পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে সুস্থ থাকার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা প্রয়োজন। রোজায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা নেই; বরং এই সময় বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ফেলাও সম্ভব। মনে রাখতে হবে, একজন নারীর দৈনিক দুই হাজার এবং একজন পুরুষের আড়াই হাজার ক্যালরির খাবার হলেই চলে। এর বেশি খাওয়ার অর্থ হলো মুটিয়ে যাওয়া।
গ্রীষ্মের তপ্ত দিনে দীর্ঘ সময় পানি ও খাবার ছাড়া থাকার কারণে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে। তাই সাহ্রি ও ইফতারে সেসব খাবার বেশি খেতে হবে, যেগুলোতে প্রচুর পানি রয়েছে। দীর্ঘ সময় পানাহার বন্ধ রাখার কারণে শরীরে সঞ্চিত চিনি বা শর্করা থেকে শক্তি পায়। তবে দেহে পানি সঞ্চিত থাকে না। শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে কিডনি প্রস্রাব উৎপাদন কমিয়ে দেয়। সারা দিনে শরীর পানি পায় না বলে সাহ্রিতে লবণযুক্ত খাবার একদমই খাওয়া ঠিক নয়। কারণ লবণ দেওয়া খাবার খেলে শরীরে দ্রুত পানির ঘাটতি দেখা দেয় এবং ঘন ঘন পিপাসা পায়। ইফতার ও সাহ্রিতে কী খাবেন, কী খাবেন না—সে সম্পর্কে এসব নির্দেশনা দিয়েছে ব্রিটিশ নিউট্রিশন ফাউন্ডেশন। আসুন, দেখে নিই কী কী খাবেন এই রোজার মাসে।
ইফতার
১. পানীয়—ইফতারের শুরুতেই পানি, চিনি ছাড়া টাটকা ফলের রস, স্মুদি ও দুধ পান করতে পারেন। এটি দ্রুত আপনার শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করবে। মনে রাখতে হবে চিনি যেন না থাকে পানীয়তে। দুধ কিংবা ফলে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, যা ক্ষতিকর নয়।
২. খেজুর—খেজুর ইফতারের ঐতিহ্য। এই স্বাস্থ্যকর শুকনো ফলে রয়েছে প্রচুর আঁশ। এ ছাড়া এতে আছে পটাশিয়াম, কপার ও ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ পদার্থ। এ ছাড়া কিশমিশ ও আলু বোখারাও রাখতে পারেন খাদ্যতালিকায়।
৩. ফল—মৌসুমি ফল যেমন আম ও আনারস এখন প্রচুর পরিমাণে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এসব ফল তাই রাখুন ইফতারে। পাশাপাশি মাল্টা, পেঁপেসহ নানা ধরনের ফলও খেতে পারেন। ফল সহজে হজম হয় এবং এটি শরীরে প্রচুর ভিটামিনও জোগায়।
৪. স্যুপ—আরব দেশগুলোতে ইফতারে স্যুপ খাওয়ার রেওয়াজ আছে। এটা খুবই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। মাংস, মটর, ডাল ও সবজি এসব দিয়ে তৈরি তরল খাবার সহজপাচ্য অথচ আমিষের ঘাটতি দ্রুত পূরণ করে।
৫. মূল খাবার—তরল খাবার আর ফলের পর চিড়া, দই, কলা খেতে পারেন। যাঁরা বাড়তি ওজনের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের উচিত ইফতারে মিষ্টি ও ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করা। সে জায়গায় অল্প ছোলা সেদ্ধ, মাছ ও সালাদ খেতে পারেন।
ইফতারের পর খাবার হজম হতে সময় দিন। এরপর হালকা ব্যায়াম করুন। সময় না পেলে তারাবির নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে হেঁটে যান, হেঁটে আসুন। রাতে যথাসম্ভব হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
সাহ্রি
১. ওটমিল—আঁশযুক্ত খাবার ওটমিল রোজাদারের শরীরে দীর্ঘক্ষণ ধরে শক্তি জোগায়। তাই সাহ্রি শুরু করতে পারেন ওটমিল দিয়ে। দুধ, কলা, আপেল বা পেঁপে দিয়ে ওটমিল খেতেও ভালো লাগবে।
২. সিরিয়াল—ওটমিলের বদলে বেশি আঁশযুক্ত সিরিয়ালও খেতে পারেন। সঙ্গে যোগ করতে পারেন ফল আর দুধ।
৩. শর্করা—সাহ্রিতে ভাত খেতে হলে অল্প খাওয়া উচিত। ভাতের বিকল্প হতে পারে লাল আটার রুটি, সঙ্গে মাছ, মুরগির মাংস, সবজি, ডাল। মনে রাখবেন লবণযুক্ত খাবার একেবারেই বাদ দেওয়া উচিত এই মাসে।
৪. দই—সাহ্রির খাবার শেষ করা উচিত দই দিয়ে। দই শরীরে ক্যালসিয়াম, আয়োডিন ও ভিটামিন বি সরবরাহ করে। পাশাপাশি এতে প্রচুর পানিও থাকে।
সূত্র: ব্রিটিশ নিউট্রিশন ফাউন্ডেশন