জ্ঞানের ফেরিওয়ালা ‘কালাম স্যার’

দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তায় কেউ প্রতিষ্ঠা করেছেন দাতব্য সংগঠন, কেউ আবার দুর্গম চরে স্থাপন করেছেন স্কুল। আপন আলোর দীপ্তিতে তাঁরা হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীদের প্রেরণা, এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয়। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এমন ১১ জন শিক্ষককে সম্মানিত করেছে আইপিডিসিপ্রথম আলো। এখানে পড়ুন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার খলিলুর রহমান উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের কথা।

আবুল কালাম আজাদ
ছবি: সংগৃহীত

অবসরের প্রায় এক যুগ পর আবার বিদ্যালয়ে আসছেন ‘কালাম স্যার’। কী করে যেন সে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল এলাকায়। প্রধান শিক্ষকের দপ্তরে বসে যখন তাঁর অপেক্ষায় বসে আছি, তখনই দেখি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। প্রিয় শিক্ষককে দেখতে এসেছেন তাঁরা।

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার খলিলুর রহমান উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটি সামলেছেন। বর্তমান প্রধান শিক্ষক মফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলছিলেন, ‘কালাম স্যারের হাতেই আমার নিয়োগ হয়েছে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সবকিছু স্যারের কাছেই শিখেছি। তিনি যেভাবে গড়ে গেছেন, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

একসময় বর্তমান প্রধান শিক্ষকের দপ্তরে এলেন সবার ‘কালাম স্যার’। প্রবীণ শিক্ষককে সালাম করলেন আবেগাপ্লুত শিক্ষার্থীরা। তিনিও প্রিয় ছাত্রদের বুকে জড়িয়ে স্নেহের পরশে আলিঙ্গন করলেন। সুযোগ পেয়ে আমরা শুনলাম প্রিয় শিক্ষকের গল্প।

১৯৬৭ সাল। স্নাতক পরীক্ষা শেষ করেছেন। ফল প্রকাশের আগেই সেনবাগের ছাতারপাইয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করলেন। তারপর আরও চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান করেছেন তিনি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকই ছিলেন ২৫ বছর। শিক্ষকতাজীবনের বেশির ভাগ সময় অজপাড়াগাঁয়ের অবহেলিত সব প্রতিষ্ঠানকে নিজের আলোয় আলোকিত করেছেন। তাঁর শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে নানা ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। কখনো কোনো ধরনের অসুস্থতা তাঁকে কাবু করতে পারেনি। বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষই ছিল তাঁর ঘরবাড়ি। যার কারণে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি—সবার কাছেই ছিলেন আপনজন।

প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা

২০০৮ সালে খলিলুর রহমান উচ্চবিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করে গ্রামের বাড়ি একই উপজেলার চাষীরহাটে ফিরে যান আবুল কালাম আজাদ। এলাকার মানুষের আবদারে সদ্য প্রতিষ্ঠিত হনুফা খাতুন উচ্চবিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেন। দুই বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে এমপিওভুক্তি করে দিয়ে দীর্ঘ শিক্ষকতাজীবনের ইতি টানেন তিনি।