
দাম্পত্য জীবনে ঝগড়ার বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমন হচ্ছে তেল। ঘরে তেল আছে কি নেই, এটা নিয়ে মহা গ্যাঞ্জাম! ঘরে আর যা কিছুই থাক, তেল না থাকলেই লঙ্কাকাণ্ড! যা হোক, আপনি ভাববেন না যে মানবজীবনে তেলের গুরুত্ব কেবল দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া মেটানোর ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ।
যে যত বেশি তেল দিতে পারে, জীবনে সে তত বেশি সফল। আর নিজেরও তেল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাঝেমধ্যেই আমরা বলি, ‘না ভাই, এত তেল নাই যে এই সাতসকালে/ ভরদুপুরে/ ভর সন্ধ্যায়/ মাঝ রাতে...!’ আরব দেশগুলোর দিকে তাকান, তেল আছে বলেই তাদের কেমন রমরমা! তেল সাপ্লাই করেই তো তাদের এত টাকাপয়সা। তবে তেল থাকলে আপনাকে কিন্তু বেশ সাবধান থাকতে হবে! কারণ, আপনি অধিক তেলের অধিকারী হলে যেকোনো সময় যেকোনো শক্তিধর আপনাকে আক্রমণ করে বসতে পারে!
ডিম ভাজি থেকে শুরু করে গাড়ি, অ্যারোপ্লেনও চলে তেল দিয়ে। তেল দিয়ে তো আসলে পুরো জীবন চলে আমাদের। ক্লাস ফাইভে ডাবলু ফার্স্ট হলো গাবলুর চেয়ে ১ নম্বর বেশি পেয়ে। তখন গাবলু স্যারকে তেলটেল দিয়ে ২ নম্বর বাড়িয়ে হয়ে গেল ফার্স্ট! রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে ঈদের টিকিট কাটার সময় টিকিটওয়ালা—কাকে তেল মারতে হয় না?
আবার মাঝেমধ্যে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তেল দিতে হয় মানুষজনকে। আমাদের পাড়ার মন্টু ভাই, ব্যাটিং-বোলিং পারতেন না কিছুই। কিন্তু আগে ব্যাট করতে নামবেন। আগে বল করতে যাবেন। কারণ, ব্যাট-বল দুটোই যে তাঁর। যে তাঁর বিরোধিতা করবে, পরদিন থেকে তাকে আর খেলায় নেওয়া হবে না। এই তাঁর নীতি। তাই তাঁর সঙ্গে দেখা হলে তিনি কত দারুণ ব্যাটিং করেন, তাঁর বোলিং অ্যাকশনটা কী দুর্দান্ত—এসব বলে তেল মারতে হতো। অন্য ছেলেদের, যাদের ব্যাট-বল আছে, তিনি মোটেও তাদের মতো ছিলেন না। নিজেদের ব্যাট-বল থাকায় অন্যদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করত, কিন্তু মন্টু ভাই করতেন না। এসবও বলতে হতো তেল দেওয়ার সময়।
আমি কিন্তু ভাই এই তেল মারামারির মাঝে নেই! এই তেল মারা জিনিসটা আমি একদম সহ্য করতে পারি না। এই লেখা ছাপার জন্য আমি সম্পাদককে কোনো তেলটেল মারিনি। আমাদের রস+আলোর সম্পাদক কিন্তু বড়ই ভালো মানুষ। তাঁর মতো রুচিশীল, রসবোধসম্পন্ন, ব্যক্তিত্বপূর্ণ, দেশ ও জাতি নিয়ে চিন্তাশীল মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি। তিনি তাঁর প্রগাঢ় ব্যক্তিত্ব ও রুচিশীলতার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে রস+আলো যেভাবে সম্পাদনা করে এসেছেন, তা বরাবরই আমাকে অবাক করে।