নিয়নের সোজাসাপ্টা খেলা
‘আজকে আফিফ আর মিরাজের ব্যাটিং তো পুরাই পাগলা!’
‘ভাই রে ভাই! কুমিল্লা ক্যামনে ম্যাচটা বাইর কইরা আনল!’
এমন ঘরোয়া আর অন্তরঙ্গ বাংলায় খেলাধুলা নিয়ে গল্প করেন নিয়ন। যেন কোনো টঙের আড্ডায় কথা হচ্ছে। সংখ্যাতত্ত্বের বিশ্লেষণ নেই, পরিসংখ্যানের ভিড়ভাট্টা নেই, একদম সোজাসাপ্টা আলাপ। নিয়ন এ আলাপের নাম দিয়েছেন ‘নুব ডিসকাসন’। বাংলায় ‘অনভিজ্ঞের আলোচনা’। কথায় কোনো ভানভণিতা নেই বলেই হয়তো তাঁর কনটেন্ট পছন্দ করছে মানুষ। ফেসবুকে নিয়নের ভিডিও পাচ্ছে লাখো ‘ভিউ’।
ভিডিও অন
পুরো নাম শিহাব হাসান নিয়ন। আর ফেসবুকে তাঁর পেজটির নাম ‘নিয়ন অ্যান্ড অন’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই স্নাতক খেলাধুলাসংক্রান্ত কনটেন্ট বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। ফেসবুকে তাঁর পেজের অনুসারীর সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি।
কলেজজীবনে সেরা বিতার্কিকের স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাই কথায় কোনো জড়তা ছিল না কখনোই। কিন্তু কনটেন্ট বানানোর শুরুটা হলো কীভাবে? নিয়ন বলেন, ‘২০২০ সালের মার্চে মাসে ভিডিও বানানো শুরু করি। প্রথম দিকে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট বানাতাম। ২০২১ সালে খেলাধুলাবিষয়ক কনটেন্ট বানাতে শুরু করি। ভালো লাগা থেকেই এই কাজগুলো করি। খেলাধুলা এমন একটা বিষয়, এখানে যেমন খেলাধুলার বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করা যায়, আবার এ–সংক্রান্ত বিনোদনমূলক ভিডিও-ও বানানো যায়। এই জনরাটা একদম খোলা। বিভিন্নভাবে সেটাকে কাজে লাগানো যায়।’
ল্যাপটপে বা টিভিতে খেলা দেখার সময় নিয়ম মাথায় রাখেন, তাঁর মতো লাখো দর্শক এ খেলা দেখছে। ভিডিও বানানোর সময় এই সাধারণ মানুষগুলোর প্রতিনিধিত্বই করতে চেষ্টা করেন তিনি। আর দশজন ক্রীড়াপ্রেমীর আবেগ, উত্তেজনার প্রতিফলনই থাকে তাঁর কনটেন্টে।
সোজা কথা বলা সহজ নয়
খেলাধুলাসংক্রান্ত কনটেন্ট বানানো বেশ চ্যালেঞ্জিংও, বলছিলেন নিয়ন। তাঁর বক্তব্য, ‘ধরেন আমি স্প্যানিশ লিগ বা প্রিমিয়ার লিগের একটা ফুটবল ম্যাচ নিয়ে ভিডিও বানালাম। পরের দিনই আবার অন্য একটা খেলা থাকে। তার মানে আমার ভিডিওটার কার্যকারিতা ওই এক দিনের। অন্য বিষয়ের ভিডিও যেমন অনেক দিন ধরে মানুষ দেখে, আমার ভিডিওর ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা কম। এ বিষয়টা খুব চ্যালেঞ্জিং।’ আবার মানুষের আবেগ–অনুভূতির কথাও মাথায় রাখতে হয় ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’ নিয়নকে। বলছিলেন, ‘আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ ইউরোপিয়ান ফুটবল অনুসরণ করে। যারা নিজেদের পছন্দের ক্লাবের পাগলা ভক্ত। ওরাও তো আমার মতোই ফুটবল ভালোবাসে। তাই আমার কথা শুনে কেউ মন খারাপ করুক, এটা আমি চাই না। আবার আমার নিজস্ব মতামতও মানুষ শুনতে চায়। তাই কাউকে কষ্ট না দিয়ে নিজের মতামত তুলে ধরার একটা ভারসাম্য রাখতে চেষ্টা করি। এই চ্যালেঞ্জগুলো আছে বলেই কিন্তু কাজটা আনন্দের।’
নিয়ন এখন পূর্ণকালীন কনটেন্ট ক্রিয়েটর। এই কাজকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। কখনো বিনা মূল্যে ক্রীড়া সরঞ্জাম বিতরণ করতে চলে যাচ্ছেন সিরাজগঞ্জে। কখনো মাইক্রোফোন আর ক্যামেরা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন, সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে করেন খেলাধুলাসংক্রান্ত কুইজের আয়োজন। ইদানীং তাঁর ভিডিওগুলোতে স্পনসরও চোখে পড়ছে। বড় লক্ষ্য নিয়েই সামনে এগোচ্ছেন তিনি। নিয়ন মনে করেন, এই পেশায় ভালো করা সম্ভব। দেশে কিংবা দেশের বাইরে এমন অনেক উদাহরণ আছে।
দেশের বাইরে ভারতীয় ইউটিউবার তন্ময় ভাটের ভক্ত নিয়ন। তন্ময় ভাটের আইডিয়া তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। এ ছাড়া তিনি ইউটিউবার মিস্টার বিস্টকেও (জিমি ডোনাল্ডসন) অনুসরণ করেন। জানালেন, বাংলাদেশের ইউটিউবার রাফায়াত রাকিব শুরুর দিকে নিয়নকে এ পেশায় আসতে উৎসাহিত করেছেন।
ফুটবল অন্তঃপ্রাণ
ভিডিও বানানোর সুবাদে এরই মধ্যে বেশ কজন খেলোয়াড়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিয়ম। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের কয়েকজন ফুটবলারও। সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে বিশেষ কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে? নিয়ন বললেন, ‘একটা মজার ঘটনা আমার এ মুহূর্তে মনে পড়ছে। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় ও বসুন্ধরা কিংসের অধিনায়ক তপু বর্মণের সঙ্গে আমাদের একটা ভিডিও শুটের কথা ছিল। বিকেল চারটায় দেখা করার কথা। কিন্তু আমি বাসা থেকে বের হয়েই ভয়াবহ যানজটে পড়ে যাই। ওদিকে তপু ভাই নির্ধারিত ভেন্যুতে গিয়ে বসে আছেন। এত বড় একজন স্টারকে অপেক্ষা করিয়ে রেখেছি, ভেবে নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পৌঁছানোর পর তপু ভাই ব্যাপারটা এত সহজভাবে নিলেন, আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। এরপর আমরা খুব মজা করে ভিডিওটা বানিয়েছি।’
বাংলাদেশের ফুটবলের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে চান এই ক্রীড়াপ্রেমী কনটেন্ট ক্রিয়েটর। যেহেতু দেশীয় ফুটবলের প্রতি তরুণেরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন, তাই দেশি ফুটবলার ও দেশের ফুটবল নিয়ে বেশি বেশি কনটেন্ট তৈরি করতে চান তিনি।