দলবেঁধে বনভোজনে

পিকনিকের সময়টা আনন্দে কাটাতে দরকারি জিনিসপত্র সঙ্গে রাখা জরুরি। ছবি: নকশা
পিকনিকের সময়টা আনন্দে কাটাতে দরকারি জিনিসপত্র সঙ্গে রাখা জরুরি। ছবি: নকশা

শীতের মৌসুম এলেই ভ্রমণে যোগ হয় এক বাড়তি মাত্রা। বছরজুড়ে তো ঘোরাফেরা হয়ই, কিন্তু শীতের আমেজটাই যে একটু ভিন্ন। স্কুল-কলেজেও মেলে ছুটির ঘণ্টা। তাই পরিবারের সবাই মিলে সহজেই ঘুরে আসা যায়। কিন্তু যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, প্রয়োজন পূর্বপ্রস্তুতির। আগে থেকে যদি পরিকল্পনা মোতাবেক জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা হয়, তাহলে ভ্রমণটাও পূর্ণ হবে ষোলো আনায়।

কোথায় যাবেন এবং কজন যাবেন

সবার আগে পিকনিকের স্থান বাছাই করুন। সেই সঙ্গে ঠিক করে নিন যাত্রীর সংখ্যা। আপনি কি পরিবারের সঙ্গে যাচ্ছেন, নাকি বন্ধুমহলের সঙ্গে, প্রস্তুতি নিতে হবে সেই অনুযায়ী। কেননা, বন্ধুমহলের সঙ্গে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সময় হয়তো শুধু ব্যাগটা গুছিয়ে নিলেই হলো। কিন্তু পরিবার কিংবা ছোট শিশুটিকে নিয়ে পিকনিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু ব্যাগটা গোছানোই যথেষ্ট নয়। আবার আপনি যদি যুগল কিংবা দম্পতি হিসেবে যেতে চান, তাহলে পূর্বপ্রস্তুতির তালিকায় যোগ হবে আরও ভিন্ন কিছু পরিকল্পনা। গাজীপুরের গ্রীনটেক রিসোর্টের ব্যবস্থাপক নয়ন তালুকদার বলেন, বিভিন্ন রিসোর্টেই এখন দম্পতি, পরিবার কিংবা বন্ধুমহল সবার জন্যই সুবিধাজনক ব্যবস্থা থাকে। এ ছাড়া কোনো কোনো রিসোর্ট নিজেরাই গাইডের সুবিধা দিয়ে থাকে। তাই এ বিষয়গুলো খেয়াল রেখেই স্থান নির্বাচন করুন। এবার কোথায় যাচ্ছেন, কত দিন থাকবেন তার ওপর নির্ভর করেই জিনিসপত্র গুছিয়ে ফেলুন ঝটপট।

যাতায়াতের ঝক্কিটা তো আর কম নয়, তাই সঙ্গে রাখা চাই প্রয়োজনীয় খাবার। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভারী বা ক্যালরিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে শুকনা খাবার সঙ্গে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ও এন্টারপ্রেনার্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসিমা নাসরিন। তিনি বলেন, ‘অনেকের মোশন সিকনেস ও লো-প্রেশারের সমস্যা থাকে। তাই হালকা স্ন্যাকস-জাতীয় খাবার যেমন বিস্কুট, বাদাম, চকলেট, চিপস, ফল এগুলো সঙ্গে নিয়ে নেওয়াই ভালো। চাইলে মৌসুমি ফলের জুসও নিতে পারেন৷’

এ ছাড়া আপনি চাইলে ঘরে তৈরি করা স্যান্ডউইচ, কুকিজ, ফ্রুট সালাদ সঙ্গে নিতে পারেন। খাবার অবশ্যই ভালো মানের প্লাস্টিকের কনটেইনারে নিয়ে নিন, যাতে স্বাস্থ্যসম্মত ও গরম থাকে। যতটা সম্ভব ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। কেননা, যাত্রাপথে এ ধরনের খাবার অ্যাসিডিটি ছাড়া আপনার অন্য কোনো উপকারেই আসবে না।

শীতের পোশাক ও জুতা

ঢাকায় তেমন শীতের প্রকোপ না থাকলেও ঢাকার বাইরে কিন্তু শীতের আমেজ রয়েছে বেশ জোরেশোরেই। সেই হিসাবেই গুছিয়ে ফেলুন আপনার শীতের পোশাক। আর সঙ্গে যদি শিশু থাকে, তাহলে প্রয়োজন আরও কিছু সতর্কতার। শিশুর হাতমোজা, কানটুপি, মাফলার, কেডস গুছিয়ে রাখুন। সেই সঙ্গে শিশুর খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপাতিও মনে করে গুছিয়ে ফেলুন। দুপুরের সময় রোদের মাত্রা একটু বেশি থাকে। তাই সেই সময়টার জন্য নিতে পারেন হালকা কোনো পোশাক। ভ্রমণে যেহেতু অনেক হাঁটতে হয়, তাই জুতাজোড়া হিসেবে কেডস কিংবা স্নিকার বেছে নিন।

