ছাদের বাগানে বাজিমাত

পটিয়ার মুন্সেফ বাজার এলাকায় বাড়ির ছাদে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত পারভীন আক্তার। ‘ছাদে ফল-বাগান সৃজনের’ কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় বৃক্ষরোপণ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি l প্রথম আলো
পটিয়ার মুন্সেফ বাজার এলাকায় বাড়ির ছাদে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত পারভীন আক্তার। ‘ছাদে ফল-বাগান সৃজনের’ কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় বৃক্ষরোপণ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি l প্রথম আলো

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার মুন্সেফ বাজার এলাকায় মহাসড়ক ঘেঁষে পারভীন আক্তারের তিনতলা বাড়ি। বাড়ির সামনে আসতেই চোখ আটকে যায়। আস্ত বাগান মাথায় নিয়ে যেন দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটি। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে এলে নিজের চোখকেও বিশ্বাস হয় না। এ যে ছাদের ওপর রীতিমতো উদ্যান!
পটিয়ার মানুষজনের কাছে পারভীন আক্তার পরিচিত নাম। লোকজন তাঁকে পারভীন ভাবি নামেই চেনে। পটিয়ার নারী জাগরণ সংস্থার সভানেত্রী তিনি। আশির দশক থেকে নির্যাতিত নারীদের সহায়তা দিয়ে আসছেন। এ পর্যন্ত নারীদের পক্ষে কয়েক হাজার মামলা পরিচালনা করেছেন। কেবল তা-ই নয়, নির্যাতিত ও দুস্থ নারীদের স্বাবলম্বী করতে সেলাই, বুটিক-বাটিক ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণও দিয়েছেন তিনি। কেবল পটিয়া নয়, পত্রিকা ও টেলিভিশনের কল্যাণে তাঁর এই কর্মকাণ্ডের খবর ছড়িয়েছে সারা দেশে। তবে এবার অন্য কারণে আবার আলোচনায় এলেন তিনি। ছাদে ফলের বাগান করে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। গত ১৮ জুন কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ‘ছাদে ফল-বাগান সৃজনের’ কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁর হাতে জাতীয় বৃক্ষরোপণ পুরস্কার তুলে দেয়। জাতীয়ভাবে তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন।

বাগানের গাছে নানা ফল ও  ফুল l প্রথম আলো
বাগানের গাছে নানা ফল ও ফুল l প্রথম আলো

১১ জুলাই ছাদের বাগান দেখতে যাওয়া হয় তাঁর বাড়িতে। বাড়ির আঙিনাজুড়ে নানা জাতের ফুলের গাছ। সিঁড়িঘর এবং প্রতিটি তলার বারান্দায় টবে গাছ ও মাটির হাঁড়িতে পাখির বাসাও দেখা গেল। তবে চোখ জুড়িয়ে যায় ছাদে প্রবেশ করতেই। প্রায় দুই হাজার বর্গফুটের ছাদজুড়ে সিমেন্টের টবে শোভা পাচ্ছে নানা জাতের গাছ। ফল এসেছে ড্রাগন, পেয়ারা ও আমগাছে। পারভীন বলেন, তাঁর ছাদের বাগানে ৫০ প্রজাতির ১৩০টি গাছ আছে।
পারভীনের চিকিৎসক স্বামী কে আকতার সরকারি চাকরি ছেড়ে ১৯৭৪ সালে চলে আসেন পটিয়ার পৈতৃক বাড়িতে। তখন থেকেই বাগান করার নেশা পরভীনের। দোচালা মাটির ঘরের পেছনে গরুর খামার ও সবজির বাগান করেন তিনি। বাড়ির চারপাশে লাগান নারকেল, সুপারিসহ নানা জাতের গাছ। এরপর ১৯৯০ সালে পুরোনো মাটির ঘর ভেঙে তিনতলা পাকা ভবন তৈরির পর ছাদে বাগান করা শুরু করেন। শুরুতে টিনের ড্রামে গাছ লাগাতেন। এরপর সিমেন্ট দিয়ে স্থায়ী টব তৈরি করে সেখানে পেয়ারা, আম, লেবুসহ নানা ফল ও ফুলের গাছ লাগান। এখন পরিবারের ফল ও সবজির চাহিদার পুরোটাই মিটছে ছাদের বাগান থেকে। গাছে কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দেন না বলে তাঁর উৎপাদিত ফল বিষমুক্ত।
পারভীন বলেন, তাঁর বাগানে দেশি-বিদেশি ফলের মধ্যে রক মেলন, ড্রাগন, আঙুর, লাল জামরুল, বারোমাসি আম, আম্রপালি, মধু পেয়ারা, কাজি পেয়ারা, কাঞ্চননগরের পেয়ারা, লটকন, বারোমাসি লেবু, ডালিম, আপেল কুল এসব রয়েছে।
ফুলের মধ্যে রয়েছে গোলাপ, নয়নতারা, পাতাবাহার, নাইটকুইন, বাগানবিলাস, বেলি, অপরাজিতা, লিলি ও লতাগোলাপ। এ ছাড়া ঔষধি গাছের মধ্যে ঘৃতকুমারী, তুলসী, পাথরকুচি, বাসকপাতা, শিমুল, থানকুনি ইত্যাদি।
পারভীন আকতার বলেন, তিনি প্রতিদিন বিকেল পাঁচটার পর ছাদে চলে যান বাগান পরিচর্যা করার জন্য। গাছের চারা রোপণের সময় তিনি গোবর ও মুরগির বিষ্ঠা দেন সার হিসেবে। অন্য কোনো সার বা কীটনাশক ব্যবহার করেন না।
পারভীন আরও বলেন, বাগান করা তাঁর শখ। বিষমুক্ত ফল তিনি নিজে খান এবং আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের দেন। ছাদের বাগানে মিটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের পুষ্টির চাহিদাও।
পারভীন যেখানেই নতুন জাতের ফল বা ফুলের গাছ দেখেন, তার চারা সংগ্রহের চেষ্টা করেন বলে জানালেন। অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও জাপান থেকেও নানা জাতের ফল ও ফুলের চারা সংগ্রহ করেছেন তিনি। পরভীন বলেন, ‘গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় ছেলের বাসায় বেড়াতে যাই। সেখান থেকে দেশে আসার সময় ড্রাগন, রক মেলন, আঙুর ও গোলাপের বীজ নিয়ে আসি।’
পটিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, বাগানের জন্য যে বিশাল জমির প্রয়োজন হয় না, তা পরভীন প্রমাণ করলেন। তাঁকে দেখে এলাকার বহু মানুষ এ ধরনের বাগান তৈরিতে উৎসাহিত হচ্ছেন।