কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে বসতি স্থাপন চলছেই। গত চার মাসে দুই শতাধিক নতুন বসতি স্থাপন করা হয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, লোকবলসংকটের কারণে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে ছিন্নমূল লোকজন এসে পাহাড়ের সংরক্ষিত বনভূমিতে আশ্রয় নেয়। পরে স্থানীয় অনেকেও পাহাড় কেটে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করে। ইতিমধ্যে অবৈধভাবে বসবাসকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ৪০ হাজার। সর্বশেষ গত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার মাসে কালারমারছড়া, হোয়ানক, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর ইউনিয়নের ২২টি স্থানে পাহাড়ের চূড়ায় নতুন করে দুই শতাধিক বসতি স্থাপন করেছে স্থানীয় লোকজন।
অভিযোগ রয়েছে, বনভূমি দখল করে বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলি এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেন অভিযোগ করেন, গত চার মাসে এলাকার পাহাড় কেটে স্থানীয় লোকজন নতুন করে ২০টি বসতি স্থাপন করেছে। এ বিষয়ে বনকর্মীদের জানালেও কোনো কাজ হয়নি।
জানতে চাইলে চালিয়াতলি এলাকার পশ্চিমে পাহাড়ি এলাকায় বসতি স্থাপনকারী মোহাম্মদ কলিম উল্লাহ বলেন, ‘গত জুন মাসে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে আমাদের ধলঘাটার সরইতলার বসতবাড়ি পানিতে ভেসে গেছে। উপায় না দেখে সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমিতে এসে আশ্রয় নিয়েছি।’
কালারমারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মির কাসেম চৌধুরী বলেন, পরিবেশ ও ঝুঁকি সম্পর্কে এলাকার জনগণ সচেতন না হওয়ায় পাহাড়ে বসতি স্থাপন করা থেকে তাদের বিরত রাখা যাচ্ছে না। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উপকূলীয় ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রশিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন না করার জন্য ইতিমধ্যে স্থানীয় লোকজনকে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এতে তেমন কাজ হয়নি।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, উপজেলার কালারমারছড়া, হোয়ানক, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর এলাকায় বন বিভাগের ১৮ হাজার ২৮৬ একর সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার একর বনভূমি অবৈধ দখলে চলে গেছে।
বন বিভাগের মহেশখালীর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুল হক বলেন, সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য লোকবল চেয়ে ইতিমধ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তিনি জানান, মহেশখালীতে ৬০ জন বনকর্মীর স্থলে আছেন মাত্র ১৮ জন। লোকবলসংকটের কারণে নতুন করে অবৈধ বসতি স্থাপন ঠেকানো যাচ্ছে না।