টুকিটাকি সরঞ্জাম

শীত মৌসুমে পিকনিকের অন্যতম আয়োজন হিসেবে অনেকেই বারবিকিউর পরিকল্পনা করে রেখেছেন। তবে বারবিকিউর বিভিন্ন সরঞ্জাম পরিবহন করা একটু ঝামেলাই বটে। তাই সমস্যা এড়াতে রিসোর্টেই আগে থেকে বলে রাখুন। ফলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা থাকবে সেখানেই।

এ তো গেল বারবিকিউ। এ ছাড়া বন্ধুরা মিলে সমুদ্রপাড়ে হ্যামক খাঁটিয়ে থাকতে পারেন কিংবা পাহাড় হলে তাঁবু গেড়েও থাকা যায়। তাই হ্যামক, তাঁবু, বড় ব্যাকপ্যাক আগেভাগেই কিনে রাখুন। পরিবার-পরিজন মিলে হয়তো পিকনিক স্পটেই কোথাও চাদর বিছিয়ে খাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তাই সে অনুযায়ী চাদর, ম্যাট, খাবারের ঝুড়ি, প্লেট, চামচ, ছুরি, কাটার বোর্ড নিয়ে নিন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক হলো ওয়ান টাইম প্লেট-গ্লাস। এগুলো বহন করার সুবিধা তো আছেই, সেই সঙ্গে খাওয়া শেষে ধোয়ার ঝামেলাটাও নেই। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ সব সময়ই পার্সে বা ব্যাগে রাখুন। এ ছাড়া যাঁদের বহুমূত্র, উচ্চরক্তচাপসহ নানা সমস্যা আছে, তাঁরা সেই অনুযায়ী ওষুধপত্তর নিয়ে নিন।

প্রয়োজনীয় আরও কিছু

l ড্রাইভিং লাইসেন্স, পরিচয়পত্র সঙ্গেই রাখুন। প্রয়োজনে পাসপোর্ট কিংবা ক্রেডিট কার্ডের ফটোকপি নিয়ে নিন।

l যেখানে বেড়াতে যাবেন, সেখানকার জরুরি ফোন নম্বর ও লোকেশন সম্পর্কে ঠিকমতোজেনে নিন।

l টর্চলাইট, অতিরিক্ত ব্যাটারি, থ্রিপিন প্লাগ, চার্জার সঙ্গেই রাখুন। গাড়িতে চার্জের কোনো ব্যবস্থা না থাকলে পাওয়ার ব্যাংক খুবই সুবিধাজনক।

l জলজ স্থান হলে ক্যামেরা, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, বাইনোকুলার পলিথিনে মুড়িয়ে নিন।

l সুযোগ পেলেই ডিভাইসগুলো ফুল চার্জ দিয়ে নিন।

l ঠান্ডাজাতীয় খাবার সংরক্ষণের জন্য সঙ্গে আইসব্যাগ রাখতে পারেন।

কোথায় পাবেন

ভ্রমণে যাওয়ার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম মিলবে হাতের কাছেই। যেমন হ্যামক, তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ, ব্যাকপ্যাক পেয়ে যাবেন আজিজ সুপার মার্কেট, গ্রিন রোডের অ্যাডভেঞ্চার শপ, এলিফ্যান্ট রোড, পল্টন মোড়ে। তাঁবুর সঙ্গে প্রয়োজনীয় ইনফ্লোটেবল পিলো, নেক পোলো, ওয়াকিং স্টিক, পায়ে দেওয়ার বুট, ট্র্যাকিং স্যান্ডেল মিলবে পল্টন মোড়ে।

এ ছাড়া বিভিন্ন অনলাইনের পেজ থেকেও আপনি কিনতে পারেন প্রয়োজনীয় এই জিনিসগুলো।

দরদাম

বড় ব্যাকপ্যাক পাবেন ১৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে। স্লিপিং ব্যাগ পড়বে ২০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা, হ্যামক ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকা, ইনফ্লোটেবল পিলো, যা বাতাস দিয়ে ফুলিয়ে নিতে হয়, মিলবে ৩০০ টাকার মধ্যেই।

এ ছাড়া মাল্টি টুলস, বাইনোকুলার, টর্চ, হেডল্যাম্প, ট্র্যাকিং স্যান্ডেল, বুট, ওয়াটার ফ্লাস্ক, খাবার সংরক্ষণের ড্রাই-ব্যাগ, কাটিং নাইফ, ওয়ানটাইম প্লেট-গ্লাস মিলবে ৩০০ থেকে ৮০০০ টাকার মধ্যে।