
১২ বছরের রনি কাজ করে চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানাসংলগ্ন পুরোনো জাহাজের সরঞ্জাম বিক্রির দোকানে। সেখানে বড় বড় পাম্প, মেশিন থেকে শুরু করে লোহার ভারী জিনিসপত্র রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে টানা আট-নয় ঘণ্টা কাজ করতে হয়। মাস শেষে রনি নিজের উপার্জন নিয়ে তুলে দেয় মা-বাবার হাতে।
রনির মতো আরও অন্তত ৫০ জন শিশু এই লোহা বিক্রির দোকানে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সঙ্গে জড়িত। শ্রম আইন অনুযায়ী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা নিষেধ। ১৪ বছরের নিচের শিশুদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ একেবারেই নিষিদ্ধ। কিন্তু ক্ষুধার কাছে উপেক্ষিত শ্রম আইন ও সচেতনতা। কারণ, এই শিশুদের আয়ের ওপর চলছে অনেক পরিবার।
পাহাড়তলী লোহার দোকানে কর্মরত আকাশ জানায়, তার বাবা অসুস্থ। বেশি কাজ করতে পারেন না। তাই তার আয়ের ওপর সংসারের খরচ নির্ভর করে। সে দৈনিক সাত-আট ঘণ্টা কাজ করে বলে জানায়।
নগরের আমবাগানের সেলিনা, জেবা, পুতুল, রাসেলরা স্থানীয় ইউসেফ স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করে। এসব শিশু-কিশোর প্রতিদিন কমপক্ষে ছয়-আট ঘণ্টা কাজ করে। সমাজসেবা অধিদপ্তর বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে শ্রমজীবী শিশুদের অধিকারের বিষয়টি দেখভাল করে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে অপরাজেয় বাংলাদেশ, ইউসেফসহ কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থা দেশের ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিয়ে কাজ করছে। অপরাজেয় বাংলাদেশ চট্টগ্রামে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে থাকে। এসব পথশিশুর বেশির ভাগই স্বাধীন শ্রমের সঙ্গে যুক্ত। ‘বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রম নিরসন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চালু করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন স্কুলে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রমিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি লেখাপড়ার সুযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্পটির প্রোগ্রাম সুপারভাইজার মো. ইয়াসির আরাফাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে ১০ হাজার শিশুশ্রমিক জড়িত। তারা জাহাজভাঙা থেকে শুরু করে লেদ মেশিনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় জড়িত। আমরা তাদের পাশাপাশি নিয়োগকর্তাদের সচেতন করছি, যাতে তাদের দিয়ে কাজ কম করানো হয়। কিন্তু এমন অনেক শিশু আছে, যাদের ওপর পরিবার নির্ভরশীল।’