টিউশনির টাকা জমিয়ে মেডিকেল ছাত্রের রেস্তোরাঁ

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের ছাত্র তাসফিকুর রহমান
ছবি: সোয়েল রানা

মেডিকেলে পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনির টাকা জমিয়ে রেস্তোরাঁ চালু করেছেন তাসফিকুর রহমান। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের এই শিক্ষার্থী পড়েন শেষ বর্ষে।

ছেলেবেলায় প্রকৌশলী হতে চেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন উদ্যোক্তা হবেন। কিন্তু মা-বাবার ইচ্ছে পূরণ করতে ভর্তি হন মেডিকেল কলেজে। তাই বলে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়নি। এখন তাঁর রেস্তোরাঁয় ১২ জন বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। করোনায় ব্যবসায় বিপর্যয় নেমে এলেও হাল ছাড়েননি।

বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায় তাসফিকুরের রেস্তোরাঁর নাম লাজানিয়া। ভারতীয়, চীনা, ইতালীয়সহ নানা ধাঁচের খাবার পাওয়া যায় এখানে। গত ২৭ জানুয়ারি রেস্তোরাঁয় বসেই কথা হচ্ছিল এই তরুণের সঙ্গে। বলছিলেন, ‘তিন বোনের সঙ্গে বড় হয়েছি। বাবা সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে চাকরি করতেন। মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। পরিবারে আর্থিক অবস্থা ভালো থাকায় কখনো সেভাবে অভাবে পড়তে হয়নি। কিন্তু শৈশব থেকেই চারপাশে অসহায় মানুষ দেখলে খারাপ লাগত। তাদের জন্য কিছু করতে ইচ্ছে হতো। স্কুলে তো সেই সামর্থ্য ছিল না। তাই নিজের উপার্জনে মানুষের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখতাম।’

এইচএসসি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় রাজশাহী বোর্ডে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন তাসফিকুর। ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ—সুযোগ পেয়েছিলেন দুটিতেই। কিন্তু মা-বাবার ইচ্ছায় শেষ পর্যন্ত পা রাখেন মেডিকেলে।

মেডিকেল কলেজের ভর্তি কোচিং করিয়ে বগুড়া শহরে বেশ নামডাক করেছিলেন তাসফিকুর। কোচিংয়ে কিংবা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়িয়ে ২০১৯ সালে তাঁর জমানো অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১৫ লাখ টাকা। সেই টাকায় শহরের রানার প্লাজার ফুডকোর্টে শুরুতে একজন অংশীদার নিয়ে ‘টুইন্স ক্যাফে’ নামে রেস্তোরাঁ খুলেছিলেন তিনি। কিন্তু করোনার আঘাতে বন্ধ করে দিতে হয় এই উদ্যোগ। তাই বলে তাসফিকুর হাল ছাড়েননি। ২০২০ সালে আবার দ্বিগুণ উদ্যমে চালু করেন লাজানিয়া।

জানালেন, ইতিমধ্যেই বিনিয়োগের অর্ধেক টাকা তুলতে পেরেছেন। ব্যবসার আয়ে এখন পুরোদমে সামাজিক কার্যক্রম চলছে। দরিদ্র রোগীদের বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া, মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা ছাড়াও রক্তদাতা সংগঠন সন্ধানী এবং বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনে (ছাত্রশাখা) যুক্ত আছেন তিনি।

পড়ালেখার চাপ সামলে কীভাবে এত কিছু করেন? তাসফিক বললেন, ‘খুব কঠিন এটা সত্যি। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে কাজটা আমার জন্য সহজ হয়েছে। রেস্তোরাঁর প্রতিদিনের বিকিকিনির সবকিছুই অনলাইনে নিয়ে এসেছি। আয়-ব্যয় থেকে শুরু করে ক্রেতারা অনলাইনে কত টাকার খাবার অর্ডার করছেন, সবই আমি দেখতে পাই।’

তাসফিকুর জানালেন, এমবিবিএস শেষে নিউরো সার্জারি নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছে তাঁর। এ ছাড়া বগুড়া শহরে একটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠান স্বপ্ন দেখেন এই তরুণ।