
গয়নার বাক্স নিয়ে বাঙালি নারীর আলাদা একটা আবেগ কাজ করে, যা দেখা যায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গয়নার বাক্স উপন্যাসে। এর কাহিনি নিয়ে অপর্ণা সেন নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র গয়নার বাক্স। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে গয়নার বাক্স নারীর কাছে অতি প্রিয়। সিনেমাটিতে দেখা যায়, নতুন প্রজন্মের হাতে এসে বদলে গেছে গয়নার বাক্সের রূপ। তবে সবাই চান গয়না রাখার বাক্সটা যেন সুন্দর হয়, নিরাপদে যেন থাকে গয়নাগুলো।
শখের গয়নাগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলে নষ্ট হয়ে যায়৷ বাইরের ধুলাবালুতে হারিয়ে যায় গয়নার উজ্জ্বলতা৷ এ জন্যই শখের গয়নাগুলো সাজিয়ে রাখতে গয়নার বাক্সের কোনো বিকল্প নেই৷ একটা সময় ছিল, যখন দাদি-নানিরা তাঁদের গয়নাগুলো সিন্দুকে সাজিয়ে রাখতেন৷ আকারে বিশাল সেই ভারী সিন্দুকের দেখা মেলা এখন ভার। তার বদলে কাঠ, বেত, চামড়া, কাগজসহ বিভিন্ন উপকরণের তৈরি গয়নার বাক্স এখন বেশ জনপ্রিয়। বাজারে এখন পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন উপাদান ও আকারের গয়নার বাক্স।
গয়নার যত রকম বাক্স

কাঠের তৈরি গয়নার বাক্স
একটা সময় গয়নার বাক্স বলতেই কাঠের তৈরি বাক্সকেই বোঝানো হতো। কাঠের তৈরি গয়নার বাক্সের সুবিধা হলো, এটি বেশ টেকসই। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কাঠে যাতে পানি না লাগে৷ এতে বাক্স নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কাঠের বাক্সে ফুলেল নকশাটা এখন বেশ চলছে৷ কোনো কোনো বাক্সে থাকে হাতি বা ময়ূরের আদল। কোনো কোনো কাঠের বাক্সে কড়ি, কাচ বা পাথরের কাজ করা থাকে।

চামড়া ও প্লাস্টিকের বাক্স
কাঠের পরই চামড়ার তৈরি গয়নার বাক্সের চাহিদা বেশি। অনেক সময় চামড়ার আবরণের ওপর হাতের কাজ করা থাকে। এতে চামড়ার আবরণ সুরক্ষিত থাকে। এর পাশাপাশি আজকাল বাজারে প্লাস্টিকের তৈরি গয়নার বাক্সও পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন রং ও ডিজাইনের বাক্সগুলো দেখতেও খুব উজ্জ্বল। এ ধরনের বাক্সের সুবিধা হলো, এটি সহজেই বহনযোগ্য। আর প্লাস্টিকের তৈরি বলে এটি অনেক হালকাও হয়।
বাঁশ ও বেতের বাক্স
বাঁশ ও বেতের তৈরি গয়নার বাক্সগুলো গোলাকার থেকে শুরু করে বর্গাকার, পিরামিড, লম্বাটে, দ্বিতল—নানা আকারের হয়ে থাকে । রং, নকশাসহ বিভিন্ন উপকরণের মিশ্রণে তৈরি এধরনের বাক্স বেশ নান্দনিক দেখায়। বাঁশ ও বেতের তৈরি এধরনের বাক্স মাঝারি থেকে বড় আকৃতির হয়ে থাকে। তাই একটু ভারী ও আকারে বড় গয়না এধরনের বাক্সে রাখা যেতে পারে। যেমন গলার হার, মালা কিংবা চুড়ি সহজেই এঁটে যাবে এখানে।

কাগজের তৈরি গয়নার বাক্স
একটু শক্ত কাগজ দিয়ে এধরনের বাক্স তৈরি করা হয়ে থাকে। নাকফুল কিংবা অনামিকার আংটি রাখার জন্য এধরনের বাক্স সুবিধাজনক। কেননা, এটি একেবারে ছোট থেকে শুরু করে যেকোনো মাপের হয়। আর এই বাক্সগুলোর ওপর বিভিন্ন ধরনের রঙিন কাগজের কারুকাজ চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। কোনোটায় আবার এমব্রয়ডারির কাজ করা থাকে।

টুকিটাকি
গয়না তো অনেক রকমের হয়ে থাকে। এ জন্য বাক্স কেনার সময় গয়নার আকার ও ধরন অনুযায়ী বাক্সটি বাছাই করার পরামর্শ দিলেন বসুন্ধরা শপিং মলের গয়নার দোকান জুয়েলারি ওয়ার্ল্ডের বিক্রেতা ফয়সাল মাহমুদ।
* চেইন বা নূপুর রাখার জন্য গোলাকৃতির বাক্স না কিনে লম্বাটে বাক্স কেনাই ভালো। এতে চেইন কিংবা পায়েল পেঁচিয়ে থাকবে না। আবার চুড়ি রাখার জন্য গোলাকার বাক্সই ভালো।
* সব ধরনের গয়না একই বাক্সে না রাখাই ভালো।
* মাটি, পুঁতি, ঝিনুক, পাট, বিডস কিংবা কড়ির তৈরি গয়না কাগজের বাক্সে রাখতে পারেন। আর মেটাল ও ইমিটেশনের গয়নাগুলো রেখে দিন প্লাস্টিকের বাক্সে।
* পাথর, অ্যান্টিক ও ইমিটেশনের গয়না বাক্সে রাখার সময় টিস্যু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন। এতে গয়না যেমন ভালো থাকবে, তেমনি ভালো থাকবে বাক্সটিও।
* চাইলে আপনি ছোট ছোট অংশযুক্ত গয়নার বাক্স কিনতে পারেন। এর ফলে একেকটি অংশে আপনি একেক ধরনের গয়না রাখতে পারবেন।
* মাসে একবার গয়নার বাক্স ও গয়না দুটোই পরিষ্কার করে রাখুন।

যেখানে পাবেন
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, নিউমার্কেট, আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেট, দোয়েল চত্বরে পাওয়া যাবে এধরনের গয়নার বাক্স। এ ছাড়া বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস যেমন যাত্রা, আড়ং, দেশী দশ, মাদলেও আপনি পেয়ে যাবেন বিভিন্ন গয়নার বাক্স।
গয়নার বাক্সটি কিসের তৈরি, তার ওপর দরদাম নির্ভর করবে। যেমন কাঠের ও চামড়ার তৈরি গয়নার বাক্সের দাম একটু বেশি হয়ে থাকে। এর দাম পড়বে ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা। বাঁশ ও বেতের ক্ষেত্রে পড়বে ২৫০ থেকে ৭০০ টাকা, কাপড়ের বাক্স ২০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর প্লাস্টিক কিংবা মেটালের বাক্স পাবেন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।