ট্রেইলার সমালোচনা

>আসছে ঈদুল আজহায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে তিন-তিনটি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমা। কেমন হবে সিনেমাগুলো? আমাদের হাতে সময় কম, তাই ইউটিউবে ট্রেইলার দেখে সেগুলোর (অ)যৌক্তিক বিশ্লেষণ করেছেন এইচ এম ফজলে রাব্বী

 ‘অহংকার’

সাদামাটা নাকি টুইস্টের খনি?

ট্রেইলারের শুরুতে রামঘুষি হাঁকিয়ে এক চুনোপুঁটি ভিলেনকে উড়িয়ে দেন শাকিব। মারামারির পরই সামান্য চিত্তবিনোদনের উদ্দেশ্যে শাকিব তাঁর গ্যাং ‘নিখিল সিএনজিচালক সমিতি’র সদস্যদের নিয়ে ‘ভেঙে দিব মাইয়ারে তোর অহংকার’ গানের সঙ্গে তাণ্ডবনৃত্য শুরু করেন।

ধুমসে নাচানাচির পর আবারও তিনি ‘গুরুজনদের সম্মান করবে’—এই নীতিকথাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি বয়সী নারী ভিলেনকে তাঁর স্পেশাল ৩৬০ ডিগ্রি চড় মেরে ছুড়ে ফেলেন মিটার পাঁচেক দূরে!

শুরুতে দুই সেকেন্ডের ক্যামিও রোলে মুখ দেখালেও নায়িকা বুবলীকে মূলত দেখা যায় তখনই যখন তিনি দাঁত কিড়মিড় করে শাকিবকে বলেন, ‘পাওয়ার দেখাচ্ছিস? পারলে একবার টাচ করে দেখ!’

যদিও তাঁর এই রোমহর্ষ সংলাপের বিপরীতে শাকিব চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার বদলে খাঁটি বেরসিকের মতো বলে বসেন, ‘এখন আমার টাচ করার মুড নেই।’

ইতিমধ্যে নায়িকার সঙ্গে দুবার গানের তালে নাচতে দেখা যায় শাকিবকে। পরের দৃশ্যেই আবার সাসপেন্স! বুবলীকে দেখা যায় শাকিবের শরীর থেকে মাথা আলাদা করে দেওয়ার ‘নিষ্পাপ’ সংকল্প পূরণে এগিয়ে যেতে। যদিও পরের দৃশ্যে স্কন্ধকাটা কোনো শাকিবকে দেখা যায়নি। বরং উল্টো দেখা যায় শতভাগ ব্যর্থ বুবলীকে হাত বাঁধা অবস্থায় শাকিবের জিম্মায় অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকতে! শেষ দিকে শাকিব বুবলীর উদ্দেশে ছুড়ে দেন গা শিউরে ওঠা সংলাপ, ‘তোকে টাচ করতেও আমার ঘৃণা হয়!’ এটা শুনে আপনি আর স্থির থাকতে পারবেন না। টিকিট বুক করতে ছুটে যাবেন হলে।

প্রায় সাড়ে চার মিনিটের ট্রেইলার দেখার পর এটা পরিষ্কার, সিনেমাটি হবে অত্যন্ত রহস্যময়। এতে যত হিন্টস ও টুইস্ট আছে, তাতে মনে হয়েছে, বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এটা আরেকটা অবিস্মরণীয় সিনেমা হয়ে যাবে অনায়াসে। এ ছাড়া আবহ সংগীতে পাবেন মোৎজার্টের অপ্রকাশিত কোনো সিম্ফনির ছোঁয়া! শাকিব-বুবলীর ফ্যাশন সেন্স উপলব্ধি করতে হলেও এই ছবি দেখা প্রত্যেক ফ্যাশনসচেতন দর্শকের অবশ্যকর্তব্য।

 ‘সোনাবন্ধু’
এ কেমন বন্ধু?

অন্য দুই সিনেমায় শুরুতে ভরাট গলায় ‘আসিতেছে’ শুনতে পাই না আমরা। কিন্তু সোনাবন্ধু সিনেমার পরিচালক সেটার অভাব পূরণ করেছেন তাঁর এই ট্রেইলারে। নায়ক ডি এ তায়েব এক নম্বর নিক্তির মতো শুরু থেকেই দুই দিকে ভারসাম্য বজায় রাখেন। ফষ্টিনষ্টি করতে থাকেন পপি ও পরীমনির সঙ্গে। কিন্তু ‘সোনাবন্ধু’ তায়েব আসলে কার সোনাবন্ধু? কার হাতে বাঁধবেন তিনি ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড? কাকে নিয়ে ফেসবুকে #bestfriendforever ক্যাপশন দিয়ে আপলোড করবেন ছবি? জানতে হলে দেখতে হবে, দেখতে হলে কাঁদতে হবে।

