
সারা দিনের ক্যালরি হিসাব করেই খেতে চেষ্টা করছেন, নিয়ম মেনে করছেন ব্যায়াম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তারপরই। প্রচণ্ড ক্ষুধা পাচ্ছে, কিন্তু কী খাবেন এ সময়টায়, সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো।
সাধারণত যেকোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রমের পর খিদে লাগে। অনেকক্ষণ পরিশ্রমের পর কিছু খাওয়াটাও জরুরি। ওজন কমানো আর বাড়তি পরিশ্রমের জন্য খাবারে আনছেন অনেক বড় পরিবর্তন। যার ফলে কী খাব, কী খাব না—এই দ্বন্দ্বে একদিকে যেমন ঠিক খাবার খাওয়া হচ্ছে না, অন্যদিকে কম খেয়েও ওজন কমছে না। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওজন বেড়ে যাওয়ায় তৈরি হচ্ছে হতাশা। ওজন কমাতে চাইলে কিছু মূল খাবারের কথা ভুলে যাওয়া যাবে না কিছুতেই। এবারের আয়োজনে থাকছে সেসব খাবারের কথাই।
পানি ও তরল খাবার
যেকোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রমের পর শরীর থেকে প্রচুর ফ্লুইড বের হয়ে যায়। তাই ব্যায়ামের সময়, আগে, পরে প্রচুর পানি ও তরল খাবার পান করা জরুরি। সুস্থ থাকতে হলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারা দিনে অন্তত ১৩ গ্লাস পানি পান করতেই হবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়ামের পর চকলেট মিল্ক শরীরে পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি প্রোটিনের চাহিদাও পূরণ করতে সাহায্য করে।
এ ছাড়া টক জাম ও জামজাতীয় ফলের জুস পেশি গঠনে সহায়ক। অরিগ্যানো হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি কেউ দিনে দুই বেলা টক জামের জুস পান করে, তবে তা শুধু মাংসপেশি গঠনেই সহায়তা করবে না, বরং অদূর ভবিষ্যতে পেশির যেকোনো ধরনের ব্যথা থেকেও মুক্তি দেবে।
কার্বোহাইড্রেট
অনেকেই মনে করেন, ডায়েট মানেই কার্বোহাইড্রেট থেকে দূরে থাকা। আসলে কিন্তু তা নয়। যেসব খাবারকে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার বলা হয়, যেমন শর্করাজাতীয় খাবার, মিষ্টিজাতীয় খাবার, আঁশ—এসব সাধারণ খাবারেই পাওয়া যায়। এনার্জি মেটাবলিজমের জন্য কার্বোহাইড্রেট খুবই জরুরি। ব্যায়ামের পর এটি আপনাকে দেবে শক্তি। মাথায় রাখতে হবে, কার্বোহাইড্রেট মানেই কিন্তু ভাত নয়, আর সেটিও যেমন খুশি তেমন পরিমাণে খাওয়া যাবে না। কার্বোহাইড্রেট নিতে যেমন আপনার স্বাস্থ্যকর ডায়েটের একটা অংশ হতে পারে, তেমন অতিরিক্ত গ্রহণে বিপদও হতে পারে। কলা, আপেল, নাশপাতি, ব্রকোলি, বেরি—এ ধরনের ফলও শর্করার ভালো উৎস। ভাত, রুটি বা আলু খেতে না চাইলে এগুলো খেতে পারেন।
প্রোটিন
গবেষকেরা বলেন, ডায়েটে প্রোটিন এড়িয়ে যাওয়া যাবে না কিছুতেই; বরং ব্যায়াম, হাঁটা বা যেকোনো ধরনের ওয়ার্কআউটের পর প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মনে রাখতে হবে, সব প্রোটিন এক ধরনের হয় না। উৎস অনুসারে প্রোটিনের সুবিধা ও ঝুঁকিও কম-বেশি আসে। যেমন মাংসে প্রচুর চর্বি থাকে, যা শরীরের জন্য খুব একটা ভালো নয়। আবার মাছের প্রোটিন শরীরের জন্য উপকারী আবার ক্ষতিকারকও নয়। আবার ডালজাতীয় যেসব উদ্ভিদে প্রোটিন আছে, সেসব সেকেন্ড ক্লাস প্রোটিন হিসেবে ধরা হয় কিন্তু এ ধরনের প্রোটিনে ঝুঁকি একেবারেই নেই।
সবজি ও ফলের রস
শর্করা নেই কিন্তু ফাইবার আছে এমন সবজি খেতে পারেন ইচ্ছেমতো। চিনি ছাড়া যেকোনো ফল বা সবজির এক গ্লাস জুস পান করতে পারেন প্রতিদিন। সেটা ব্যায়ামের পর হতে পারে, সকালে হতে পারে, ক্ষুধা লাগলেও হতে পারে।
তাহলে আর দেরি না করে এখনই কিছুটা পরিবর্তন আনুন আপনার খাদ্যাভ্যাসে। থাকুন সুস্থ ও সচেতন।