তাদের পুষ্টি চাহিদা

ক্যানসারের চিকিৎসায় পথ্য ও ওষুধ একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি শক্তিশালী পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয়। যা ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলো ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অন্যান্য কোষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে রোগীর পুষ্টি চাহিদার পরিবর্তন ঘটে। রোগীর শরীরে রজাল্পতা, ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা ওজন হ্রাস, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রভৃতি সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে; যা সঠিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের মাধ্যমে অনেকাংশে নিরাময় সম্ভব। এই সময় পুষ্টি-ঘাটতি দেখা দেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে:
* কেমোথেরাপির ফলে সৃষ্ট মুখের ভেতরের ঘা।
* দীর্ঘমেয়াদির চিকিৎসার কারণে রুচি ও স্বাদের পরিবর্তন।
* দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি ওজন হ্রাসের কারণে পুষ্টি ক্যালরি চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
* হজমশক্তি হ্রাস।
* খাদ্যনালি সরু হয়ে যায়।
* মুখে লালার পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় খাবার গিলতে অসুবিধা হয়।
* ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে মাছ ও মাংসজাতীয় খাবারগুলো বিস্বাদ লাগার কারণে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ
হন অনেকে।

কেন সঠিক খাদ্য নির্বাচন করতে হবে?
* ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সঠিক পরিমাণ ও পুষ্টিসম্পন্ন খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
* শরীরের ক্ষয়পূরণ ও টিস্যুর ক্ষয়রোধ করার জন্য সঠিক খাদ্য নির্বাচন করতে হবে।
* সঠিক খাদ্য গ্রহণ না করলে শরীরের সঞ্চিত প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের দ্রুত ক্ষয় হতে থাকবে। এ জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং ওজন ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকবে।
* ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সঠিক খাদ্য নির্বাচন করতে হবে।
* রক্তস্বল্পতা, এলবুমিনের সঠিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য উচ্চতর প্রোটিন ও আয়রনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
* হাড়ের ক্ষয়রোধ করার জন্য ক্যালসিয়ামযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হয়।

কী ধরনের খাবার গ্রহণ করা উচিত
সবজি ও ফল: যেসব ফল ও সবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। অধিক পরিমাণ পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ফলিক অ্যাসিড, পাইরোডক্সিন আছে। সবুজ শাক, ডুমুর ফল, মাশরুম, টমেটো, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, শিকড়সহ মুগ বা ছোলা, পুদিনা, কুমড়াশাক, লাউশাক অত্যন্ত কার্যকরী সবজি। সব রকমের ফল, বিশেষ করে আমলকী, জাম্বুরা, হরীতকী, পেয়ারা, লেবু, আঙুর, পাকা পেঁপে, ডাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রোটিন-জাতীয় খাদ্য
উচ্চ মানসম্পন্ন প্রোটিন-জাতীয় খাদ্যতালিকায় দুধ, টকদই, ছানা, ডিম, মাছ, বাদাম, ডাল যোগ করতে হবে।

আঁশজাতীয় খাবার
শরীরে সৃষ্ট টক্সিন দূর করার জন্য এবং অতিরিক্ত ফ্যাটি কমানোর ক্ষেত্রে আঁশজাতীয় খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেসব খাবারে আঁশ বা ফাইবারের পরিমাণ বেশি, যেমন: শাক, ডাঁটা, কচুর লতি, খোসাসহ পেয়ারা অন্যান্য পাতাজাতীয় সবজি নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে। ঢেঁকিছাঁটা চাল, ইসবগুলের ভুসি, কাঁচা ছোলা, লাল ডাঁটা, কাঠবাদাম (খোসাসহ) ইত্যাদি দৈনিক গ্রহণ করা উচিত।

সঠিক ক্যালরি-সমৃদ্ধ খাবার
এই সময় দৈহিক ওজন স্বাভাবিক রাখা খুব জরুরি। বেশি ওজন হলে অধিক মাত্রায় ওষুধ দিতে হয়, যার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হয়। আবার অতিরিক্ত কম ওজন হলে নির্ধারিত মাত্রায় ওষুধ দেওয়ার আগেই রোগী দুর্বল হয়ে যায়। রোগীর ওজন, উচ্চতা ও কাজের ধরন অনুযায়ী ক্যালরির পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
ক্যানসার নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সবার ক্ষেত্রে সমান হয় না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নির্ভর করে রোগীর বয়স, স্বাস্থ্যগত অবস্থা, ক্যানসারের বিস্তৃতি, শরীরের পুষ্টিগত অবস্থা ইত্যাদির ওপর। ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করার ক্ষেত্রে ওষুধ ও পথ্য একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। রোগীকে মনোরম পরিবেশে পরিবারের সবার সঙ্গে বৈচিত্র্যময় খাদ্য পরিবেশনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আকৃষ্ট করতে হবে।
লেখক: পুষ্টি ও পথ্য বিশেষজ্ঞ