ছোটদের মুখে বড়দের প্রশ্ন সামলাবেন যেভাবে

শিশুরা যে প্রশ্নই করুক, উত্তর দিতে চেষ্টা করুন। মডেল: আহিল ও দেবজিৎ
ছবি: সুমন ইউসুফ

৯ বছর বয়সী তাহসিন (ছদ্মনাম) একদিন পত্রিকা পড়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা বাবা ধর্ষণ কী?’ সবাই মিলে হয়তো কোনো চলচ্চিত্র দেখছেন। হঠাৎ প্রাপ্তবয়স্কদের উপযোগী কোনো একটা দৃশ্য দেখে সাত বছরের আহনাফ (ছদ্মনাম) মা–বাবার কাছে জানতে চাইল ‘ওরা এমন করছে কেন?’ প্রায় প্রতিটি পরিবারেই মা–বাবাকে কোনো না কোনো সময় শিশুদের এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।

অনেকে এমন প্রশ্ন করায় শিশুদের ধমক দেন। কেউ জবাব এড়িয়ে যান। কেউ আবার ভুল ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু শিশুর পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশের জন্য এই ধরনের প্রশ্নের যুক্তিসংগত উত্তর দেওয়া প্রয়োজন। শিশুরা জানতে চায়। আর তথ্যপ্রযুক্তির এই দুনিয়ায় বেড়ে ওঠা আজকের শিশুরা জানতে চাইবেই।

শিশুদের এই জানার চেষ্টাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেই কিন্তু তার জিজ্ঞাসা থেমে থাকে না। বরং ভুল পথে সে তার জিজ্ঞাসার উত্তর খোঁজে। এতে শিশুটি বিভ্রান্তিতে পড়ে। এই বিভ্রান্তি থেকে বের হতে গিয়ে নানা মানসিক সংকটে পড়ে। এই সংকট কোনো কোনো সময় শিশুর মানসিক রোগ তৈরি করে।

মা-বাবা যদি তার প্রশ্নকে এড়িয়ে যান, তখন তার কৌতূহল আরও বেড়ে যায়। সে অন্য পথে, অন্য কারও কাছে বিষয়টি জানতে চায়। এই ‘অন্য কেউ’ যদি হয় স্কুলের বন্ধু বা গৃহকর্মী, যে নিজেই হয়তো বিষয়টি সঠিকভাবে জানে না, তাহলে সে বিষয়টির ভুল ব্যাখ্যা পেতে পারে। বন্ধু বা গৃহকর্মীর বিষয়টি জানা থাকলেও শিশুর সামনে কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে, তা হয়তো সে জানে না। ভুল ব্যাখ্যায় শিশুটি আবার বিভ্রান্তির মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে।

আর সবচেয়ে সমস্যা হয় যখন তার প্রশ্নের একটা ভুল বা মনগড়া ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। পরে শিশুটি যখন ধীরে ধীরে নানা উত্স থেকে বিষয়টি সম্পর্কে প্রকৃত সত্য জানতে পারে, তখন তার মনের মধ্যে একটা অবিশ্বাস আর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। প্রকৃত সত্য আর মা-বাবার দেওয়া ব্যাখ্যার মধ্যে কোনটি সে গ্রহণ করবে। একপর্যায়ে তার মধ্যে মা-বাবার প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়। তার মধ্যে দেখা দিতে পারে আচরণের সমস্যা। পরে শিশুরা মা–বাবার সঠিক উত্তরও সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে থাকে।

কী করবেন

‘চুপ’ বলে শিশুকে থামিয়ে দিবেন না
ছবি: সুমন ইউসুফ

শিশুর এসব প্রশ্নের উত্তর মা–বাবাকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

  • এমন প্রশ্নে শিশুকে ধমক দেওয়া চলবে না, রেগে যাওয়া যাবে না।

  • প্রশ্ন যতই কঠিন বা বিব্রতকর হোক না কেন, উত্তর এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।

  • শিশুর বয়স বিবেচনায় এনে তার প্রশ্নের যুক্তিসংগত জবাব দিতে হবে। বয়সভেদে একই প্রশ্নের উত্তর ভিন্নভাবে দিতে হবে।

  • প্রয়োজনে শিশুকে বোঝাতে হবে এই বিষয়ের সবটুকু জানা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। বড় হয়ে সে এ বিষয়ে আরও জানতে পারবে।

  • জবাব দেওয়ার সময় পরিশীলিত শব্দ ব্যবহার করতে হবে। অশালীন শব্দ বা কাউকে ছোট করে, এমন শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।

  • শিশুর প্রশ্ন নিয়ে ব্যঙ্গ করা যাবে না, টিটকারি করা যাবে না।

  • শিশুর বয়স যদি একটু ওপরের দিকে হয়, তবে তাকে নির্ভরযোগ্য বই পড়তে দিতে হবে।

  • পারিবারিক পরিমণ্ডলে ফিসফিস করে শিশুর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে অন্যের সঙ্গে আলাপ করা যাবে না। এতে শিশুর মনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিষয়টি নিয়ে বাড়তি আগ্রহ তৈরি হবে।

আর শিশুর প্রশ্ন যে সব সময় বিব্রতকর হয়, তা কিন্তু নয়। শিশু কখনো কখনো কঠিন সামাজিক বিষয়েও প্রশ্ন করতে পারে। সেসব ক্ষেত্রেও তার বয়স উপযোগী করে বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। মনে রাখবেন, শিশুর প্রশ্নের ভুল উত্তর দেওয়া তাকে কোনো উত্তর না দেওয়ার চেয়ে ক্ষতিকর। শিশুর প্রশ্নকে গুরুত্ব দিন। তার প্রশ্ন করাকে কখনোই নিরুত্সাহিত করবেন না।