জল ওজন কমাতে সাহায্য করে

শিল্পা শেঠি মনে করেন, যোগাসনই তাঁকে অনুশাসনের মধ্যে বেঁধে রেখেছে। হামেশাই তিনি যোগাসনের উপকারিতা নিয়ে নানান বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্যে তাঁর অনুরাগীদের কাছে পৌঁছে দেন। আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে এক ভার্চ্যুয়াল আড্ডায় বলিউডের সুপারফিট অভিনেত্রী শিল্পা শেঠির মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। এই আড্ডায় উঠে এসেছে তাঁর যোগাভ্যাস শুরুর দিন থেকে আজকের কথাও।

ছবি: শিল্পা শেঠির ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

প্রথম আলো: আপনার যোগাসনের সফর কীভাবে শুরু?

শিল্পা শেঠি: আমার জীবনে যোগাসন খুব ক্যাজুয়ালি এসেছিল। আসলে আমার সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিসের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তখন আমাকে আমার ফিজিওথেরাপিস্ট ভুজঙ্গাসন করতে বলেছিলেন। দিনে তিনবার তিনি এই আসন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এতে আমি খুবই উপকৃত হয়েছিলাম। তখন থেকে আমি যোগাব্যায়াম পুরোপুরি শেখার কথা ভাবি। আর সেই থেকে আমার ‘যোগযাত্রা’ শুরু। ধীরে ধীরে যোগ আমার যাপিত জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। যোগাসন করে আমি উপলব্ধি করেছি এর মাধ্যমে শুধু শরীরকে নয়, মনকেও সুস্থ রাখা যায়। এমনকি যোগাসন মনের নানান অনুভূতিকে খুব সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। আর এই অভ্যাসের সাহায্যে নিজেকে অনুশাসনে বাঁধা যায়।

প্রথম আলো: আপনার হাত ধরে যোগাসন অনেকটাই প্রচারের আলোয় এসেছে।

শিল্পা শেঠি: হ্যাঁ, তা বলতে পারেন। রিয়েলিটি শো ‘বিগ ব্রাদার হাউস’-এ আমি অংশগ্রহণ করেছিলাম। ওখানে কোনো জিম ছিল না। শুধু ম্যাট ছিল। তাই আমি ওই হাউসে প্রচুর ব্রিথিং এক্সারসাইজ করতাম। আর সেটা জনসমক্ষে চলে আসে। এই শো দেখার পর অনেকে ভাবতে শুরু করেন যে আমি নিয়মিত যোগাসন করি। তারপর দেশে ফেরার পর সবার অনুরোধে আমি যোগব্যায়াম নিয়ে একটা ডিভিডি প্রকাশ করি। তা প্রায় ১৩ বছর আগের কথা। এরপর আরও নানানভাবে যোগাসনকে আমি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করি। যোগাসনের ওপর অ্যাপ নিয়ে আসি। যোগাসন আমাদের দেশের অত্যন্ত মূল্যবান এক সম্পদ। দুঃখের বিষয়, এটাকে নিয়ে আমাদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার মতো কেউ নেই। বিদেশে যোগাসন নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করার অনেকে আছেন। এমনকি বিদেশে অনেক ইয়োগা এক্সপার্ট আছেন। বাইরের দেশে যোগচর্চার ওপর অনেক অ্যাপও আছে।

প্রথম আলো: কোন আসন আপনাকে সবচেয়ে বেশি প্রাণশক্তি দেয়?

শিল্পা শেঠি: আসন বলব না, বরং প্রক্রিয়া বলব। ‘সূর্য নমস্কার’ করার পর আমার শরীরে অদ্ভুত এক এনার্জি আসে। আমার অত্যন্ত প্রিয় এটি। এর মাধ্যমে ওয়ার্ম আপ, স্ট্রেচিং, ব্রিথিং আরও অনেক কিছু একসঙ্গে করা যায়। ‘সূর্য নমস্কার’ আমি আটবারের মতো করি।

ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য

প্রথম আলো: করোনাকালে সুস্থ থাকার জন্য যোগাসন ছাড়া আর কী কী করা জরুরি?

শিল্পা শেঠি: সময়টা সবার জন্য অত্যন্ত কঠিন। আমি যোগাসনকে আমার জীবনের অংশ অনেক আগেই বানিয়ে ফেলেছি। তাই এই সময় শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে সুস্থ রাখতে পেরেছি। তবে যোগাসনের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার, আয়ুর্বেদ, পর্যাপ্ত ঘুম, পর্যাপ্ত জলপান আর অবশ্যই প্রাণায়ামের কথা বলব। বিশেষ করে এই সময়ে সুষম আহার খুব জরুরি। ঘুমকে আমরা অনেক সময় উপেক্ষা করি। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। আর আমি আয়ুর্বেদে অত্যন্ত বিশ্বাস রাখি। এটাও আমাদের দেশের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। সারা দিনে প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। আর সারা দিনে ১২ মিনিট প্রাণায়াম করতে হবে। তবে সবার আগে জীবনে অনুশাসন আনতে হবে।

প্রথম আলো: ঘুম থেকে উঠে সবার আগে কী খান?

