ব্রাজিলের নাম শুনলে প্রথমেই মনে আসে ফুটবলের কথা। চোখে ভেসে ওঠে পেলে, জিকো, রোনালদো, নেইমারদের মুখ। তবে এবার দেশটি সংবাদের শিরোনাম হয়েছে ভিন্ন কারণে। আর সেটি হলো রিও ডি জেনিরোর স্মার্ট বস্তি! তাতে জড়িয়ে আছে ফুটবলও।
রিও ডি জেনিরোতে আছে প্রায় ৮০০ বস্তি, যেগুলোকে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় ফ্যাভেলা। এসব বস্তিতে পানি বা বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা বেশ কষ্টসাধ্য। দেশটিতে সূর্যের আলোর অভাব না থাকলেও মোট বিদ্যুতের মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ সৌরশক্তির মাধ্যমে পাওয়া যায়। এখন অবশ্য ব্রাজিলে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু রাতে ফুটবল খেলার জন্য বিদ্যুতের ব্যবহার এখনো সেখানকার বস্তিগুলোতে বিলাসিতার পর্যায়েই পড়ে।
তাই সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই ফ্যাভেলাগুলোর শিশু-কিশোরদের ফুটবল খেলা থেমে যেত। তবে ইচ্ছা থাকলে যে উপায় হয় সেটিই দেখিয়ে দিয়েছে মোরো দা মিনেইরা নামের একটি বস্তির বাসিন্দারা। কম মূল্যের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেখানে রাতের বেলায় জ্বালানো হয় ছয়টি ফ্লাডলাইট। আর তার আলোতেই চলে শিশু-কিশোরদের ফুটবল ম্যাচ।
এ কাজে সহায়তা করেছে জ্বালানিশক্তি নিয়ে কাজ করা পেভজেন নামের একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান। প্রথমে ওই বস্তিতে একটি কৃত্রিম মাঠ তৈরি করা হয়েছে।
মাঠের ওপর যখন খুদে খেলোয়াড়েরা খেলতে থাকে, তখন তাদের দাপাদাপিতে পায়ের চাপ পড়ে মাঠের নিচে বসানো বিশেষভাবে তৈরি টাইলসের ওপর। তড়িৎ-চৌম্বকীয় প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে তা থেকেই জেনারেটরে উৎপন্ন হয় বিদ্যুৎ। মূলত খেলোয়াড়দের ওজন থেকে পাওয়া শক্তি কাজে লাগিয়েই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। চলে ফ্লাডলাইট। তবে এ জন্য অবশ্যই খেলোয়াড়দের বুট পরে মাঠে নামতে হয়।
মোরো দা মিনেইরার বাসিন্দা, ১৫ বছরের কিশোর ম্যাথুস ডি সুজা ক্লদিয়ানো বলছিল, ফুটবল তার প্রিয় খেলা। এই কৃত্রিম মাঠটি তার জীবনই পাল্টে দিয়েছে। এখনকার মাঠে আর আগের মতো খানাখন্দ নেই। রাতে ফ্লাডলাইটের আলোতে খেলার অভিজ্ঞতাও ঠিক পেশাদার লিগের মতো।
পেভজেনের উদ্যোক্তা লরেন্স কেম্বাল-কুক বলেন, ‘আমরা এভাবে বিজ্ঞান ও জ্বালানির ব্যাপারে পুরো সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গিই পাল্টে দিয়েছি। আমরা বস্তির সব শিশুদের দেখিয়ে দিয়েছি যে খেলার শক্তি বাতিও জ্বালাতে পারে। এভাবে তাদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেছি মাত্র।’