চাপ সামলানোর টোটকা

চাপ সামলিয়ে এগোতে হলে মাথা ঠান্ডা রেখেই বুঝে নিতে হবে চারপাশে টগবগিয়ে ফুটতে থাকা পানি আর আপনার নিজের রসায়নটা। প্রতীকী ছবি।
চাপ সামলিয়ে এগোতে হলে মাথা ঠান্ডা রেখেই বুঝে নিতে হবে চারপাশে টগবগিয়ে ফুটতে থাকা পানি আর আপনার নিজের রসায়নটা। প্রতীকী ছবি।

ফুটন্ত পানিতে ডিমের কোমল কুসুম শক্ত হয় আর শক্ত আলু সিদ্ধ হয়ে নরম হয়ে যায়। আলাদাভাবে খেয়াল না করলেও দৈনন্দিন জীবনের এই জ্ঞান আমাদের সবারই আছে। কিন্তু চারপাশের এমন অনেক ঘটনাই আমরা লক্ষ করি না। চাপে পড়লে বেসামাল হয়ে পড়ি। চাপ সামলানোর উপায় খুঁজে পাই না। কিন্তু চাপ সামলিয়ে এগোতে হলে মাথা ঠান্ডা রেখেই বুঝে নিতে হবে চারপাশে টগবগিয়ে ফুটতে থাকা পানি আর আপনার নিজের রসায়নটা।


এই কথা কমবেশি সবার জীবনেই সত্য। আর এটাও সত্যি কথা যে, একটা ম্যাচে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে ঘায়েল করে ফেলার মতো করেই জীবনের সব চাপ সামলে ফেলা যাবে না। প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যেও নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ না হারিয়ে চাপ সামলানোর জন্য এই পরামর্শগুলো মেনে চলতে পারেন।

উৎস খুঁজে বের করুন

যেকোনো পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ সামলানোর প্রথম পদক্ষেপটা হলো চাপের উৎসটা খুঁজে বের করা। শুনতে সহজ মনে হলেও কাজটা কিন্তু সহজ নয়। কাজের সময়সীমাটাই অনেক সময় চাপের বড় কারণ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আপনার মনঃসংযোগ, চিন্তা পদ্ধতি বা আচরণও হতে পারে এই চাপের আসল কারণ। নিজেকে কিছু প্রশ্ন করে বিষয়টা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করুন। শেষ কবে আপনি একটু ছুটি নিয়েছিলেন? এমন চাপকে কি আপনি কাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করেন, নাকি আপনার ব্যক্তিজীবনের অন্য কোনো বিষয়ই আসলে এই চাপের প্রধান উৎস? এমন চাপ কি আপনার চারপাশের মানুষজনের কারণে সৃষ্ট বলে মনে করেন, নাকি আপনার ব্যক্তিত্ব ও জীবনযাপনের ধরনের কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন উত্তর পেয়েও যেতে পারেন।

ভালো করে শুনুন

আপনি যতটা ভাবেন আসলে আপনি ততটা মনোযোগী শ্রোতা নাও হতে পারেন! কারণটা হয়তো খুবই সাধারণ। আপনি একটা বিষয় শুনতে শুনতেই হয়তো পুরোটা না শুনেই সেটা সমাধানের জন্য বাগড়া দিয়ে বসেন। কিন্তু কখনো কখনো এমন কঠিন চাপের সময়ে সবচেয়ে বেশি যে কাজটা জরুরি তা হলো ভালো করে শোনা। অন্যের কথা শোনার মধ্য দিয়ে হয়তো পরিস্থিতি থেকে আপনার নিজের বিচ্ছিন্নতা কেটে যেতে পারে। আশপাশের মানুষদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার মধ্য দিয়ে তাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্কও ভালো হয়ে যেতে পারে। হয়তো এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে পরিস্থিতির চাপ সামলানোর সূত্রটাও।

প্রত্যাশা থামান

চিন্তা করেও কোনো কুল-কিনারা করতে না পারার সমস্যাকে অনেকেই চিহ্নিত করেন ‘চিন্তার ফাঁদ’ হিসেবে। অনেক সময় আমাদের চিন্তা ঘুরে ফিরে এক জায়গাতেই আটকে থাকে। আপনি হয়তো ধরেই নিয়েছেন, আপনাকে যারা গুরুত্ব দেন তাঁরা তো আপনাকে বুঝবেনই। আর ব্যাপারটা যেন এমনই যে, আপনি কি চিন্তা করছেন, কি ভাবছেন সেটা বাকি সবাই বুঝে বসে আছে! এমন প্রত্যাশাগুলো ছাড়ুন। এমন হলে শুধু কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে চাপে পড়াই নয় আপনার আশপাশের মানুষদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নিয়েও টেনশন তৈরি হতে পারে। মুখটা খুলুন, শান্তভাবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলুন। কার্যকর যোগাযোগ গড়ে তুলুন। দেখবেন ধীরে ধীরে চাপ কমে যাচ্ছে।

দৃষ্টিভঙ্গি বদলান

অফিসেই হোক কিংবা ঘরে। কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে থাকুন, এবার দূরের কিছুর দিকে নতুন করে তাকান। ভালো করে দৃষ্টি মেলে দেখলে অধরা অনেক কিছুই ধরা দিতে পারে আপনার চোখে। ঠিক এভাবেই পরিস্থিতির ভেতর থেকে কিছুটা সময়ের জন্য নিজেকে সরিয়ে নিন। নতুন দৃষ্টি দিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করুন। কেবল নিজেরটা নয়, অন্যরা বিষয়টিকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন সেটাও বোঝার চেষ্টা করুন। আপনি নিজেও হয়তো একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পেয়ে যেতে পারেন। আর তা থেকেই খুলে যেতে পারে কঠিন চাপের এই পরিস্থিতির জট।

আশাবাদী হোন

আপনি কি ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন যে, এই অবস্থা আর বদলাবে না! এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে আপনার আর মুক্তি নেই! এমন ভাবনা থামান। সবচেয়ে খারাপটা ভেবে আপনার কী লাভ হচ্ছে? বরং ভাবুন যে, অন্য আরও কত কারণে আরও কত খারাপ পরিস্থিতি হতে পারতো! মনে রাখবেন, একটা দরজা বন্ধ হলে অন্য কোনো না কোনো দরজা আপনার জন্য খুলে যাবে। জীবনে পরিবর্তন আসবেই, পরিবর্তনটা মেনে নেওয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আশা হারাবেন না, আশাই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।