>

চলতি ধারায় মোটা, ঘন ভ্রুয়ের জয়জয়কার। ইচ্ছামতো এঁকেও নেওয়া যায়। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে প্রায়ই দেখা যায়, দেশ-বিদেশের নায়িকারাও সাজার সময় ভ্রু জোড়াকে একটু মোটা করেই এঁকে নিচ্ছেন। তবে পাতলা ভ্রুকে চর্চার মাধ্যমে কিছুটা মোটা করতে পারবেন—জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
ভ্রু ঘন করতে
রেড বিউটি পারলার অ্যান্ড স্যালনের রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, যাঁদের ভ্রু ঘন, তাঁরা সহজেই আই পেনসিল দিয়ে এঁকে নিতে পারেন। কিন্তু অনেকেরই ভ্রু পাতলা, চিকন আকৃতির হয়ে থাকে। বারবার প্লাক করার ফলে এ সমস্যা দেখা দেয়। এতে ভ্রুয়ের আকৃতিও নষ্ট হয়ে যায়। অতিরিক্ত চিকন ভ্রু আই পেনসিল দিয়ে আঁকতে গেলেও খুব একটা ভালো দেখায় না। তাই ভ্রু ঘন করার জন্য মেনে চলতে পারেন বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপায়।
বিভিন্ন ধরনের তেল
জলপাই, ক্যাস্টর, বাদাম এবং নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে ভ্রুতে মালিশ করতে পারেন। এই প্রতিটি তেলেই রয়েছে ভিটামিন ই, যা ময়েশ্চারের কাজ করবে। এমনকি শুধু ক্যাস্টর অয়েল ভ্রুতে মালিশ করলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এমনিতেই সেটি ঘন হয়ে উঠবে। চাইলে চোখের পাপড়িতেও লাগাতে পারেন এই তেল। প্রতি রাতে কটন বাডে অল্প তেল নিয়ে লাগিয়ে রাখুন। সকালে উঠেই ধুয়ে ফেলুন।
মেহেদি গুঁড়া
এ ছাড়া বাজারে যে মেহেদি পেস্ট পাওয়া যায়, সেটিও দিতে পারেন। তবে এটি একবার ব্যবহার না করে দু-তিনবার ব্যবহার করুন। কেননা এতে ভ্রুতে গাঢ় রং আসবে।
কৃত্রিম উপায়ে ঘন ভ্রু
* কাজল বা মাসকারা দিয়ে ভ্রু আঁকা ছাড়াও বাজারে আইব্রো ফিলার পাওয়া যায়। এটি একধরনের কাজল বা আই পেনসিলের মতোই। ভ্রুয়ের প্রকৃত রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ফিলারে বেছে নিন। ফিলার কীট ছাড়াও ছোট ব্রাশে একটু গাড় রঙের কালার শেড নিয়ে ভ্রুতে লাগতে পারেন।
* গাঢ় শেডের ডাস্ট পাউডার দিয়েও ভ্রু এঁকে নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে গাঢ় বাদামি কিংবা কালো রংই ভালো মানায়। বাজারে শুধু আইব্রো আঁকার মেকআপ কীট পাওয়া যায়।
* ভ্রু জোড়া আঁকার ক্ষেত্রে শুরুটা করুন একদিক থেকে। যাদের ভ্রু অতিরিক্ত পাতলা, তারা প্রথমেই নির্দিষ্ট আকারে ভ্রু হালকা করে এঁকে নিতে পারেন। এরপর ডাস্ট পাউডার কিংবা আইপেনসিল দিয়ে পুরো স্থানটা ভরাট করে ফেলুন। সব শেষে কটন বাড দিয়ে ভ্রুয়ের চারপাশ একটু মুছে নিন, যাতে কালো রং ছড়িয়ে না যায়।
ভ্যাসলিনের ব্যবহার
অনেকেরই ত্বক অনেক তৈলাক্ত হয়ে থাকে। তারা চাইলে তেলের পরিবর্তে সামান্য ভ্যাসলিনও ব্যবহার করতে পারেন। কেননা এটি ময়েশ্চারের পাশাপাশি কন্ডিশনারের কাজ করে। এ ক্ষেত্রে দিনে দুই থেকে তিনবার আঙুলের ডগায় ভ্যাসলিন নিয়ে ভ্রু মালিশ করে নিন। বিশেষ করে যেদিকে ভ্রু অতিরিক্ত পাতলা, সেখানে ভালো করে মালিশ করুন।
কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখুন
* বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি বলেন, অনেক সময় ভ্রুয়ের ত্বকে ঘাম, মৃত কোষ জমে যায়। অনেকের আবার ভ্রুয়ের কাছাকাছি ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। ফলে নতুন ভ্রু গজাতে পারে না। সে ক্ষেত্রে নরম টুথব্রাশ পানিতে ভিজিয়ে ভ্রু জোড়া আঁচড়ে নিতে পারেন। ফলে মৃত কোষ সহজেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
* ভ্রু সম্পূর্ণ গজানো ছাড়া প্লাক না করাই ভালো। অন্তত মাসে একবার ভ্রু প্লাক করার পরামর্শ দেন শারমিন কচি। তিনি জানান, এতে ভ্রুয়ের আকৃতি নষ্ট হয় না। অবশ্য অনেকের ভ্রু দ্রুত গজিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ঘরে বসে চিমটা দিয়ে নিজেই কিছুটা প্লাক করে রাখতে পারেন। পরবর্তীকালে সম্পূর্ণ ভ্রু গজালে পারলারে প্লাক করে নিন।
* ভ্রু প্লাক করার সময়ে নিজ চেহারার আকৃতি, ভ্রুয়ের ঘনত্ব লক্ষ রাখুন। অনেকেই ভি আকৃতির ভ্রু রাখেন। আবার অনেকেই সেমি-সার্কেল আকারে। কেউ আবার ভ্রুর মাঝখানের অংশটুকু রেখে দেন। নিজেই লক্ষ করুন আপনাকে কোন আকৃতিতে বেশি মানাচ্ছে। তবে ভ্রুয়ের ক্ষেত্রে নিজের প্রকৃত আকৃতিটাই রাখার পরামর্শ দেন শারমিন কচি। কেননা এতে ভ্রুর একটা নির্দিষ্ট আকৃতি বজায় থাকে।
* প্লাক করার পর অনেকেরই অ্যালার্জি, র্যাশের সমস্যা দেখা দেয়। সেসব স্থানে বরফের টুকরো লাগাতে পারেন। প্লাক করার সুতা অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে। নয়তো সুতায় জমে থাকা ধুলোবালি থেকেই এই র্যাশ এবং অ্যালার্জি হতে পারে।
* অনেক সময় মাথার ত্বকে অতিরিক্ত খুশকি কিংবা ফাঙ্গাস থেকেও ভ্রু কমে যায়। এমনকি ভ্রু এবং চোখের পাপড়িতেও খুশকি জন্মাতে পারে। এ ধরনের চর্মরোগকে সাধারণত অ্যালোপেশিয়া অ্যারিয়েটা বলা হয়। এ জন্য অল্প সময়ের মধ্যেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
* প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি বা তরলজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। সেই সঙ্গে খাদ্যতালিকায় জিংক ও ক্যালসিয়ামও রাখা চাই।
দুধ এবং সামান্য লেবু
তুলোর ছোট বল দুধে ডুবিয়ে সেটি ভ্রুতে লাগান। ২০ থেকে ৩০ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। এরপর লেবুর রস মালিশ করে আবারও ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
দরদাম
আইব্রো আঁকার ফিলার, মাসকারা, শেড কিংবা কেক, ডাস্ট পাউডার আপনি যেকোনো মার্কেটেই পেয়ে যাবেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আই পেনসিলের দামটাও পড়বে বিভিন্ন। ১০০ থেকে ১৪৫০ এর মধ্যে বিভিন্ন রঙের আইব্রো শেড কিনে নিতে পারেন।