
নানা কাজে দলিল-দস্তাবেজ নোটারি বা সত্যায়ন করার প্রয়োজন হয়। আর এ কাজ করা হয় নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে। সরকার কোনো আইনজীবী (কমপক্ষে পাঁচ বছরের কর্ম-অভিজ্ঞতা থাকতে হবে) কিংবা যেকোনো ব্যক্তিকে নোটারি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকে। জমিজমা-সংক্রান্ত দলিল-দস্তাবেজ, যেকোনো হলফনামা, অঙ্গীকারনামা, বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, গাড়ি বেচাকেনা, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, চারিত্রিক সনদ, জন্ম-মৃত্যুর সনদ, বিদেশে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন প্রভৃতি বিষয় নোটারি পাবলিক দিয়ে সত্যায়িত করা বাধ্যতামূলক। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই সত্যায়িত করা বাধ্যতামূলক। অনেক সময় বিদেশি ভাষা থেকে অনুবাদ কিংবা বাংলা থেকে বিদেশি ভাষায় অনুবাদ সত্যায়নের প্রয়োজন পড়ে। এ ছাড়া পেমেন্ট অথবা ডিমান্ডের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা জোরদার করতে, চার্টার পার্টি এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক দলিলপত্র তৈরিতে নোটারি করতে হয়।
নোটারি কীভাবে করতে হয়
কোনো দলিল-দস্তাবেজ নোটারি করতে গেলে নোটারি পাবলিক মূল কাগজপত্র যাচাই করে দেখবে। নোটারি পাবলিক সত্যতা যাচাই করে এবং দলিলের বিষয় দেখেশুনে সত্যায়ন করবে। মিথ্যা দলিল বা হলফনামা কোনোভাবেই নোটারি করতে তিনি বাধ্য নয় এবং নোটারি পাবলিক না করলে তাকে দিয়ে জোর করে বাধ্য করা যাবে না। নিয়মানুযায়ী কাগজপত্র নোটারি করার সময় নোটারি যিনি করবেন, তাঁর সামনে উপস্থিত থাকতে হবে। কোনো দলিলে যদি ব্যক্তিগত বিষয় উল্লেখ থাকে, তাহলে মূল কাগজপত্র যেমন শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্ম-মৃত্যুর সনদ, চারিত্রিক সনদ ইত্যাদির আসল কপি মিলিয়ে নেবেন। বিয়ে, তালাক—এসব বিষয়ে হলফনামা দলিল উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে নোটারি করতে হবে। অনেক হলফনামায় ছবির প্রয়োজন পড়ে। ছবি ছাড়া নোটারি করলে অপূর্ণ থেকে যাবে। আইন অনুযায়ী একজন নোটারিয়ান বা যিনি নোটারি করে দেন, তাঁর নির্দিষ্ট কার্যালয় থাকতে হবে। নোটারি সত্যায়নের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সিল ও কালি ব্যবহার করতে হবে। নোটারি করতে খুব যে বেশি খরচ হয়, তা নয়। সাধারণত দলিলের বিষয় অনুযায়ী খরচ নির্ধারিত হয়। তবে নোটারি করার আগে খরচের পরিমাণ নোটারি পাবলিকের কাছ থেকে জেনে নেওয়া উচিত।
নোটারি করতে সতর্কতা
কোনো দলিল-দস্তাবেজ নোটারি করার ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, ভুয়া নোটারিরা রাস্তার ফুটপাতে, দোকানে বোর্ড টাঙিয়ে বসে থাকে। এদের মাধ্যমে সত্যায়নের কাজ করা হলে পরবর্তী সময়ে এটি মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে এবং ভোগান্তির শিকার হতে হবে। সাধারণত কোনো আইনজীবী, যাঁদের নোটারি হিসেবে সনদ আছে, তাঁদের মাধ্যমে নোটারি করাই উচিত। অথবা কোনো নোটারির কাছে গিয়ে তাঁর সনদ যাচাই করেই নোটারি করা উচিত। কোনো দালাল বা প্রতারকের হাতে যেন না পড়তে হয়, এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভুয়া নোটারিরা অনেক ক্ষেত্রে সাদা কাগজে নোটারির কাজ সম্পন্ন করে দেয়। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নোটারি করার আগে নোটারি পাবলিক সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। অনেক অবৈধ নোটারি পাবলিক নিজেরাই সিলমোহর বানিয়ে প্রতারিত করে থাকে। এ ছাড়া মারা গেছেন এমন নোটারি পাবলিকের সিলমোহর ব্যবহার করেও অনেকে প্রতারিত করতে পারেন। যদি মনে হয় নোটারি ভুয়া হতে পারে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে হবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগ করতে হবে প্রথম শ্রেণির বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত দাবি করা হলো কি না।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট