নতুন জাফর আলম

বিশ্বের নানা দেশে সার্ফিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তিনি। কক্সবাজারের সার্ফার জাফর আলম উঠে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ছবি ‘গাম ফর মাই বোট’-এও 

অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে জাফর আলম
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে জাফর আলম

মুঠোফোনের অপর প্রান্তে সার্ফার জাফর আলমের কণ্ঠস্বর কিছুটা দুর্বল শোনাচ্ছিল। বলছিলেন, ‘শরীরটা একটু খারাপ। কয়েক দিন আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরলাম। সেখানে টানা তিন মাস সার্ফিং নিয়েই ছিলাম। এখন কয়েকটা দিন বিশ্রাম নিতে চাই।’ অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণের কথা শুনে আমাদের ‘কিশোর জাফর আলমের’ কথা মনে পড়ে গেল। তখন তাঁর বয়স ১৪ বছর, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে একা একা হাঁটছিলেন। একজন অস্ট্রেলীয় নাগরিককে সার্ফিং করতে দেখে কৌতূহলবশত বলেছিলেন, ‘আমি কি তোমার সার্ফ বোর্ডটা কিনে নিতে পারি?’ সেই থেকে শুরু। অস্ট্রেলীয় নাগরিকটি জানতেন না, একদিন সার্ফ বোর্ড সম্বল করেই এই কিশোর তাঁর দেশ অস্ট্রেলিয়া ঘুরে আসবে! 

‘গাম ফর মাই বোট’ তথ্যচিত্রে
‘গাম ফর মাই বোট’ তথ্যচিত্রে

শুধু অস্ট্রেলিয়াই নয়, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সার্ফিং করেছেন জাফর আলম। এখনো যাওয়া হয়নি, এমন অনেক দেশেও পৌছে গেছে তাঁর নাম। কীভাবে? পরিচালক রাসেল ব্রাউনলের নির্মিত চলচ্চিত্র গাম ফর মাই বোট-এর মাধ্যমে। বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সার্ফিং আর জাফর আলমকে কেন্দ্র করে এটি তৈরি হয়েছিল ২০০৯ সালে। ৩৩ মিনিটের এই ভিডিওচিত্রকে আপনি চাইলে তথ্যচিত্রও বলতে পারেন। তবে রাসেল ব্রাউনলে একে পুরোদস্তুর ‘সিনেমা’ই বলছেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গাম ফর মাই বোট যেভাবে পূর্ণ মনোযোগ ধরে রাখল, ব্রাউনলের সঙ্গে একমত না হয়ে উপায় নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা কাহানা কালামার সঙ্গে জাফর আলম
যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা কাহানা কালামার সঙ্গে জাফর আলম

গাম ফর মাই বোট
পুরো গল্পের সঞ্চালক নির্মাতা কাহানা কালামা, যুক্তরাষ্ট্রের একজন পেশাদার সার্ফার। ‘দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্র একটি দেশ’, বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল এতটুকুই। ছবিতে কাহানার চোখেই বাংলাদেশকে দেখতে চেষ্টা করেছেন পরিচালক। এ দেশে পা রেখে ‘ক্রাউডেড’, ‘ক্রেজি’ শব্দগুলো ছাড়াও আরও একটা শব্দ উঠে এসেছে তাঁর বর্ণনায়—কালারস! চেনা কক্সবাজার শহরের রংগুলো নতুন করে খঁুজে পাবেন এই চলচ্চিত্রে। শুধু রংই নয়, কাহানার জন্য অপেক্ষা করছিল অনেক বিস্ময়ও। যে দেশে সার্ফিং এখনো তেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি, সে দেশের এক দরিদ্র কিশোর যদি হাসি হাসি মুখ করে বলে, ‘আমার নাম ফাহাদ। আমার বয়স ১৩। আমি চার বছর ধরে সার্ফিং করতেছি।’ ব্যাপারটা তাঁর জন্য বিস্ময়কর তো বটেই!

জাফর আলম
জাফর আলম

জাফর আলমের হাত ধরে বাংলাদেশে সার্ফিংয়ের সূচনা, সার্ফিং দ্য ন্যাশনের ভূমিকা, বাংলাদেশে সার্ফিং ক্লাব গড়ে ওঠা—সবকিছু্ই উঠে এসেছে গল্পে। সম্ভবত আবহ সংগীতের কারণেই পুরো সিনেমাটি বেশ একটা আমুদে ভাব ধরে রাখে, সঙ্গে চমৎকার দৃশ্যায়ন তো আছেই। গাম ফর মাই বোট প্রসঙ্গে জাফর আলম বলছিলেন, ‘কাহানার সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে। তাঁর সঙ্গে আমাদের সবার খুব ভালো সময় কেটেছিল। এখন বিভিন্ন দেশে এই চলচ্চিত্রটা দেখানো হয়, ভাবতে খুব ভালো লাগে। এ নিয়ে গর্ববোধ করি।’
বাংলাদেশ সার্ফ ক্লাব
বিশ্বের নানা দেশে সার্ফিংয়ের অভিজ্ঞতা হয়েছে, পরিচয় হয়েছে অনেক দেশের সার্ফারদের সঙ্গে। তবে জাফর আলমের কাছে কক্সবাজারই সার্ফিংয়ের জন্য সেরা। ‘এবার অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে দেখলাম, সৈকতে হাজার হাজার পর্যটকদের ভিড় থাকে। বাইরের দেশগুলোতে পানি খুব ঠান্ডা, ছড়ানো-ছিটানো পাথর থাকে, হাঙরের ভয়ও আছে। এসব বিবেচনা করলে কক্সবাজারই সার্ফিংয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো। তাই অস্ট্রেলিয়ান সার্ফারদের বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’
জাফর আলম সার্ফিং শিখেছিলেন নিজ চেষ্টায়। এখন দেশি-বিদেশি অনেককেই সার্ফিং শেখান। বাংলাদেশি সার্ফারদের গড়া বাংলাদেশ সার্ফ ক্লাব এবং স্কুলের সদস্যসংখ্যা এখন ৩০ জন। সার্ফিংয়ে আগ্রহী হলে এই ই-মেইল ঠিকানার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন: [email protected]