সোনাবন্ধুর ভেজাল বন্ধুত্বের ভুল-বোঝাবুঝি কিংবা বারবার হাতেনাতে ধরা পড়ার পর নায়ককে একটু পরপর কাঁদতে হয় চোখে গ্লিসারিন মেরে। চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বারী সিদ্দিকীর গানের সঙ্গে গলা মিলিয়ে তাঁকে কাঁদতে দেখে কখন যে আপনিও কেঁদে ফেলবেন বুঝতেও পারবেন না। যেমনটি পারিনি আমিও। ছবির শেষ দিকে ভুঁড়ি দুলিয়ে নাচতে থাকা এক আইটেম গার্লকেও দেখা যায়। সে যাহোক, সর্বোপরি করুণরসসমৃদ্ধ এক চিত্রনাট্যের অসাধারণ সৃষ্টি এই সোনাবন্ধু। এই সিনেমা আপনাকে নিয়ে যাবে সেই গ্রামবাংলায়। ১০ সেকেন্ড পরপর গানের চোটে কাহিনি আন্দাজ করা না গেলেও এই সিনেমায় আছে এত এত স্পনসর! এটাও তো কম বড় আকর্ষণ নয়! আর জীবনে তো কতই বন্ধু দেখেছেন, কিন্তু কখনো কি সোনাবন্ধু দেখেছেন? জীবন আর কয় দিনের? তাহলে বন্ধুদের নিয়ে এক বাক্স টিস্যু কিংবা রস‍+আলোর এই সংখ্যাটি নিয়ে দেখে ফেলুন সোনাবন্ধু

 ‘রংবাজ’
ভিন্নধর্মী রোমান্টিক, সায়েন্স ফিকশন নাকি সাইকো-থ্রিলার?

এই ছবিতেও জুটি বেঁধেছেন শাকিব ও বুবলী। পুরো ট্রেইলারে কানে সেফটিপিন, পুঁতি, খুদে তারাসহ তিন সাইজ বড় টি-শার্ট, বায়ুনিষ্কাশন ব্যবস্থাসম্পন্ন থ্রিকোয়ার্টার প্যান্ট এবং মাথায় সর্বদা জলপট্টি দেওয়া অবস্থায় দেখা যায় নাম্বার ওয়ান শাকিব খানকে। প্রায় ১৫০টি হলে মুক্তি পেতে যাওয়া এ ছবিটি হবে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের ভাঙা কণ্ঠস্বরে। কারণ, পুরো ট্রেইলারে শাকিবসহ অনেকেই আধো আধো পুরান ঢাকার ভাষায় কথা বলার জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এর মধ্যে চমক হিসেবে আছেন হার্ট স্পেশালিস্ট চরিত্রে অভিনয় করা শক্তিমান অভিনেতা কাজী হায়াত। যেখানে তিনি লাচ্ছিবিহীন পাঁচ প্লেট কাচ্চি খেয়ে ওঠা গ্যাস্ট্রিকের রোগী শাকিবকে পরীক্ষা করে বলেন, ‘এটা হৃদয়জনিত রোগ।’

ট্রেইলারে সুফি গানের কোমল পরশ ছড়িয়ে দেওয়ার মহতী উদ্দেশ্যে সুইজারল্যান্ডে ধারণ করা একটি গানও দেখা যায়। ট্রেইলারে শাকিবের বলা, ‘কলিজা যে আমার সিংহের কলিজা’ শুনে ধারণা করা যায় তিনি হয়তো বিজ্ঞানীদের নতুন কোনো গিনিপিগ! যাঁর শরীরে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করে বসানো হয়েছে দশাসই এক সিংহের কলিজা। অর্থাৎ হতে পারে এটি একটি মেডিকেলীয় সায়েন্স ফিকশন সিনেমা।

কিন্তু আপনি আরও হতভম্ব হবেন যখন ভিলেন অমিত হাসান নিজেকে রবি ঠাকুরের ফ্যানাটিক ফ্যান দাবি করে একটার পর একটা ছন্দে মোড়ানো ছড়া বলে যাবেন চিবিয়ে চিবিয়ে। অর্থাৎ হতে পারে এটা ছড়া থেরাপি দিয়ে বিপথগামী সাইকো ভিলেনকে রাবীন্দ্রিক উপায়ে শায়েস্তা করার সিনেমাও। মোট কথা, এই ছবি আপনাকে অদ্ভুত এক মোহে আবদ্ধ করে রাখবে নিশ্চিত। পুরো ট্রেইলারে বুবলীকে দেখা গেছে কয়েকটি মহাজাগতিক মানের সংলাপ আওড়াতে। আর হাত-পা নাড়তে দেখা গেছে দু-তিনটি গানে। কিন্তু প্রশ্ন তো একটাই—একি রোমান্টিক, সায়েন্স ফিকশন নাকি সাইকো-থ্রিলার সিনেমা? তাই হলে গিয়ে এই সিনেমাটি অবশ্যই দেখবেন।