তরুণ মনে রবীন্দ্রনাথ

রুন, একটা অলস দুপুর। বাইরে ঝুম বৃষ্টি! কোনো কাজ নেই, এঘর-ওঘর ঘুরে বেড়াচ্ছি। হঠাত্ গুনগুন করে গেয়ে ফেললাম, “আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে। জানি নে, জানি কিছুতে কেন যে মন লাগে না।” ভাবলাম, কি আশ্চর্য! আমার মনের ভাবনাটা সেই কবেই ভেবে রেখেছেন বিশ্বকবি।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে নিজের যোগাযোগটা এভাবেই বর্ণনা করলেন সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা তন্বী। তন্বীরা একালের তরুণ। তবু, মাঝে মাঝে মনের ভাব প্রকাশ করতে নাকি হাত পাততে হয় সেই আঠারো শতকের রবীন্দ্রনাথের কাছে, যদি দু-একটা শব্দ ধার পাওয়া যায়!রবীন্দ্রনাথের গল্প, কবিতা পড়েন কি না, কী ভাবনা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে? এসব প্রশ্ন নিয়েই ছুটে গিয়েছিলাম তরুণদের কাছে। ওই যে ওই কবিতাটা, সেই গল্পটা, অমুক চরিত্র, তমুক গান—গল্প আর ফুরাতেই চায় না! তবে কারও কারও অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়ে বলার কোনো গল্প নেই। তাঁদের কাছে, রবীন্দ্রনাথ কেবল পাঠ্যবইয়ের পাতাই দখল করেছেন, মন দখল করতে পারেননি। 

ইমতিয়াজ রশীদ চাকরি করছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, তাঁর গল্পটা অন্য রকম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিন পর্যন্তও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সমাবর্তনের দিন একটা ভিডিও দেখেছিলাম। আমাদের ক্যাম্পাস নিয়ে বানানো। ভিডিওটার আবহসংগীতে বাজছিল “পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়...।” কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে! সেদিনই প্রথম আবিষ্কার করলাম, রবীন্দ্রনাথের লেখনীর কী শক্তি।’ সেদিনের পর থেকে সময় পেলে রবীন্দ্রনাথের গল্প-কবিতা টুকটাক পড়ার চেষ্টা করেন ইমতিয়াজ। এখন নাকি ভেবে আফসোস হয়, কেন আগে পড়া শুরু করেননি!

নতুন করে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পেছনে বেশ খানিকটা অবদান শিরোনামহীন আর অর্ণবের। এমনটাই বোঝা গেল তরুণদের কথায়। অনেকে আজকাল গিটারে সামার অব সিক্সটি নাইনের পাশাপাশি ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে গানটির কর্ডগুলোও খুঁজতে শুরু করেছেন। নিজেদের মধ্যেও রবীন্দ্রসংগীত আদান-প্রদান করেন আজকাল। তরুণদের ফেসবুক স্ট্যাটাসেও আজকাল হুট-হাট জায়গা করে নিচ্ছে রবীন্দ্রনাথের উক্তি। নেবে না-ই বা কেন? তন্বী যেমন বলছিলেন, ‘আমার মনে হয় মানুষের এমন কোনো অনুভূতি নেই, যেটা রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখায় প্রকাশ করে যাননি।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজানা আসিফও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে খুব সুন্দর বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথের লেখার আসলে কোনো দেশ-কাল-পাত্র নেই। আপনি যে সময়েরই হোন না কেন, রবীন্দ্রনাথ আপনার চারপাশটাকে তাঁর করে নেবেন!’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি চলচ্চিত্রগুলোও তাঁদের মন জয় করে নিয়েছে।

যে তরুণ রবীন্দ্রনাথের দু-একটা গল্প-কবিতায় চোখ বুলিয়ে দেখবেন বলে ভাবছেন, আর দেরি কেন?

আপনার জন্যই তো তিনি লিখে গেছেন, ‘আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি কৌতূহলভরে...’ শুরুটা নাহয় এ কবিতা দিয়েই হোক।