তাঁর মেয়েও কাজ করতেন বিধ্বস্ত ভবনে

‘মামা, হেই দিনও আমি এহানে বসি আছিলাম।’

মুখের মাস্ক সরিয়ে কথাটা বললেন বিলকিস বেগম। তিনি মগবাজার প্লাজা নামের ভবনটিতে পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। এই ভবনের পূর্ব পাশেই ‘রাখি নীড়’। যে রাখি নীড় এখন ইট-সিমেন্টের বন্ধনহীন ভবন, ধ্বংসস্তূপ। গত ২৭ জুন ভয়াবহ বিস্ফোরণে ধসে পড়ে তিনতলা ভবনে হতাহত হয়েছেন অনেকে। বিস্ফোরণে ভবনটিসহ আশপাশের অনেকগুলো ভবন ও সড়কের কয়েকটি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মানুষ হতাহত হয়েছে। ভাগ্যক্রমে পাশের মগবাজার প্লাজায় থাকা বিলকিস বেগম অক্ষত ছিলেন। কিন্তু মনে যে ক্ষত হয়েছে, সেটাও তো কম কিছু নয়।

বিলকিস বেগম বলছিলেন, ‘আতকা বোমা ফাটার মতোন আওয়াজ হইল। দেহি সব অন্ধকার। ধুলাবালুতে কিছুই দেহা যায় না। আমি দৌড়াইয়া পাশের পাম্পে (ভবনের পাশেই আছে ফিলিং স্টেশন) গেলাম। মানুষ রাস্তায় পইড়া আছে। ভাঙা কাচ আর কাচ। একটা লাশও দেখলাম। আবার ভিতরে চলি আসলাম।’

বিলকিস বেগম
ছবি: সজীব মিয়া

১ জুলাই গিয়েছিলাম মগবাজারের ওয়্যারলেস গেটের সেই বিধ্বস্ত ভবনের সামনে। একে তো লকডাউন, তার ওপর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, আশপাশের ভবন বন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দাদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। কয়েক পুলিশ সদস্য পাশের একটি বিপণিবিতানে বসেছিলেন। একটা ভুতুড়ে পরিবেশ যেন। তখনই পাশের মগবাজার প্লাজার নিচে বিলকিস বেগমের সঙ্গে দেখা।

কলাপসিবল গেট টানা মগবাজার প্লাজার নিচে কাঠের একটি টুল পেতে বসেছিলেন বিলকিস বেগম। সামনের ব্যস্ত মালিবাগ থেকে মগবাজার আসার রাস্তায় দু-একটা রিকশার আনাগোনা। সেদিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বসেছিলেন বিলকিস বেগম। আলাপের সময় বলছিলেন, ‘এই হানে বসেই দেখছি মামা, ওই যে আইল্যান্ড, ফ্লাইওভারের নিচে, ওইহানে মানুষ পইড়া আছে, রক্ত দিয়া ভরা।’

বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবনটি, ২৯ জুন তোলা
ছবি: সজীব মিয়া

বিলকিস বেগম বলে যান আরও অনেক কথা—দুর্ঘটনার পর আর ওই ভবনের দিকে যান না, গেলেই নিহত মানুষদের কথা মনে পড়ে, যাঁদের কয়েকজনকে তিনি চিনতেন। মনে পড়ে তাঁর মেয়ের কথাও। বিধ্বস্ত ভবনে বেঙ্গল মিটের বিক্রয়কর্মী ছিলেন তাঁর মেয়ে। করোনার সময় চাকরি ছেড়েছেন। জানুয়ারি মাসে বিয়েও দিয়েছেন। ভাবতেই পারেন না, মেয়েটা সেদিন থাকলে কী হতো।