জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হেলাল যেভাবে গরুর খামার গড়েছেন

হেলালের খামারে এখন ১৫টি গাভি, ৯টি মহিষ, ৫টি ষাঁড় ও ৬টি বাছুর আছে
ছবি: সংগৃহীত

উচ্চমাধ্যমিক পাস করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হেলাল আহমেদ। ভর্তি হয়ে দেখেন, বন্ধুরা সব টিউশনের পেছনে ছুটছে। কেউ আবার চলে যায় খণ্ডকালীন চাকরিতে। ভিন্ন পথে হাঁটলেন হেলাল। গ্রামে গিয়ে দিলেন গরু ও মহিষের খামার। পাঁচ বছরের মাথায় তাঁর খামারে এখন ১৫টি গাভি, ৯টি মহিষ, ৫টি ষাঁড় ও ৬টি বাছুর আছে। বছরে মুনাফা কয়েক লাখ টাকা।

কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারট্যাক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে উত্তর চরলক্ষা গ্রামে নিজস্ব জমির ওপর হেলালের খামার। খামারে ঢুকেই চোখে পড়ে বেশ কয়েকটি গাভি, বাছুর আর মহিষ চড়ে বেড়াচ্ছে। কর্মচারীরা সার বেঁধে রাখা গাভি, মহিষের গা ঘষেমেজে পরিষ্কার করছিলেন। কেউ আবার মুখে তুলে দিচ্ছেন ঘাস-ভুসি।

খামারে বসেই তাঁর শুরুর গল্প, স্বপ্নের কথা শোনালেন হেলাল। ছোটবেলা থেকেই তাঁর গরু পালনের প্রতি ঝোঁক। বাড়িতে বেশ কয়েকটি গরু ছিল। বিকেলে স্কুল শেষ করে মাঠ থেকে ঘাস কেটে এনে যত্ন করে খাওয়াতেন। তবে গরুর খামার করে যে এক দিন সফল হবেন—চিন্তাতেও ছিল না। এখন খামার করে বছরে তাঁর মুনাফা হয় কয়েক লাখ টাকা।

খামার গড়ে স্বাবলম্বী হেলাল

২০১৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রামের সরকারি সিটি কলেজে ভর্তি হন হেলাল। ব্যতিক্রম কিছু করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। মায়ের কাছ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে একটা মহিষ ও একটা গরু কিনে বাড়িতে নিয়ে যান। এক বছর পর চার লাখ টাকায় বিক্রি করেন। সেই শুরু।

হেলাল বলেন, ‘ওই চার লাখ টাকায় আরও পাঁচটি ফ্রিজিয়ান জাতের বাছুর কিনেছিলাম।’ ২০১৯ সালে বাবা জালাল আহমদকে বড় করে খামার তৈরির কথা জানান। পরে বাবার পরামর্শে নিজেদের জমিতেই গড়ে তোলেন খামার। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঋণ নেন পাঁচ লাখ টাকা। শুরুতে পশুর গোসল থেকে শুরু করে খাবার সংগ্রহ ও খাওয়ানো—সবকিছু নিজেই করতেন। কখনো বাবা, কখনো মা, আবার মাঝেমধ্যে বড় ভাই সাহায্য করতেন। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে খামারের পরিধি। আড়াই বছরে ধাপে ধাপে যুক্ত হয় গরু, মহিষ।

আরও পড়ুন

করোনার ধাক্কা, খুরারোগের চিন্তা

খামার শুরুর দ্বিতীয় বছরেই করোনার ধাক্কা। দুধ বিক্রি অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়। আবার হঠাৎ করে বাড়তে থাকে পশুখাদ্যের দাম। হেলাল বলছিলেন, ‘করোনার বছরে ২৫ থেকে ৩০ টাকা লিটারে গরুর দুধ বিক্রি করতে হয়েছে। দাম কমিয়েও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছিল না।’ ওদিকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আসে খুরারোগ। আক্রান্ত হয় ১০টি গরু। মারা যায় ৫টি। এত সব ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। তবে এবারের ঈদে ১৩টি গরু রেখেছেন বিক্রি জন্য। দাম ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা।

হেলাল বলছিলেন তাঁর স্বপ্নের কথা, ‘ভবিষ্যতে আমার খামারে কয়েক শ গরু, মহিষ রাখতে চাই। এখন তিনজন চাকরি করলেও আরও অন্তত ১০ জনের কর্মসংস্থান করার ইচ্ছা আছে। পাশাপাশি খামারে তৈরি করতে চাই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, যা থেকে অন্তত ৫০টি পরিবারের জ্বালানির ব্যবস্থা করা সম্ভব।’