ঘুরে দাঁড়ানো মারজিয়া

মারজিয়া আক্তার
মারজিয়া আক্তার

দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলছে। মারজিয়া আক্তার তখন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ভালো শিক্ষার্থী হিসেবে এরই মধ্যে সুনাম কুড়িছেয়ে স্কুলে ও পরিবারে। রাত ১১টা পর্যন্ত পড়াশোনা করে মারজিয়া সবে ঘুমিয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ তীব্র জ্বালাপোড়া মারজিয়ার মুখে।
ঘরের আলো জ্বালতেই দেখা গেল অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে মারজিয়া। অ্যাসিড ছড়িয়ে পড়েছে মুখের নিচের অংশ থেকে গলা পর্যন্ত। এরপর এক বছর ধরে ঢাকায় অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে। তবে পড়াশোনা ছেড়ে থাকতে পারেনি। হাসপাতালের বিছানায় বসেই পড়াশোনা করেছে।
কীভাবে ঘটল এমন দুর্ঘটনা সেটা মারজিয়ার মুখেই শোনা যাক, ‘বাবার সঙ্গে তখন জমিজমা নিয়ে বিবাদ চলছিল এক প্রতিবেশীর। সেই সময়ে পরীক্ষার কারণে রাত জেগে পড়াশোনা করতাম। ঘটনার রাতেও ১১টা পর্যন্ত পড়েছি। এরপর ঘুমিয়ে পড়ি। জানালা খোলা ছিল। হঠাৎ দেখি চোখ-মুখে পানির মতো কিছু পড়ল, অমনি জ্বালাপোড়া শুরু হলো।’ প্রথম দিকে নিজেকে নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা হলেও পরিবারের অুনপ্রেরণা তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। মারজিয়া বলেন, ‘বড় বড় মানুষ আমাকে তখন উৎসাহ দিতেন। আস্থা পেতাম। তাই ইচ্ছে ছিল, যেভাবেই হোক পড়াশোনাটা শেষ করব।’
গাজীপুরের মেয়ে মারজিয়া ২০০৬ সালে এসএসসি পাস করেন কাপাসিয়া উপজেলার সূর্যবালা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে। উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েই অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্ট সহায়ক তহবিলের শিক্ষাবৃত্তি পান। ২০০৯ সালে শরীফ মমতাজউদ্দিন আহমেদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার পাশপাশি আবেদন করেন প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়। নিয়োগ পরীক্ষায় নিজের মেধার পরিচয় দিয়ে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে চাকরিতে যোগ দেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে। এখন তিনি কাপাসিয়ার টোক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ২০১২ সালে মারজিয়ার বিয়ে হয় নিজের গ্রামেরই এস এম লাবিবের সঙ্গে। তিনি নামিলা আনসারিয়া কামিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক। মারজিয়া বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে আমার স্বামী ও তার পরিবার আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে। আগে থেকেই চেনাজানা থাকায় নিজেও স্বস্তি পাই। স্বামীর উৎসাহে শিক্ষকতার পাশপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পড়ছি। এখন তো আমার মনে হয়, কোনো বাধাই ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। একজন মানুষের নিজের ইচ্ছাই তার সবচেয়ে বড় শক্তি।’