: বলো আমাকে, রহস্যময় মানুষ, কাকে তুমি সবচেয়ে ভালোবাসো? তোমার পিতা, মাতা, ভ্রাতা, অথবা ভগিনীকে?
: পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভগিনী—সবই আমার আছে। কিন্তু তাদের কাউকেই আমি অতটা ভালোবাসি না।
: কী বলছ, যুবক!
: কেমনে ভালোবাসব বলেন? বাবা তো আমারে সারাক্ষণই ঝাড়ির ওপর রাখেন। সকালে ঘুম ভাঙে তাঁর ঝাড়ি খেয়ে, ঘুমাতে যাওয়ার আগেও তা-ই। আর আম্মার কথা কীই-বা বলব। ভার্সিটিতে এতক্ষণ কী করি, বন্ধুদের সঙ্গে এত কিসের আড্ডা, হাতখরচের জন্য এত টাকা কিসে লাগে—এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমার অবস্থা হালুয়া টাইট। আর ঠিক বাসায় ফেরার আগমুহূর্তের প্যারা তো আছেই। ফোন দিয়ে বলবে, ‘৫ টাকার ধনেপাতা আর ৫ টাকার কাঁচা মরিচ নিয়ে আসিস তো।’ আপনিই বলেন, এই সব প্যারা যারা দেয়, তাদেরকে কি অনেক বেশি ভালোবাসা যায়?
: খুবই দুঃখের কথা, যুবক। তাহলে তোমার ভ্রাতা-ভগিনী?
: মানে ভাই-বোনের কথা বলছেন তো? উফ্, ওরা তো একেকটা পিস। আমার যে বড় ভাই, ওর কারণে আমি আজ পর্যন্ত কোনো ডিভাইস ফার্স্ট হ্যান্ড ইউজ করতে পারলাম না। আমার মোবাইল ফোন, ইয়ারফোন, ল্যাপটপ—যা দেখছেন, সব সেকেন্ড হ্যান্ড। আগে সে ইউজ করে, পরে পছন্দ না হলে আমারে দেয়। তার আলগা মাতবরির কথা না-হয় বাদই দিলাম। আর আমার ছোট বোনটা হইছে বদের বদ। সারাক্ষণ আমার পেছনে স্পাইগিরি করতে থাকে। ওর কারণেই আমার তিনটা রিলেশন ব্রেকআপ করতে হইছে।
: এটা সত্যিই বেশ কষ্টের, যুবক। আচ্ছা, তাহলে নিশ্চয়ই তুমি তোমার গার্লফ্রেন্ডকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো?
: পারতাম বটে ভালোবাসতে। কিন্তু আমার ওপর তার সারাক্ষণ সন্দেহ। ভালো কিছু করলেও সন্দেহ, খারাপ কিছু করলে তো কথাই নাই। এই ভ্যালেন্টাইনস ডের কথাই ধরেন। ভালোবেসে একটা কার্ড গিফট করেছিলাম। কিন্তু ভুল করে তার নাম লিখি নাই। কার্ড নিয়ে সে খানিকক্ষণ উল্টেপাল্টে দেখে সন্দেহের গলায় জানতে চাইল, ‘সত্যি করে বলো, এই কার্ড তুমি কার জন্য কিনেছ? এখানে আমার নাম নাই কেন? তাহলে কি তুমি অন্য কাউকে কার্ড দিতে গিয়ে পাত্তা পাওনি? সেই কার্ড নিয়ে এসেছ আমাকে দিতে!’ বলেন, এ রকম সন্দেহপ্রবণ গার্লফ্রেন্ডকে কি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা যায়?
: তা অবশ্য যায় না। আচ্ছা, বলো তবে, অদ্ভুত অচেনা মানুষ, কী ভালোবাসো তুমি?
: আমি ভালোবাসি আমার মোবাইল ফোন অপারেটরদের। আর তাদের অফার, এত্ত এত্ত অফারগুলারে।
: মোবাইল ফোন অপারেটরদের তুমি সবচেয়ে ভালোবাসো! কী বলছ তুমি আশ্চর্য মানুষ!
: ঠিকই বলছি। অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম, মোবাইল ফোন অপারেটরদের মতো আমাকে আসলে কেউ ভালোবাসে না, কেউ এত ভাবে না আমাকে নিয়ে। ওরা ভাবে বলেই ঘণ্টায় ঘণ্টায় আমাকে মেসেজের পর মেসেজ পাঠিয়ে ইনবক্সে অফারের পাহাড় বানিয়ে দেয়। কী করলে আমার খরচ কম হবে, কত খরচ করলে আমার কত লাভ হবে, টাকা দিয়ে কীভাবে ফ্রি টকটাইম, এসএমএস কিনতে পারব—এত কিছু কি আমার পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভগিনী বা গার্লফ্রেন্ড মিলে সারা জীবনে বের করতে পারত? না, পারত না। পারবেও না কখনো। তাই আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি মোবাইল ফোন অপারেটরদের।