রেড ক্রিসেন্টের ‘সাইক্লোন-কোমেন অপারেশন ২০১৫’ প্রকল্প
ছবি জালিয়াতি, বন্যাদুর্গতদের টাকা তুলে নিল প্রতারক চক্র
আছদ আলী (৬০)। কক্সবাজারের পেকুয়ার উজানটিয়া ইউনিয়নের পেকুয়ার চর গ্রামের বাসিন্দা। অাগস্টের বন্যায় ধসে পড়েছে মাথা গোঁজার ঠাঁই মাটির ঘরখানা। পলিথিনের ছাপরা ঘরে থাকছেন পরিবারের চার সদস্য নিয়ে। ফলে বন্যাদুর্গত হিসেবে অর্থসহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয় তাঁর। কিন্তু এখনো টাকা পাননি তিনি। অথচ তাঁর নামে টাকা তোলা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্টের হিসাবে তিনি প্রথম কিস্তির তিন হাজার টাকা পেয়েছেন।
শুধু আছদ আলী নন, এ রকম ৩৯ জনের নামে টাকা তোলা হয়েছে। তাঁরা কেউ-ই টাকা পাননি। সম্প্রতি দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়ার সময় এই ঘাপলা ধরা পড়ে রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তাদের চোখে।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকর্তারা জানান, নাম-ঠিকানা ঠিক রেখে এই ৩৯ জনের ছবির স্থলে অন্য ছবি লাগিয়ে টাকা তোলা হয়েছে।
আছদ আলী বলেন, ‘নাম লিখে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা কোনো টাকা পাইনি। এখন শুনছি টাকা কারা নাকি তুলে নিয়ে গেছে।’
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সূত্র জানায়, ‘সাইক্লোন-কোমেন অপারেশন ২০১৫’ প্রকল্পের আওতায় পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত ২০০ জনকে দুই কিস্তিতে নয় হাজার টাকা করে ১৮ লাখ টাকা অর্থসহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। ইতিমধ্যে কোরবানির ঈদের আগে ওই ২০০ জনকে প্রথম কিস্তির তিন হাজার টাকা করে নগদ বিতরণ করা হয় ইউপি কার্যালয়ে। একই দিন দ্বিতীয় কিস্তির ছয় হাজার টাকার চেকও দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩৯ জন প্রকৃত উপকারভোগী তাঁদের অর্থসহায়তা পাননি। জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি পাল্টে (প্রথম কিস্তির) তিন হাজার টাকা করে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। ১৮ অক্টোবর দ্বিতীয় কিস্তির ছয় হাজার টাকা তোলার জন্য জনতা ব্যাংকের পেকুয়া শাখায় গেলে প্রকৃত উপকারভোগীরা ব্যাংকে আসল পরিচয়পত্র নিয়ে হাজির হন। তখন িবষয়টি ধরা পড়ে।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজে গতি ও স্বচ্ছতা আনতে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, সদস্য ও চৌকিদারদের সহায়তা নিয়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকাটি তৈরি করা হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, সেখানেই দুর্নীতি হয়েছে।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ছবি পাল্টানোর বিষয়টি দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়ার সময় ধরা পড়ে। জালিয়াতি করা ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজন দ্বিতীয় কিস্তির চেক না নেওয়ায় তাঁদের স্থলে সাতজন প্রকৃত উপকারভোগীকে চেক বিলি করা হয়েছে। অন্য ৩২ জনের বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাকে টাকা ছাড় না দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। ভুয়া ৩২ জনের চেক বাতিল করে চূড়ান্ত তালিকার প্রকৃত ৩২ জনকে দ্বিতীয় কিস্তির চেক প্রদান করা হবে।
প্রথম কিস্তির যে তিন হাজার টাকা করে তাঁরা তুলে নিয়েছেন, ওই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ জালিয়াতির শিকার নাজমা সুলতানা, আবুল কাশেম, জকির আলম, আবদুস শুক্কুর, জাহান আরা বেগম ও মোহাম্মদ আলম অভিযোগ করেন, ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও চৌকিদারেরা মিলে জালিয়াতি করে ছবি পাল্টে প্রথম কিস্তির টাকা তুলে নিয়েছেন। তাঁরা জালিয়াতির বিচার চান।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শাহ জামাল বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের দুজন টাকা পাননি। অথচ তাঁদের নামে টাকা তোলা হয়েছে।’ এ জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়ী করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উজানটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী ওই জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানান। চেয়ারম্যান বলেন, ‘চূড়ান্ত তালিকা করেছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকর্তারাই। ওই তালিকায় আমার সই নেই। পরিচয়পত্র জালিয়াতি কারা করেছে, সংস্থাটির লোকজনই ভালো বলতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থার লোকজন আমার কাছ থেকে ছবির ব্যক্তি আসল কিনা তা যাচাই করে সত্যায়ন নেননি। সত্যায়ন নিলেই হয়তো দোষ আমার ওপর আসত।’