আম সারা বছর পাওয়া যায় না। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ তো করাই যাবে। এতে আমের স্বাদ কিছুটা কমবে।

কাঁচা ও পাকা দুই ধরনের আমই জ্যাম, জেলি বা আচার না বানিয়ে সংরক্ষণ করা যাবে। ফ্রিজে বরফ করে সংরক্ষণ করা গেলে একটু বেশি দিন খাওয়া যাবে। তবে বরফ না করেও বা ফ্রিজে না রেখেও কয়েক দিন পর্যন্ত আম ভালো রাখা সম্ভব বলে জানান রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন। এ ছাড়া আম সংরক্ষণের জন্য তাঁর দেওয়া আরও কিছু পরামর্শ জেনে নেওয়া যাক।

কাঁচা আম

দীর্ঘদিনের জন্য কাঁচা আম সংরক্ষণ করতে চাইলে ফুটন্ত পানিতে চার টুকরো করা আম ছেড়ে দিয়ে কয়েক মিনিট পর তুলে নিতে হবে। এবার ভালোমতো পানি শুকিয়ে বায়ুরোধক পাত্রে পাতলা পাতলা করে সাজিয়ে সংরক্ষণ করা যাবে।

অল্প কিছু দিনের জন্য আম সংরক্ষণ করতে চাইলে লবণ ও হলুদ মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন।
ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে না চাইলে প্রথমে রোদে শুকিয়ে ভালো মানের শর্ষের তেলে ডুবিয়ে রেখে আম অনেক দিন সংরক্ষণ করতে পারবেন।

আধা পাকা আম
আধা পাকা আম সংরক্ষণের জন্য খোসাসহ আম দুই টুকরো করে বায়ুরোধক পাত্রে রাখতে পারেন।

পাকা আম

পাকা আম কচলে নিয়ে বা কেটে ব্লেন্ডারে পাতলা মিশ্রণ তৈরি করে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়। তবে লম্বা সময় থাকলে স্বাদ ও ঘ্রাণ কমে যায়।

এ ছাড়া চালনিতে আমের মিশ্রণ ছেঁকে আঁশগুলো ভিন্ন করে ফেলে এটি সংরক্ষণ করা যায়। কারণ, এতে আমে পানির পরিমাণ কমে যায় এবং ডিপে দীর্ঘদিন তা ভালো থাকে। আর সাধারণ ফ্রিজে এটি কাচের বোতলে রাখলে চার থেকে পাঁচ দিন ভালো থাকে।

মনে রাখবেন

অনেক দিনের জন্য সংরক্ষণ করতে চাইলে ছোট ছোট প্যাকেটে রাখতে হবে যেন একবারেই শেষ হয়ে যায়। কারণ, বারবার ফ্রিজ থেকে বের করলে আম নষ্ট হয়ে যাবে এবং পুষ্টিগুণও কমে যাবে।

অনেকেই পাকা আম খোসাসহ বরফ করেন, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয় বলে জানান পুষ্টিবিদ শম্পা শারমিন। এভাবে আম সংরক্ষণ করলে আমে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে। কারণ, আমের পানির সঙ্গে খোসার মধ্যে থাকা পানিও যুক্ত হয়। এটি আম সংরক্ষণের খুবই অস্বাস্থ্যকর উপায়।