গরম চা এখন চাই

>করোনাভাইরাসের এই সময়ে গরম চা পান কাজে দেবে, এমন বলা হচ্ছে। চায়ের নিজস্ব ভেষজগুণ রয়েছে। সঙ্গে লেবু, আদা বা লবঙ্গের মতো নানা উপাদান জুড়ে দিলে তো কথাই নেই। এখন সুস্থতার জন্য জরুরি চা পান। চা নিয়ে এবারের আয়োজন। সঙ্গে থাকছে কয়েক রকম চা তৈরির প্রণালি।
করোনার এই সময়ে নিয়মিত গরম চা পান করলে উপকার মিলবে। নকশার ফটোশুটে অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া খাচ্ছেন ভেষজ চা। ছবি: কবির হোসেন
করোনার এই সময়ে নিয়মিত গরম চা পান করলে উপকার মিলবে। নকশার ফটোশুটে অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া খাচ্ছেন ভেষজ চা। ছবি: কবির হোসেন

করোনাভাইরাস কাবু করে ফেলেছে পুরো বিশ্বকে। অথচ সেই ভাইরাসের বেশ খানিকটা দুর্বলতা কিনা সামান্য গরম পানিতে! করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে চা বা গরম পানি বেশ কার্যকর।

পৃথিবীর দুই শতাধিক দেশ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯ ফ্লু) সংক্রমণে এখন পর্যুদস্ত। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনো এর কোনো প্রতিষেধক কার্যকরভাবে উদ্ভাবন করতে পারেনি। ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাবিজ্ঞান আয়ুর্বেদে বিভিন্ন রকমের ফ্লু বা শ্বাসযন্ত্রের রোগ নিরাময় পদ্ধতির উল্লেখ করা আছে। তাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধ, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ে আয়ুর্বেদ বা ভেষজ উপাদান বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন অনেক চিকিৎসক। এরই মধ্যে চীন, ভারত ও শ্রীলঙ্কা ভেষজ উপাদান ব্যবহার ও নির্দেশনা অনুসরণ করে করোনা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়েছে। ভালো ফলাফলও পেয়েছে তারা।

বিষয়টি মাথায় রেখেই আয়ুর্বেদ অ্যান্ড ন্যাচারোপ্যাথি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ পরামর্শ দিচ্ছে সারা দিন উষ্ণ গরম পানি পান করার। পাশাপাশি তুলসী, দারুচিনি, আদা ও গোলমরিচ মিশ্রিত ভেষজ চা প্রতিদিন কয়েকবার পান করার কথাও তারা বলছে। এতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সহজ হতে পারে।

আপনার পছন্দ কোন চা

অনেকেরই অভ্যাস সকালে ঘুম থেকে জেগে বিছানায় বসে চা পান করার। বাড়িতে সকালের নাশতা বা বিকেলের আড্ডাতেও চা হয়ে উঠেছে বাঙালির আপ্যায়নের বিশেষ একটি উপকরণ। অফিসে কিংবা ক্লাসের ফাঁকে চা তো পান করতেই হয়।

এখন তো বাজারে বিভিন্ন ধরনের চা পাওয়া যায়। তবে আপনি যে চা-ই খান না কেন, তা একটি উদ্ভিদ থেকেই আসে, যার বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সাইনেসিস। বিশ্বে হাজারো ধরনের চা পাওয়া যায়। কোন স্থানে জন্মাচ্ছে, বছরের কোন সময়টাতে তোলা হচ্ছে আর প্রক্রিয়াজাত করার পদ্ধতিগত ভিন্নতার ওপর নির্ভর করে সেই চা কেমন হবে। প্রতিটি এলাকার চায়ের আছে তার নিজস্ব স্বাদ ও গন্ধ। স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও একেক ধরনের হয়ে থাকে।

চায়ে রয়েছে অনেক বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়। শুধু তা-ই নয়, চা রক্ত জমাট বাঁধতেও বাধা দেয়। লোহা শোষণের মাত্রা কমায় এই চা। এ ছাড়া চায়ে পটাশিয়াম ও জিংক তো আছেই। এখানে বলা হচ্ছে, বেশ কয়েক ধরনের চায়ের কথা। বিশ্বজুড়ে এগুলো খুবই জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যকর চা হিসেবে বিবেচিত।

হোয়াইট টি
হোয়াইট টি

হোয়াইট টি

এটাকে সবচেয়ে খাঁটি চা বলা হয়। অন্য সব চায়ের থেকে সবচেয়ে কম প্রক্রিয়াজাত করা হয়। সাদা চায়ের রং একেবারে হালকা এবং গন্ধও অনেক কম। মূলত এই চায়ের প্রাকৃতিক গন্ধ, স্বাদ ও মিষ্টতা উপভোগ করা হয়।

হারবাল টি
হারবাল টি

হারবাল টি

এটা একমাত্র চা, যেখানে ক্যামেলিয়া পরিবারের উদ্ভিদের কোনো পাতা থাকে না। এই ধরনের চা আবার তিন রকমের হয়—রুইবস টি, মেট টি ও ভেষজ উপাদানের মিশ্রণ। তৃতীয়টাতে খাঁটি ভেষজ উপাদান, ফুল ও ফলের মিশ্রণ থাকে।

ওলং টি
ওলং টি

ওলং টি

এর উচ্চারণটা আসলে উ লং টি। চীনের রেস্তোরাঁগুলোতে বেশি চলে এই চা। গোটা চীনে দারুণ জনপ্রিয়। এই চা অর্ধেক গাজন করেই প্রস্তুত করা হয়। অর্থাৎ, প্রস্তুত প্রণালির ভিত্তিতে কালো চা আর সবুজ চায়ের মাঝখানে এর অবস্থান। সবুজ চায়ের মতো এর আছে বহুমুখী গুণ। বিশেষ করে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর ওলং চায়ের লিকার পান করলে কোলেস্টেরল বাড়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। ওলং চা বাংলাদেশে পাওয়া যায়, তবে কিছুটা অপ্রতুল, দামও একটু বেশি।

ব্লুমিং টি
ব্লুমিং টি

ব্লুমিং টি

ব্লুমিং টি নামে এক ধরনের চা। অনেকে এটিকে ফুটন্ত ফুলের চা–ও বলে থাকে। আসলে এই চা বানানোর সময় ফুল যেন ফুটে যায়। এতে অনেক সময়ই নানা ধরনের ফ্লেভার জুড়ে দেওয়া হয়। অনেকে রোমান্টিক চা বলে থাকেন ব্লুমিং টিকে।

ব্ল্যাক টি
ব্ল্যাক টি

ব্ল্যাক টি

বেশির ভাগ মানুষ এই চা পান করে। ফুটন্ত পানিতে চা–পাতা দিয়ে কড়া করে বানানো হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, কালো চা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। তা ছাড়া এই চা নিয়মিত পান করলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে তা হতে হবে দুধ ছাড়া।

গ্রিন টি
গ্রিন টি

গ্রিন টি

বাংলাদেশের শহুরে জীবনে অভ্যস্ত অনেকেই এখন গ্রিন টিতে ঝুঁকছে। এটিও বেশ জনপ্রিয়। তাই বাজারে গ্রিন টি সহজলভ্য। গ্রিন টি ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি সুন্দর স্বাস্থ্য গঠনেও সাহায্য করে। তা ছাড়া এই চায়ে বিদ্যমান অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিশেষভাবে ত্বক ও খাদ্যনালির ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। এর পাশাপাশি দাঁতের ক্ষয় রোধ, মাড়ি মজবুত করা এর নিয়মিত কাজেরই একটি। শুধু তা-ই নয়, এই চা নিয়মিত পান করলে শরীরের মেদ কোষে গ্লুকোজ ঢুকতে পারে না।

গরম চায়ে চুমুক দেওয়ার অভ্যাস ভালো থাকতে সাহায্য করবে
গরম চায়ে চুমুক দেওয়ার অভ্যাস ভালো থাকতে সাহায্য করবে

তবে যে চা আপনার পছন্দের হোক না কেন, এখন সেটা পান করা আরও প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। কারণ, নিয়মিত গরম চা পান নতুন ভাইরাস করোনা থেকে আপনাকে অনেকাংশে সুরক্ষা দেবে। আর চায়ের সঙ্গে আমাদের তো আদা বা দারুচিনি মেশানোর অভ্যাস আছেই। সেটাও কাজে দেবে এই সময়ে।

লেখক: পুষ্টিবিদ