শিল্পা শেঠি: আমার দিন শুরু হয় ঘি, হলুদ, গোলমরিচের গুঁড়া আর শুকনা আদা দিয়ে। পাঁচটি জিনিস একসঙ্গে মিশিয়ে খালি পেটে খাই। এর থেকে পিত্তনাশ হয়। সর্দি–কাশির সমস্যা দূর হয়। হজমশক্তি বাড়ে। আরও অনেক কিছুতে সাহায্য করে এটা।ৎ

স্বামীর সঙ্গে শিল্পা
ছবি: শিল্পা শেঠির ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

প্রথম আলো: আপনি যোগচর্চা নিয়ে নানান সচেতনতার বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। আপনার পরিবারের কাছে এই বার্তা কতখানি পৌঁছাতে পেরেছেন?
শিল্পা শেঠি: হা! হা! হা! (সশব্দে হেসে) কথায় আছে না, ‘ঘরকা মুরগি ডাল বরাবর’। আমার অবস্থা অনেকটা তা–ই। আমি রাজকে অনেক দিন ধরে শরীরচর্চা করার কথা, স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েটের কথা বলে এসেছি, কিন্তু সেভাবে কখনো কানে তোলেনি। তবে লকডাউনে ও যোগাভ্যাস শুরু করেছে। হেলদি ডায়েট নিচ্ছে। আমার ছেলে ভিয়ান আমার সঙ্গে রোজ ইয়োগা করে। আমি ওকে কোনো কারণে বকাবকি করলে ছুটে অন্য ঘরে চলে যায়। আর ব্রিথিং এক্সারসাইজ করে নিজের মনকে সংযত করে। আমার শাশুড়ি এখন যোগাসন করা শুরু করেছেন। আমার মা–বাবা আগে থেকেই করতেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, আমার এক বছর তিন মাসের মেয়ে সমীষাকে যোগাসন করতে বললে ও পা তুলে আসন করা শুরু করে।

প্রথম আলো: ১৩ বছর আগের শিল্পার সঙ্গে এখনকার শিল্পার তফাত কোথায়?

শিল্পা শেঠি: বদলটা আমি বলে বোঝাতে পারব না। তবে বলতে পারি, আমি এখন অনেক বেশি সংযত। আমি এখন যোগাসন করি না, যোগাসনের মধ্যে বেঁচে আছি। আমি এক সাধনার মধ্যে আছি। তবে ইয়োগা থেকে সবার অভিজ্ঞতা এক নয়। একেকজনের একেক রকম অভিজ্ঞতা হয়। একেকজন একেক রকম শিক্ষা নেন। আমি যোগাসন থেকে শিখেছি জীবনের কাছে আত্মসমর্পণ করতে। জীবনে ভালো-মন্দকে গ্রহণ করতে। এমনকি যত খারাপ হোক না কেন, তা আদতে ভালোর জন্যই আর এটা আমি এই যোগসফর থেকে শিক্ষা পেয়েছি।

নিজের বাড়িতে বসে সাক্ষাতকার দিচ্ছে শিল্পা শেঠি

প্রথম আলো: যোগাভ্যাসের সঙ্গে ডায়েট কতটা জরুরি?

শিল্পা শেঠি: শরীরের জন্য ব্যালান্সড ডায়েট অত্যন্ত জরুরি। অনেকে বলেন যে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকতে। কিটোসহ আরও নানান ধরনের ডায়েট ফলো করার কথা বলেন। সারা দিনে ছয়বার খাবার কথাও অনেকে বলে থাকেন। আমার মতে, এসব করার কোনো অর্থ নেই। শরীরের এনার্জির জন্য কার্বস খুবই জরুরি। পেশির জন্য প্রোটিন প্রয়োজন। আর অন্ত্রের জন্য ফাইবার খেতে হবে। তাই নিশ্চিন্তে কার্বস খেতে পারেন। সকালে ভারী জলখাবার খান। দুপুরে ভালোমতো লাঞ্চ করুন। তবে ডিনারে কখনোই বেশি পরিমাণে খাবেন না। আর ডিনার করার তিন ঘণ্টা পর ঘুমাতে যাবেন। অনেকেই ডিনার করে শুয়ে পড়েন, এটা খুবই ক্ষতিকর। আমি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর দাঁতে কিছু কাটি না। আর সারা দিনে প্রচুর পরিমাণে জল এবং নানান পানীয় খেতে হবে। জল ওজন কমাতে সাহায্য করে।

প্রথম আলো: ফিটনেসের ক্ষেত্রে পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

শিল্পা শেঠি: সেদিন ‘সুপার ড্যান্সার’-এর সেটে বলছিলাম যে আমার শরীরটা এবার অন্যভাবে গড়তে হবে। তখন অনেকে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, এরপর আর কী করতে পারি। আমার মতে, এর শেষ নেই। আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ আমাকে আগামী দিনে নিতে হবে। আরও নতুন কিছু করতে হবে।