জ্বর হলে আজও মনে পড়ে মাকে
বাইশ বছর আগের কথা। মা মামাবাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। আমার যাওয়া হয়নি স্কুলের কারণে। হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বর হলো আমার। আমার সেবা-শুশ্রূষা, দাওয়াই—সবই চলল। কিন্তু কিছুতেই জ্বর কমে না। ভাইবোনেরা সবাই অস্থির হয়ে গেলেন এবং লোক দিয়ে আমার অসুস্থতার সংবাদ মাকে জানালেন।
আকাশে প্রচণ্ড কালো মেঘ। ঝুমবৃষ্টির আশঙ্কা। এরই মধ্যে মা একধরনের ব্যাকুলতা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি তখন সামনের বারান্দায় খাটের এক কিনারায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে ছিলাম। গায়ে ফুলতোলা পুরু কাঁথা। মা অপরাধীর মতো বিছানায় নিঃশব্দে বসলেন। মায়ের ওপর আমার খুব অভিমান হলো। আমি তাঁর দিকে না তাকিয়ে ডান দিকে ফিরলাম। জানালা দিয়ে উড়ন্ত কালো মেঘের দিকে তাকিয়ে আশ্রয় খুঁজলাম। টলটল জলে আমার চোখ ভরে আসছে। বালিশ ছুঁই-ছুঁই করছে চোখের জল। মা আমার শরীর থেকে কাঁথা সরালেন। তারপর দুই বাহু ধরে আমাকে টেনে তুলে জড়িয়ে ধরলেন। এবার আমি আর কান্না থামাতে পারলাম না। অঝোর ধারায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলাম। তখন বিষম বৃষ্টি শুরু হলো। টিনের চালে পড়ন্ত ঝুমবৃষ্টির শব্দে মিলিয়ে গেল আমার কান্নার আওয়াজ।
বছর খানেক আগে সিডনির টেম্পি পার্কে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলার পরদিন থেকে তিন দিন আমি জ্বরে ভুগেছিলাম। তখন বুঝেছি মায়ের সেবা, মায়া-মমতার গুরুত্ব। ভিন্ন সংস্কৃতিতে, ভিনদেশে মায়ের মমতা ও ভালোবাসার উপলব্ধিটাও ভিন্ন হয়।
পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।