
আলু শুধু আমাদের দেশে অন্যতম জনপ্রিয় খাবারই নয়, পুষ্টিকর ও সুস্বাদুও বটে। বাঙালির খাবার আর সঙ্গে আলু থাকবে না, এটা ভাবা যায় না। কিন্তু যখন ডায়েটের প্রশ্ন সামনে আসে বা কেউ যখন ডায়েটে থাকেন, তখন আলু খাবেন কি না বা কতটুকু খাবেন, তা নিয়ে মনে নানা প্রশ্ন জাগতেই পারে।
এমন প্রশ্নের আগে আসুন, আমরা জেনে নিই আলুতে কী কী উপাদান থাকে। আলুতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২, আয়রন, জিংক, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি। প্রতি ১০০ গ্রাম আলুতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ গ্রাম ক্যালরি পাওয়া যায়; যা একটি মধ্যম আকারের রুটিতে বা অর্ধেক কাপ ভাতে পাওয়া যায়। আবার নতুন আলুর তুলনায় পুরোনো আলুতে শর্করা পরিমাণে বেশি থাকে।
আসুন, জেনে নিই ওজন হ্রাসের ডায়েট কীভাবে কাজ করে?
ওজন হ্রাস করতে হলে প্রতিদিনের প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্যালরি গ্রহণ বা ব্যায়ামের মাধ্যমে বেশি ক্ষয় অথবা দুটিই করতে হবে। সপ্তাহে এক পাউন্ড ওজন কমাতে হলে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় ক্যালরি থেকে ৫০০ ক্যালরি বাদ দিতে হবে। একই পরিমাণ ওজনের খাবার না কমিয়ে শুধু ব্যায়াম করে কমাতে চাইলে প্রতিদিন এক ঘণ্টার মতো ভারী ব্যায়াম করতে হবে; যা সাধারণত কঠিন। ফলে ওজন হ্রাসের ডায়েটে প্রতিদিন ক্যালরি বাদ দেওয়াই ভালো এবং সঙ্গে ব্যায়াম রাখতে খুবই ভালো।
এ ব্যাপারে বারডেম হাসপাতালের পুষ্টিবিদ শামছুন্নাহার নাহিদ বলেন, যেহেতু ওজন হ্রাসের মূল বিষয় হলো ক্যালরি গ্রহণ ও ক্ষয়, সেহেতু আলু খেতে কোনো বাধা নেই। আলু শর্করাসমৃদ্ধ খাবার, তাই দৈনন্দিন অন্য শর্করার উৎস, যেমন ভাতের বা রুটির পরিবর্তে খাওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডায়েট চার্টের ক্যালরি সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং ওজন হ্রাসও ঠিকমতো হয়।
আলু সাধারণত কীভাবে খাই?
তেলে ভাজা, চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, সরাসরি রান্না, ভর্তাসহ নানাভাবে খেয়ে থাকি। ভর্তা বা সরাসরি রান্নাতে ক্যালরির পরিমাণ সাধারণত স্বাভাবিকের মতোই থাকে। কিন্তু তেলে ভাজলে, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস ইত্যাদি ক্ষেত্রে ক্যালরির পরিমাণ অনেক গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়—যা স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ হতে পারে। বিশেষ করে যারা ওজন কমানোর ডায়েট করে থাকেন, তাঁদের জন্য সমস্যাটা আরও বাড়িয়ে দেয়।
ডায়েটে করণীয়
দৈনন্দিন ক্যালরি হিসাব করে যদি কেউ আলু খান, তাহলে তাঁর ওজন হ্রাস করা সহজ হবে। ১০০ গ্রাম আলু খেতে হলে অর্ধেক কাপ ভাত বা একটি মধ্যম আকারের রুটি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আবার ব্যায়াম করে অতিরিক্ত ক্যালরি ক্ষয় করলে ওজন হ্রাসের ডায়েট সফল হবে। বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলসের ঘাটতি পূরণের জন্য দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় আলুর বদলে অন্য সবজি বেশি করে রাখা যেতে পারে।
লেখক: চিকিৎসক