জমিজমার ভাগবাঁটোয়ারা

>আদালতে উত্তরাধিকারসূত্রে কোনো সম্পত্তির অংশ দাবি করতে হলে দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হয়। এ ধরনের মোকদ্দমাকে বলা হয় বণ্টন বা বাঁটোয়ারা মোকদ্দমা

সুমনেরা (ছদ্মনাম) দুই ভাই, দুই বোন। কিছুদিন আগে তাঁদের বাবা মারা গেছেন। বাবা বেশ কিছু জমিজমা, বসতভিটাসহ ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট রেখে গেছেন। তাঁদের বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হিসেবে তাঁরা এখন এই জমিজমা ও ফ্ল্যাটের মালিক। ভাইবোনেরা মিলে অনেকবার আলাপ-আলোচনায় বসলেন, কে কত অংশ পাবেন এবং কোন অংশ পাবেন, এ নিষ্পত্তির জন্য। অনেক দেনদরবারের পরও এ বিষয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো সুরাহা হচ্ছিল না। এদিকে ভাইয়েরা বোনদের অংশ কম দিতে চান। বোনেরা বিবাহিত। বোন তো শ্বশুরবাড়ি থাকে, তাই বোনকে সম্পত্তি দিতে তাঁদের যত আপত্তি। বিষয়টি পরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়েও মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। ভাইবোনদের মধ্যে দেখা দেয় মতের অমিল। আইন অনুযায়ী ভাইয়েরা বোনদের সম্পত্তি দিতে নারাজ। আবার এক ভাই বেশি সম্পত্তি দাবি করে বসলেন। অবশেষে বোনেরা মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন, তাঁরা আদালতে যাবেন।

আদালতে কীভাবে যেতে হবে
আদালতে উত্তরাধিকারসূত্রে কোনো সম্পত্তির অংশ দাবি করতে হলে দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হয়। এ ধরনের মোকদ্দমাকে বলা হয় বণ্টন বা বাঁটোয়ারা মোকদ্দমা। বাংলাদেশে বাঁটোয়ারা আইন ১৮৯৩ কার্যকর আছে এবং এই আইন অনুযায়ী বাঁটোয়ারা মামলা নিষ্পত্তি হয়। শরিকদের মধ্যে বনিবনা না হলে আদালতের মাধ্যমে এই ভাগবণ্টন দাবি করা যায়। সাধারণত এজমালি সম্পত্তি বা যৌথ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে কে কতটুকু অংশ পাবেন, এ জন্য বাঁটোয়ারা মামলা করতে হয়।
সাধারণত বিরোধ দেখা দেওয়ায় ছয় বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়। এ মামলার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, জমির স্বার্থসংশ্লিষ্ট সবাইকে পক্ষভুক্ত করতে হয়। তা না হলে পক্ষদোষে দুষ্ট হতে পারে। কোনো পক্ষ মারা গেলে তাদের উত্তরাধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ আছে এবং ছাহাম (অংশ) চাইতে পারে। এ মোকদ্দমায় দুবার ডিক্রি হয়। প্রথমে প্রাথমিক ডিক্রি হয় এবং পরে চূড়ান্ত ডিক্রি হয়। প্রাথমিক ডিক্রি হওয়ার পরে বা আগে বাদী-বিবাদী নির্ধারিত সময়ে নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেওয়ার সুযোগ আছে। প্রাথমিক ডিক্রির পর বণ্টন না করা হলে অ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগ করে অংশ নির্ধারণ করে দিতে পারেন এবং চূড়ান্ত ডিক্রি প্রদান করেন। এ ধরনের মামলা সাধারণত দীর্ঘদিন চলতে থাকে।

আপস-মীমাংসার সুযোগ
জমিজমার ভাগবাঁটোয়ারার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩খ ধারায় আপসমূলে বণ্টনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আপস-মীমাংসার মাধ্যমে নিজেরা বণ্টন করে নিলেই সুবিধা বেশি। আদালতে যেহেতু দীর্ঘ সময় লাগে নিষ্পত্তি হতে, তাই নিজেরা আপস-মীমাংসার মাধ্যমে ভাগবাঁটোয়ারা করে নেওয়াই ভালো। নিজেদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে একটি বণ্টনের দলিলও করে নিতে হবে। এ দলিলটি রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। উত্তরাধিকারসূত্রে জমির মালিক হলেও নামজারি বা মিউটেশন করা বাধ্যতামূলক। নামজারি করার সময় বণ্টননামা দলিল দাখিল করতে হয়। এ ছাড়া মোকদ্দমা চলা অবস্থায়ও আপস-মীমাংসা করে আদালত থেকে আপসমূলে ডিক্রি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট