দিল্লিতে বাংলাদেশিদের পূজা ও ঈদ

পূজায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
পূজায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

২০১০ সালে সার্ক দিল্লিতে সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এখানে সাতটি বিভাগে মাস্টার্স ও পিএইচডি করানো হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে মাস্টার্স ও পিএইচডিতে মোট ৫৬ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। কয়েক দিন আগে উদযাপিত হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সর্বজনীন উত্সব শারদীয়া দুর্গোত্সব এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের ঈদুল আজহা। এর পরশ লেগেছিল এখানকার বাংলাদেশিদের মধ্যেও।

সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু বিভাগে এখন পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে পারেনি পূজা ও ঈদের আমেজ থেকে। যথাযথ মর্যাদায় মহাঅষ্টমীর দিন দিল্লির সফদারজংয়ের বাঙালি মন্দিরে পুষ্পাঞ্জলি ও আরাধনা দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা শারদীয়া শুরু করে এবং পরে সিআর পার্কের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে উদযাপন চলতে থাকে। দুপুরে মন্দিরে প্রসাদ গ্রহণে পূর্ণতা পায় দুর্গোত্সব। সন্ধ্যা গড়াতে গড়াতে উত্সব আরও সর্বজনীন হয়ে ওঠে সবার একসঙ্গে বিভিন্ন মণ্ডপে ঘোরা দিয়ে। ধর্ম ভেদাভেদ ভুলে সব বাংলাদেশি শিক্ষার্থী শারদীয়া উত্সবে মেতে ওঠেন। এবার পূজায় অষ্টমী আর নবমী একদিনে হয়ে যাওয়ায় উত্সবে কিছুটা ভাটা পড়ে যায়। দুর্গাপূজা কিছুটা বাঙালি সংস্কৃতি হওয়ায় ভারত তথা অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে একটু কম আগ্রহ দেখা গেলেও এখানকার ভারতীয় বাঙালিরা পুরোদমে যোগ দিয়েছিল বাংলাদেশিদের সঙ্গে।

ঈদের নামাজ শেষে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
ঈদের নামাজ শেষে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

অন্যদিকে ৬ অক্টোবর বাংলাদেশি মুসলমান শিক্ষার্থীরা যথাযথ মর্যাদায় পালন করেন তাঁদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উত্সব ঈদুল আজহা। অন্যান্য দেশের মুসলিম ধর্মাবলম্বীসহ সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে মুখর হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। এবার বাংলাদেশি সবার একসঙ্গে দিল্লির বিখ্যাত শাহি ঈদগাহে নামাজ পড়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষা ও নামাজের সময় একটু সকালে হওয়ায় অনেকে যেতে পারেননি। বাকিরা এই বিখ্যাত ঈদগাহে নামাজে অংশগ্রহণের সুযোগ ছাড়েননি। যাঁরা সেখানে যেতে পারেননি, তাঁরা দিল্লির বিখ্যাত জামা মসজিদে ঈদের নামাজে অংশ নেন।

তবে দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে সেমাই খেয়ে নামাজে যেতে ভোলেননি শিক্ষার্থীরা। বায়োটেকনোলজির শামীমা ও সমাজবিজ্ঞানের তন্বীর রান্না করা সেমাই সবাইকে এই পরবাসে দেশের একপরশ সুবাস দিয়ে যায় ভোরবেলায়। দুপুরবেলা ক্যাম্পাসের মেসে আয়োজন করা হয় বিশেষ খাবারের। পাশাপাশি পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাটা হয় কেক। বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সবার মধ্যে তা বিতরণ করার মধ্যে দিয়ে একটা উত্সবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এসব আয়োজন করা হয় আসলে উত্সবের দিনগুলোতে পরিবার ও স্বজনদের থেকে হাজারো মাইল দূরে থাকার দুঃখটা ভুলে থাকতে এবং বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এই ছোট্ট পরিবারকে একসঙ্গে মজা করার সুযোগ করার জন্য। পাশাপাশি এসব ছোট্ট আয়োজন বাংলাদেশিদের সুযোগ করে দেয় নিজের দেশের সংস্কৃতিটাকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের সামনে মেলে ধরার। বাংলাদেশিদের একতা ও অনুষ্ঠানপ্রিয়তা এসবের মাঝেই ফুটে ওঠে। সবার সামনে ফুটে ওঠে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে নিয়ে গড়ে ওঠা আমাদের এই ছোট্ট পরিবারের ভালোবাসা ও একতা।

সুমিত কুমার বংশাল

(মাস্টার্স দ্বিতীয় বর্ষ, কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ)

সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লি, ভারত